মমতার ধর্মসেবা
-
-
- Sep 27, 2020 12:20 [IST]
- Last Update: Sep 27, 2020 03:00 [IST]
সামনে ভোট, তাই ধর্মেকর্মে নেমে পড়েছে তৃণমূল সরকার। সরকারের কাজের সাফল্য ভিত্তি করে মানুষের মন জয় করে সমর্থন পাওয়ার সম্ভাবনা যেহেতু নেই, তাই ধর্মকে আশ্রয় করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হবার চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী। যে সংবিধানকে মান্যতা দিয়ে সরকার চালানোর শপথ নিয়েছিলেন সেই সংবিধানের নির্দেশিকাকেই ছুঁড়ে ফেলেছেন ডাস্টবিনে। ধর্মের সঙ্গে রাষ্ট্র বা সরকারকে যুক্ত করার কোনও সুযোগ সংবিধান দেয়নি। ধর্ম একান্তভাবেই মানুষের ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও আচরণের বিষয়। রাষ্ট্রের বা সরকারের কোনও ধর্মীয় পরিচিতি, সম্পর্ক, বিশ্বাস, আচরণ থাকতে পারে না। অথচ মমতা ব্যানার্জির সরকার ক্রমাগত বেশি বেশি করে আঁকড়ে ধরছে ধর্মকে। মুসলিম সম্প্রদায়ের ভোট পেতে একরকম সরকারি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। হিন্দুদের ভোট পেতে নেওয়া হচ্ছে অন্যরকম পদক্ষেপ। আগে মুসলিম ইমাম-মোয়াজ্জিনদের জন্য মাসিক ভাতার ব্যবস্থা হয়েছিল। এবার হিন্দু পুরোহিতদের জন্য। সাধারণ মানুষের করের টাকা খরচ করে এইভাবে সরাসরি সরকারকে ধর্মের সাথে যুক্ত করা হচ্ছে সংবিধানের ধর্মরিপেক্ষতার ভাবনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে। তারপর এই সরকারই দুর্গাপূজা আয়োজনের জন্য দু’হাতে টাকা বিলানোর ব্যবস্থা করেছে। গত বছর যেখানে প্রতিটি পূজা কমিটিকে ২৫ হাজার টাকা সরকারি অনুদান দেওয়া হয় এবার তা দ্বিগুণ বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। এরজন্য খরচ হবে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। এছাড়া পঞ্চায়েত-পৌরসভার কর, ফায়ার লাইসেন্স ফি, বিদ্যুৎ ইত্যাদি ছাড় দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ সেটা সরকার পুষিয়ে দেবে। করোনা মহামারীর সময় অর্থনীতি ধরাশায়ী, সরকারের আয় তলানিতে, অনেক জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় ক্ষেত্রে ব্যয় করার জন্য যখন অর্থ নেই তখন সরকার নিজেই সরকারি তহবিল থেকে টাকা ঢেলে পূজায় মেতে উঠেছে। এই দুঃসময়ে যখন মানুষের রোজগার নেই, অসংখ্য মানুষ কাজ হারিয়েছেন, দু’বেলা খাবার বন্দোবস্ত করতে পারছেন না বেশির ভাগ মানুষ তখন সরকারের অগ্রাধিকার পূজার জন্য খরচ দ্বিগুণ করা।
বাংলায় শারদোৎসব যুগ যুগ ধরে চলছে। কোনোদিন কোনোভাবে সরকার সেখানে টাকা ঢালেনি। এটা সরকারের কাজের মধ্যে পড়ে না। মানুষ নিজেরা নিজের এলাকায় নিজেদের মতো করে পূজার আয়োজন করেন। সরকারের কাজ শান্তি-শৃঙ্খলা ও সম্প্রীতি রক্ষার ব্যবস্থা করা। কিন্তু তৃণমূল সরকারকে ধর্মনিরপেক্ষতার মহান সাংবিধানিক আসন থেকে নামিয়ে ধর্মের গন্ডিতে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। সরকারে কাজ কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যের বিকাশ ঘটানো। মানুষের রুজি রোজগার ও জীবনমানের উন্নতি ঘটানো, সকলের জন্য কাজ, শিক্ষা ও চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা, সমস্ত রকমের আর্থিক ও সামাজিক বৈষম্য কমিয়ে আনা এবং ধর্ম-সম্প্রদায়-জাতপাতের ভিত্তিতে মানুষের বিভাজনকে প্রতিরোধ করে ঐক্য ও সংহতি বৃদ্ধি করা। এর প্রতিটিতেই সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ। অর্থাৎ সরকারের মূল যে কাজ তার কোনোটাই করতে পারেনি। তাই অকাজকেই বেছে নিয়েছে ভোটে জেতার কৌশল হিসাবে। ধর্ম একটি স্পর্শকাতর বিষয়। ওখানে শুড়শুড়ি দেওয়া যায় সহজে। বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ধর্মকে আশ্রয় করে রাজনীতি করে। মমতা তাদের সাথে পাল্লা দিতে সব ধর্মকে আশ্রয় করতে চাইছে। সব ধর্মের কর্তাদের কাছে সরকারি সাহায্য পাবার আবেদন করছেন। সরকারি টাকা বিলিয়ে তিনি ধর্মনির্ভর ভোট কিনতে চাইছেন। কিন্তু বেকারদের চাকরির কথা, কৃষকের ঋণমুক্তির কথা, যাদের ঘরে দু’বেলা খাবার জোটে না তাদের খাবার বন্দোবস্ত করার কথা তার ভাবনায় নেই। তিনিও মানুষকে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করে দিয়ে আরএসএস-বিজেপি’র রাজনীতিতে পুষ্টি জোগাচ্ছেন।