৩০ জনকে উদ্ধার করে গ্রামের হিরো সুলতান, দীনেশ, লিটন, তহিদুলরা
-
সঞ্জিত দে
- Jan 15, 2022 22:30 [IST]
- Last Update: Jan 15, 2022 22:30 [IST]
ময়নাগুড়ি থানার দোমোহনির দক্ষিণ মৌয়ামারির বাঘের ডাঙা গ্রামের বাসিন্দা সুলতান আহমেদ, দীনেশ বর্মণ, মকসেদুল ইসলাম ওরফে লিটন, জবেদুল ইসলাম, তহিদুল ইসলাম, সহিদুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নামার আগে কেউ ছিলেন মাঠের কাজে। কেউ গোরু নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। কেউ গ্রামের বাড়ির অন্য কাজে ছিলেন। বয়সে সকলেই তরতাজা যুবক। আচমকা বিকট শব্দ শুনে ভয়ে চমকে ওঠেন। তাকিয়ে দেখেন দূরে রেল লাইন এলাকা ধুলোর ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে। বুঝতে পারেন ভয়ানক বিপদ ঘটে গেছে। আর সময় নষ্ট না করে সকলেই পড়ি করে ছুটে আসেন। ট্রেন দুর্ঘটনায় আহতদের উদ্ধার করে এখন প্রশংসার শীর্ষে গ্রামের বাসিন্দারা। আর ট্রেনে আটকে থাকা আহত যাত্রীদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পৌঁছানোয় এখন সকলের চোখে হিরো এই যুবকেরা। যখন বিকট শব্দে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে তখনই দৌড়ে ছুটে আসেন এই যুবকরা এরপর তাদের অনান্য বন্ধু এবং প্রতিবেশীদের চিৎকার করে ডেকে আনেন এবং আহতদের উদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পরেন। খবর দেন প্রশাসনের আধিকারিকদের। শহিদুল ইসলাম ও তৌহিদুল ইসলামের বাড়ি দুর্ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ৩০ মিটার দূরে।
বৃহস্পতিবার বিকেলের মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে গৌহাটি-বিকানির এক্সপ্রেসে। এখনও পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। হাসপাতালে চিকিৎসারত রয়েছেন ৪৩ জন। আহতদের চিকিৎসা চলছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতাল এবং ময়নাগুড়ি হাসপাতালে। ৮জন গুরুতর আহত অবস্থায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রয়েছেন। তবে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারত। এমনকি দুর্ঘটনায় যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের অনেকেই সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেলে তাঁদেরও মৃত্যু হতে পারত। বহু প্রাণ বেঁচে গেছে দক্ষিণ মৌয়ামারি গ্রামের এই বাসিন্দাদের জন্যে।
দুর্ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঢেকে যায় গোটা এলাকা। কুয়াশায় উদ্ধার কাজে চরম সমস্যা তৈরি হয়। গ্রামেরই দুই যুবক সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে আলো জ্বালিয়ে উদ্ধার কাজ চালিয়ে যান। তখনো আসেনি কোনও আধিকারিক।
গ্রামের ডিওয়াইএফআই কর্মী ফারুক বলেন, আমি ময়নাগুড়ি বাজারে ছিলাম। বন্ধুদের ফোন পেয়ে ১৫ মিনিটের মধ্যে চলে আসি। গ্রামের এই যুবকেরা সকলেই খেতমজুর ক্ষুদ্র কৃষক পরিবারের। কেউ মাঠে, কেউ ডেকরেটারের কাজ করে। কেউ ফুটপাতে সবজি নিয়ে বসে। মানবিকতার টানে আমরা ছুটে গেছি। প্রায় জনা তিরিশেক যাত্রীকে আমরা উদ্ধার করেছিলাম। রেলের কামরার ভেতর থেকে চিৎকার ও মানুষের আর্তনাদ শুনে আহতদের বার করতে গিয়ে নিজেও আহত হন তহিদুল ইসলাম। তার হাত কেটে যায়।
প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছায় প্রশাসনের আধিকারিক, অ্যাম্বুল্যান্স ও দমকলের গাড়ি। গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় উদ্ধার কাজে হাত লাগান তাঁরা। প্রায় ৩০০ জন যাত্রীকে উদ্ধার করে সুরক্ষিত নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। ইতিমধ্যেই গ্রামবাসীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন রেলকর্তারাও।
এদিকে দুর্ঘটনায় আহতদের উদ্ধার করতে গিয়ে আহত তহিদুল ইসলাম জানান, তাঁর হাতের অনেকটা অংশ কেটে গেলেও বিন্দুমাত্র দুঃখ নেই তাঁর। বহু মানুষকে সময় মতো বের করতে পারায় তাঁরা বেঁচে গিয়েছে। না হলে আরও অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তো। বিপদের সময় তাদের পাশে দাঁড়াতে পেরেই আনন্দিত।