মুখ্যমন্ত্রীর ধর্ষণবোধ
-
-
- Apr 13, 2022 00:25 [IST]
- Last Update: Apr 13, 2022 00:25 [IST]
ধর্ষণ তাঁর কাছে বরাবরই ছোটখাট ঘটনা, দুষ্টু ছেলেদের দুষ্টুমি। ধর্ষণ নিয়ে হইচই, প্রতিবাদ বিক্ষোভ ইত্যাদিরও তিনি বিরোধী। তিনি চান না সংবাদ মাধ্যমে ধর্ষণের ঘটনার সংবাদ গুরুত্ব সহকারে প্রচার হোক। একাধিকবার বলেছেন, রাজ্যে বারো কোটি মানুষ। তারমধ্যে কত ঘটনা ঘটে। তার মধ্যে ধর্ষণের ঘটনাও ঘটে। তাই বলে দু’-চারটে এমন ঘটনা নিয়ে মাতামাতি করতে হবে। তিনি চান না আর পাঁচটা ঘটনার মতো ধর্ষণ নিয়ে মানুষ মাথা না ঘামাক। তিনি একসময় ধর্ষণের রেট বেঁধে দিয়েছিলেন। বয়স অনুযায়ী ধর্ষিতা মহিলারা সরকারি ক্ষতিপূরণ পাবেন। অর্থাৎ ধর্ষণের বিরুদ্ধে জেহাদ নয়, ধর্ষকদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নয়। তার বদলে ধর্ষণকে ছোটখাট মামুলি ঘটনা বলে এই জঘন্যতম অপরাধকে লঘু করে দিয়েছেন। ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণ করে খুন ইত্যাদি ঘটনা ঘটলেই তদন্ত শুরুর আগেই তিনি আসরে নেমে যান। আগ বাড়িয়ে তদন্তের গতিমুখ ঠিক করে দেন। তিনি এরাজ্যের শুধু মুখ্যমন্ত্রীই নন, একজন মহিলাও। সেই শুরু হয়েছিল পার্ক স্ট্রিটের ঘটনা নিয়ে, তারপর প্রায় এক দশকে কয়েক সহস্র ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। নানা কারণে সব ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ্যে আসে না। ধর্ষকের দাপট, লোক জানাজানির ভয়, সম্মানহানির লজ্জা, দারিদ্র ইত্যাদি কারণে ধর্ষণের পরও নির্যাতিতার পরিবার নীরব থাকে। কোথাও সালিশি সভা করে জোর করে মিটমাট করানো হয়। কোথাও জোর করে ধর্ষক-ধর্ষিতার বিয়ে দেওয়া হয়। এতকিছুর পর অল্প কিছু ধর্ষণের ঘটনাই থানা পর্যন্ত গড়ায় এবং সংবাদ মাধ্যমে জায়গা পায়। নারীর বিরুদ্ধে যত অপরাধ ঘটে তারমধ্যে সবচেয়ে কুৎসিত, বর্বর, নির্মম, অমানবিক অপরাধ ধর্ষণ। একটা অশিক্ষিত, মূলবোধহীন, বর্বর, অসভ্য সমাজেই ধর্ষণ মানসিকতা প্রসারিত হয় এবং তাকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে কোনও নারীর সমগ্র জীবনকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়। নষ্ট করে দেয় বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাকেই।
যে মানুষ এই অপরাধকে লঘু করার চেষ্টা করে বা ধর্ষকদের হয়ে পরোক্ষে ওকালতি করে সমাজের কাছ থেকে ঘৃণা ছাড়া তাদের আর কিছুই পাওয়ার নেই।
ধর্ষণকে যিনি ছোট ঘটনা বা দুষ্টুমি বলে বিবেচনা করেন সেই ভদ্রমহিলার রাজত্বে গত পাঁচ সপ্তাহে পনেরোটি ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। ধর্ষণ নিয়ে তাঁর যতটা মাথাব্যথা তার চেয়ে বেশি উদ্বেগ ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে খবর ও বিরোধীদের প্রতিবাদ নিয়ে। নারীর সম্মান ও ইজ্জতহানিতে তাঁর সমস্যা নেই। সমস্যা এই সব ঘটনা নিয়ে নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক সমাজে প্রতিবাদে। কারণ তাতে তাঁর আসন টলে যেতে পারে। এরাজ্যে এখন যত ধর্ষণের ঘটনা ঘটে তার ৯০ শতাংশই অভিযুক্ত শাসকদলের নেতা-কর্মী। কখনও তারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। এলাকায় তাদের দাপটে বাঘে গোরুতে এক ঘাটে জল খায়। কখনও কখনও শাসকদলের সঙ্গে পুলিশও শরিক হয়ে পড়ে। তাদের দল যখন শাসন ক্ষমতায় তখন তারা মনে করে ধর্ষণ করার অধিকার তাদের আছে। এদের নিয়েই মুখ্যমন্ত্রীর দল। এরা না থাকলে দলটাই ফাঁকা হয়ে যাবে। অতএব গদি রক্ষার তাগিদে এইসব নরকের কীট ধর্ষকদের রক্ষা করাও মুখ্যমন্ত্রীর দায়। তাই তিনি সর্বদাই ধর্ষণকে লঘু করে দেখেন। ধর্ষক যাতে ছাড় পায় বা কম সাজা পায় সেই মতো পুলিশ কেস সাজায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তিনি নিজেই তদন্তের গতিমুখ ঠিক করে দেন। যেমন হাঁসখালির ধর্ষণ নিয়ে তদন্তের আগেই সন্দেহ প্রকাশ করে নানা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন। বলেছেন ধর্ষিতা নাকি অন্তঃসত্ত্বা, প্রেমঘটিত ব্যাপার? সচেতনভাবে ধর্ষণকে লঘু করে দিচ্ছেন। যে প্রেম থাকলে ধর্ষণে অপরাধ নেই। তাঁর আবার গোঁসা কেন তৃণমূলের নাম উঠেছে। তৃণমূলের নেতা, কর্মী, জনপ্রতিনিধি ধর্ষণ করলেও তাদের তৃণমূল বলা যাবে না। তেমনি ধর্ষক-ধর্ষিতা উভয়েই যেহেতু তৃণমূল তখন অন্যরা কেন কথা বলবে। যেন তৃণমূলের অভ্যন্তরে ধর্ষণে আপত্তি নেই। আসলে অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য যেহেতু তৃণমূল তাই কোনও অপরাধকেই অপরাধ বলে দেখতে চাইছেন না মুখ্যমন্ত্রী। জঘন্যতম অপরাধকেও লঘু করে দেখে, তাকে প্রশ্রয় দিয়ে গোটা সমাজটাকেই অধঃপতনের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।