কয়লা সম্পদ রক্ষায় শ্রমিকরা
-
-
- Jul 05, 2020 12:59 [IST]
- Last Update: Jul 05, 2020 12:59 [IST]
দেশের অমূল্য খনিজ সম্পদ কয়লাকে
কর্পোরেট লুটেরাদের ভোগে উৎসর্গ করতে মরিয়া মোদী সরকারকে যোগ্য জবাব দিতে
প্রত্যক্ষ সংগ্রামে নেমেছেন দেশের কয়লা শ্রমিকরা। ২ জুলাই থেকে ৪ জুলাই টানা ৭২
ঘণ্টা ধর্মঘট করে দেশি-বিদেশি বৃহৎ পুঁজির মালিকদের ঘনিষ্ট বন্ধু মোদী সরকারকে
শ্রমিকরা বুঝিয়ে দিতে চান দেশের কয়লা সম্পদ কর্পোরেট মুনফার জন্য নয়, দেশের জনগণের রুটি রুজি তথা দেশের উন্নয়নের জন্য। জাতীয়
সম্পদ তথা দেশের মানুষের সম্পদ মোদীরা ভেট হিসাবে তুলে দিচ্ছেন আদানি, বিড়লা, জিন্দালদের হাতে।
শ্রমিকরা মনে করেন কয়লা সম্পদ জাতীয় সম্পদ, সরকারের সম্পদ, এই সম্পদ সরকারের
মালিকানায় ব্যবহৃত হবে দেশের অর্থনীতি বিকাশের স্বার্থে, জনগণের রুটি-রুজির স্বার্থে। কোনও ধনকুবের শিল্পপতির সম্পদ
বাড়ানোর জন্য নয়। তাই তারা কয়লা সম্পদ বেসরকারি হাতে তুলে দেবার সরকারি পদক্ষেপের
বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। তাদের সরাসরি দাবি দেশের সমস্ত কয়লা সম্পদ থাকবে
সরকারের অধীনে। কোনও শিল্পপতি সেগুলির মালিকানা হাতিয়ে মুনাফা লোটার কোনও সুযোগ
দেওয়া যাবে না। লক্ষণীয়, নিজেদের আর্থিক
দাবি দাওয়া নয় কয়লা শ্রমিকদের পাঁচটি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন এক জোট হয়েছেন
লুটেরাদের হাত থেকে দেশের সম্পদ রক্ষার জন্য। তারজন্য তারা ৭২ ঘণ্টা ধর্মঘট
করছেন,
সমগ্র কয়লা শিল্পকে স্তব্ধ করে দিচ্ছেন। ৫.৩ লক্ষ শ্রমিক
ধর্মঘট করে স্তব্ধ করে দিয়েছেন কয়লা শিল্পকে। দিনে গড়ে ১৫ লক্ষ টন কয়লা উত্তোলন
হয়। ধর্মঘটের জেরে উত্তোলন হচ্ছে না এক টনও। শ্রমিকরা জানেন এর পালটা আঘাত আসতে
পারে মোদী সরকারের তরফ থেকে। তাদের বেতন কাটা যেতে পারে, শোকজ হতে পারে, হতে পারে অন্যান্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। কিন্তু তথাপি তারা দেশের সম্পদ রক্ষার
স্বার্থে,
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের রুটি রুজির স্বার্থে এই বৃহত্তর আন্দোলনে
শামিল হয়েছেন। দেশের প্রতি ভালোবাসা, আগামী প্রজন্মের জন্য ভালো কিছু করার দায়বদ্ধতা শ্রমিকরাই দেখাতে পারে, হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক ও বৃহৎ পুঁজির দালাল শাসকরা নয়।
দেশজুড়ে করোনা বিপর্যয়ের এই
দুঃসময়কে মোদীরা বেছে নিয়েছেন বৃহৎ শিল্পপতিদের সেবা করার উৎকৃষ্ট সময় হিসাবে।
কারণ মানুষ এখন করোনা সঙ্কটের আবর্তে অনেক কিছু নিয়েই ভাববার সময় পাচ্ছেন না। এই
সুযোগে জাতীয় সম্পদ বেসরকারি মালিকদের হাতে তুলে দিলে তেমন কোনও বাধা আসবে না। তাই
মোদী সময় নষ্ট করেননি গত ১৮ জুনই আনুষ্ঠানিকভাবে ৪১টি কয়লা খনির নিলাম পর্ব শুরু
করে দিয়েছেন। যে ৪১টি খনি তিনি তার বন্ধু শিল্পপতিদের হাতে তুলে দিতে চাইছেন তাতে
মজুত আছে ২২৭৩ কোটি টন কয়লা। অবশ্য চেষ্টা চলছে অনেকদিন ধরেই, কিন্তু আইনি বাধায় করা যাচ্ছিল না। ক্ষমতায় এসেই ২০১৫ সালে
কয়লা বেসরকারিকরণ আইন বদলালেন। কিছু শর্তে দেশীয় কর্পোরেটকে খনি দেবার ব্যবস্থা
হয়। কিন্তু মোট কয়লার মূল্যের চার শতাংশ আগাম দেবার ও কয়লা শিল্পে পূর্ব অভিজ্ঞতার
শর্তে কেউ এগিয়ে আসেনি। শিল্পপতিরা মোদীর কাছে দরবার করে এবং চাপ দিয়ে নতুন আইন
প্রণয়নের ব্যবস্থা করে। তাতে পূর্ব অভিজ্ঞতার আগাম টাকা দেবার এবং দেশীয় হবার শর্ত
তুলে দেওয়া হয়। এই বছর জানুয়ারিতে পাশ হয় নতুন আইন। আনন্দে আত্মহারা শিল্পমহল।
খুশি তাদের বন্ধু সরকারও। তাই কাল বিলম্ব না করে করোনা মহামারীর মধ্যেই পুঁজিপতিদের জন্য নৈবেদ্য
সাজিয়ে দিলেন মোদী।
শুধু শ্রমিকরা নন, এর বিরোধিতা করেছে ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড় ও মহারাষ্ট্র সরকার। ঝাড়খণ্ড এর বিরুদ্ধে
সুপ্রিম কোর্টে মামলাও করছে। এরাজ্যে তৃণমূল সরকার মৌখিক বিরোধিতা করলেও এর বিরুদ্ধে
শ্রমিকদের আন্দোলনের বিরোধিতা করছে। তণমূলের বিরোধিতা আসলে লোক দেখানো।