আকলবালা নমঃশূদ্র অবশেষে ভারতীয় ‘নাগরিক’ হলেন
-
বিশ্বজিৎ দাস
- May 12, 2022 23:53 [IST]
- Last Update: May 13, 2022 03:00 [IST]
অবশেষে আকলবালা নমঃশূদ্রকে ভারতীয় ঘোষণা করল ট্রাইব্যুনাল। বুধবার কাছাড় জেলার ৪ নম্বর বিদেশি ট্রাইব্যুনাল আকলবালা দেবীকে ভারতীয় বলে রায় দিয়েছে। ফলে আরও একটি বাধা পেরলো সব হারানো পরিবারটি। বছর দুয়েক আগে আকলবালা দেবীকে সন্দেহভাজন বিদেশি তকমা সেঁটে ট্রাইব্যুনাল মামলা করে আসামের বিজেপি সরকারের পুলিশ। অবশ্য মামলাটি গোপন করে রাখা ছিল। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পঁচাশি বছরের বৃদ্ধা আকলবালা দেবীর হাতে সমন ধরিয়ে দেয় কাছাড় জেলার কাটিগড়া থানার পুলিশ।
এরপরই রাজ্যজুড়ে শোরগোল শুরু হয়। কারণ সন্দেহভাজন বিদেশি সাজিয়ে আকলবালা দেবীর একমাত্র পুত্র অর্জুনকে কেড়ে নিয়েছে রাজ্যের সীমান্ত পুলিশ। বিজেপি’র প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সর্বানন্দ সানোয়ালের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের ভাষিক সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা কবচ আইএমডিটি আইন ২০০৫ সালে সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করে দেয়। এরপর সংখ্যালঘু মূলত বাংলাভাষীদের নির্বিচারে বিদেশি সাজিয়ে দেদার মামলা করতে শুরু করে পুলিশ। এই সময় কাছাড় জেলার কাটিগড়া থানার অধীন হরিটিকর প্রথম খণ্ড গ্রামের প্রয়াত অনন্ত নমঃশূদ্রের ছেলেমেয়ে অর্জুন ও অঞ্জলির বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। এরপর ভারতীয় প্রমাণ করতে ভাইবোনের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়।
স্ত্রী-সন্তান ও বৃদ্ধা মাকে নিয়ে অর্জুনের সংসার। দিনমজুরি করে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। এরমধ্যে আদালতে হাজিরা দিতে হয়। আইনি লড়াই করতে গিয়ে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সমস্ত সম্পদ বিক্রি করে দিতে হয় তাঁকে। এদিকে সরকারি সুবিধা থেকে শুরু করে ভোটের অধিকার সব হারিয়ে হতাশ হয়ে পড়ে একদিন রাতে চরম সিদ্ধান্ত নেন অর্জুন। চাপ সহ্য করতে না পেরে ২০১২ সালের ৭ জুন তিনি আত্মহত্যা করেন। সেদিন রাজ্যে ও কেন্দ্রে ছিল কংগ্রেস সরকার। অর্জুনের আত্মহত্যাকে হাতিয়ার করে মাঠে নামে বিজেপি। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে আসামে অর্জুন নমঃশূদ্রের মৃত্যুকে ইস্যু করেন বিজেপি’র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী। সেসময় মোদী প্রতিশ্রুতি দেন বিজেপি ক্ষমতায় এলে আসামের ডিটেনশন ক্যাম্প গুঁড়িয়ে দেবেন, ডি ভোটার ব্যবস্থা তুলে দেবেন। অর্জুনের মতো আর কাউকে মরতে হবে না। দুই দুইবার ক্ষমতায় এসে মোদী তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি বরং এশিয়ার বৃহত্তম ডিটেনশন ক্যাম্প আসামে নির্মাণ করেছেন। অর্জুনের বৃদ্ধা মাকে বিদেশি সাজিয়ে মামলা দায়ের করে আসাম সরকারের পুলিশ। ছেলের মৃত্যুর নয় বছর পর মাকে ভারতীয় প্রমাণে অগ্নিপরীক্ষায় বসায় বিজেপি সরকার। বিজেপি’র এই ঘৃণ্য রাজনীতির বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে বিরোধীরা। আকলবালা দেবীর আইনি লড়াই অনেকে এগিয়ে আসেন। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত আইনি লড়াইয়ে জয়ী হলেন বৃদ্ধা। আকলবালা দেবী ১৯৬৫ সালের ভোটার তালিকা, জমির নথি ইত্যাদি তুলে ধরেছেন আদালতে। উল্লেখ্য, অর্জুন নমঃশূদ্র আত্মহত্যা করার দুই বছর পর তাঁকে ভারতীয় ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে তাঁর বোন অঞ্জলিকে ভারতীয় ঘোষণা করে। নিজের দুই সন্তানকে ভারতীয় ঘোষণার রায়ের কপিও আকলবালা দেবী ট্রাইব্যুনালে পেশ করেন। সব যাচাই করে ট্রাইব্যুনালের বিচারক ধর্মানন্দ দেব বুধবার রায় দান করেন।