আজ দেশে শুরু গণটিকাকরণ আশঙ্কা সত্ত্বেও রইল কোভ্যাক্সিন
-
-
- Jan 16, 2021 10:43 [IST]
- Last Update: Jan 16, 2021 10:43 [IST]
টিকাকরণেও গোঁয়ার্তুমি ছাড়তে নারাজ কেন্দ্র। একগুচ্ছ প্রশ্ন সত্ত্বেও বিভিন্ন টিকাকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে কোভ্যাক্সিন। স্বাস্থ্যকর্মীদের যথেষ্ট সতর্ক না করে পরীক্ষার জন্য ব্যবহারের আশঙ্কাও যথেষ্ট। দেশে সর্বসাধারণকে টিকা দেওয়ার কর্মসূচি শুরু শনিবার। তার ঠিক আগে জনবিজ্ঞান আন্দোলন দাবি জানিয়েছে, আপাতত স্থগিত রাখা হোক কোভ্যাক্সিন। শনিবার টিকাকরণের প্রথম দিন স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা দেওয়ার সূচি ঠিক হয়েছে আগেই।
কেন্দ্র যে অনড় শুক্রবারও ফের বুঝিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী হর্ষ বর্ধন। দিল্লিতে নির্মাণ ভবনে স্বাস্থ্য মন্ত্রক টিকাকরণের আলাদা কন্ট্রোল রুম খুলেছে। বর্ধন বলেছেন, ‘‘কোভিশিল্ড এবং কোভ্যাক্সিন দুই-ই তৈরি হয়েছে ভারতে। প্রমাণিত যে দু’টিই সুরক্ষিত এবং প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তুলতে সক্ষম।
ভারতে টিকাকরণ বাধ্যতামূলক নয়। প্রথম গণটিকাকরণ চালু হয়েছে ব্রিটেনে। সেদেশেও বাধ্যতামূলক নয় টিকা নেওয়া। কিন্তু সরকারি টিকা দেওয়ার ব্যবস্থাপনায় সম্ভবত কোনও টিকাগ্রহীতাকে বাছাইয়ের সুযোগ দেওয়া হবে না ভারতে। কেন্দ্রের তথ্যই জানাচ্ছে যে কর্ণাটকে ২৪৩টি কেন্দ্রে হবে টিকাকরণ। তার মধ্যে ২৩৭টি টিকা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে কোভিশিল্ড। আশঙ্কা সত্ত্বেও ৬টি কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে কোভ্যাক্সিন।
সারা ভারত জনবিজ্ঞান নেটওয়ার্ক শুক্রবার ফের কোভ্যাক্সিনের প্রয়োগ আপাতত স্থগিত রাখার দাবি তুলেছে। বিজ্ঞান আন্দোলনে অগ্রণী এই সংগঠনের দাবি, যতক্ষণ পর্যন্ত এই টিকা পরীক্ষার তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে, তা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে তা প্রয়োগ করা উচিত নয়। এই সংগঠন মনে করিয়ে দিয়েছে যে ভারত বায়োটেকও কিছুদিনের মধ্যে পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সেই তথ্য প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত জনসাধারণের ওপর প্রয়োগ করা যায় না, বলেছে নেটওয়ার্ক। সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির বক্তব্য, বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা বিবেচনায় না রাখার অবস্থান বিপজ্জনক। কোভ্যাক্সিনের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করে প্রয়োগ করা উচিত।
দুই টিকার ছাড়পত্রেই ওষুধ নিয়ামক প্রতিষ্ঠান ডিসিজিআই মহামারীর কারণে জরুরি প্রয়োগের উল্লেখ করেছ। তবে কোভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে ‘মানবদেহে পরীক্ষামূলক হিসাবে’ অনুমতি দেওয়ার বিশেষ অংশটি যুক্ত করেছে। কেন্দ্রীয় দুই প্রতিষ্ঠান আইসিএমআর এবং এনআইভি’র সহায়তায় করোনার টিকা কোভ্যাক্সিন তৈরি করেছে বেসরকারি সংস্থা ভারত বায়োটেক। মানবদেহে তিনটি স্তরে টিকার পরীক্ষা হয়। জানা গিয়েছে, এই টিকার দ্বিতীয় স্তরের পরীক্ষা সম্পূর্ণ হয়েছে মাত্র ৮০০ স্বেচ্ছাসেবকের ওপর।। তৃতীয় স্তরের পরীক্ষা চলছে। এই স্তরেই কার্যকারিতা এবং সুরক্ষার বিশদ পরীক্ষা হয় তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে।
সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, এই দ্বিতীয় স্তরে পরীক্ষার বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ এবং ফলাফল প্রকাশ হয়নি। টিকা সুস্থ মানুষকে দেওয়া হয়। ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা খতিয়ে না দেখে প্রয়োগ করা যায় না। অনুমোদনের পিছনে সরকারের শীর্ষস্তর থেকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা দেখছেন গবেষক-চিকিৎসকদের বড় অংশ। দেশের বিজ্ঞানীদের ওপর পূর্ণ আস্থা রেখেই তথ্যের অস্বচ্ছতা দূর করার দাবি উঠেছে।
অপর টিকা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড ঘিরেও প্রশ্ন রয়েছে। ভারতে এই টিকার পরীক্ষা করেছে সিরাম ইনস্টিটিউট। এ দেশে তৃতীয় স্তরে পরীক্ষা শেষ হলেও ফলাফল প্রকাশিত নয়। ব্রিটেনে যদিও সেই কাজ হয়েছে এবং সেদেশের নিয়ামক প্রতিষ্ঠান এই টিকার ৭০ শতাংশের কিছু বেশি কার্যকারিতা পেয়েছে।
চিকিৎসক, গবেষক এবং বিজ্ঞান আন্দোলনের বড় অংশই চাইছেন টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রেও সেই বোঝাপড়া পালিত হোক। যেমন কেউ টিকা কেন্দ্রে গিয়ে কোভ্যাক্সিন নিতে না চাইলে সেই সুযোগ যেন থাকে। কাউকে যেন কোভ্যাক্সিন নিতে বাধ্য না করা হয়।
বর্ধন শুক্রবার জানিয়েছেন প্রাথমিক পর্বে ১ কোটি ৬৫ লক্ষ ডোজ কেন্দ্র পাঠিয়েছে রাজ্যগুলিকে। ৩০০৬টি টিকাকরণ কেন্দ্র নির্দিষ্ট রয়েছে। কেন্দ্রীয় স্তর থেকে টিকা কেন্দ্রে কর্মরত চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী পর্যন্ত সংযোগ রাখা হবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘কোউইন’র মাধ্যমে। প্রতি কেন্দ্রে দিনে সর্বোচ্চ একশোজনকে দেওয়া হবে টিকা। নথিভুক্ত টিকাগ্রহীতার যা সংখ্যা তার ১০ শতাংশ অতিরিক্ত ডোজও মজুত রাখতে বলেছে। দু’টি টিকার ক্ষেত্রেই প্রত্যেককে দু’টি করে ডোজ দিতে হবে আঠাশ দিন অন্তর।
গণটিকাকরণ পরিকল্পনা অনুযায়ী, সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবেন চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা। এই পর্বেই রাখা হয়েছে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদেরও। প্রথম পর্বে ১ কোটি টিকার পর দ্বিতীয় পর্বে ২ কোটি ‘ফ্রন্টলাইন’ কর্মীকে দেওয়া হবে টিকা। এই স্তরে পুলিশকর্মী থেকে সাফাই কর্মচারীর মতো অংশকে রাখা হয়েছে। পরের স্তরে পঞ্চাশোর্ধ্ব এবং তার কমবয়সি কোমর্বিডিটি সম্পন্নদের দেওয়া হবে টিকা। কেন্দ্র প্রথম দু’টি পর্বে ৩ কোটি টিকার আর্থিক দায়ভার নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।

টিকা দেওয়া হবে না যে অংশগুলিকে
-----------------------
১। ১৮ বছরের কমবয়সিরা
২। গর্ভবতী এবং স্তন্যদায়ী মায়েরা
৩। টিকা এবং ওষুধজাত দ্রব্যে অ্যালার্জি আছে যাদের, বা বিভিন্ন খাবারে অ্যালার্জি রয়েছে।
৪। অতীতে কোভিড-১৯ টিকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া থাকলে
আপাতত যে অংশকে টিকা নয়
-------------------------------
১। কোভিড-১৯ সংক্রমণের উপসর্গ থাকলে।
২। কোভিড-১৯ রোগী যাদের ওপর মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি প্রয়োগ হয়েছে বা প্লাজমা দেওয়া হয়েছে।
৩। কোনও রোগে গুরুতর অসুস্থ বা হাসপাতালে ভর্তি।
৪। রক্তপাত বন্ধ না হওয়ার মতো সমস্যা থাকলে সতর্কতা রেখে প্রয়োগ।