বিশ্বভারতীতে কোন খেলা চলছে?
-
-
- Jan 03, 2021 13:23 [IST]
- Last Update: Jan 03, 2021 03:00 [IST]
বিশ্বভারতী শুধু বাংলার নয়, দেশের গর্বের প্রতিষ্ঠান। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ও শান্তিনিকেতন কেবল শিক্ষাঙ্গনই নয়, এক সংস্কৃতির প্রবাহ। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছাত্র-ছাত্রীরা বিশিষ্ট হয়ে উঠেছেন এখানের পরিবেশে। রবীন্দ্রনাথের দর্শন থেকে বিকাশমান সমাজের শ্রেষ্ঠ চিন্তাগুলি আয়ত্ত করেছেন। এই প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার জন্য পরিকল্পিত উদ্যোগ শুরু হয়েছে।
বিজেপি সরকারের আমলে একের পর এক উৎকর্ষের কেন্দ্রগুলি আক্রান্ত। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অযাচিত, অবাঞ্ছিত এবং কদাকার হস্তক্ষেপ ঘটছে। মুক্ত চিন্তা, যুক্তিবোধ আক্রান্ত হচ্ছে। স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অধিকার আক্রান্ত হচ্ছে। জেএনইউ, জামিয়া মিলিয়া, হায়দরাবাদ, আলিগড়, আইআইটি-সর্বত্রই তা ঘটছে। নৈরাজ্য তৈরি করে পরিবেশ বিষাক্ত করা এবং সেই পরিবেশে সাম্প্রদায়িক পশ্চাদমুখী চিন্তার আধিপত্য তৈরি করার চেষ্টা— এই হচ্ছে কৌশল।
আশঙ্কা করার কারণ রয়েছে বিশ্বভারতীকে কেন্দ্র করেও এমনই পরিকল্পনা চলছে। বিশ্বভারতীর উপাচার্যের কার্যকলাপ প্রশ্ন তুলছে। কখনো তিনি সংবিধান নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন, কখনো রবীন্দ্র-ভাবাদর্শের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন, কখনো আশ্রমিকদের সম্পর্কে কটাক্ষ করছেন, কখনো পাঁচিল তুলছেন, কখনো বহুকালের ঐতিহ্যে ভুলে ‘আলাপিনীর’-র মতো সংস্থার ঘর বন্ধ করে দিচ্ছেন। উপাচার্য বিশ্ববন্দিত অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের সঙ্গে ‘কথা হয়েছে’ বলে সম্পূর্ণ অসত্য ভাষণ করেছিলেন। তা ধরা পড়ায় তিনি আচার্য ক্ষিতিমোহনের বাসভবন ‘প্রতীচী’-র জমি নিয়ে ধন্দ তৈরি করেছেন। যদি অভ্যন্তরীণ আলোচনার কোনও পরিসরও থাকে উপাচার্য তাকে এমনভাবে মিডিয়ার সামনে হাজির করছেন যেন আশ্রমিকরা সব জমি দখল করে বসে আছেন। হই চই চাইছেন। গন্ডগোল বাধাতে চাইছেন।
বিশ্বভারতীর অধ্যাপকদের কথা বলার অধিকার কেড়ে নিতে উদ্যত উপাচার্য। তাঁদের সংগঠনের অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেবার ঘটনাও ঘটেছে। সব সময়ে যেন অশান্তি লেগে থাকে, এই হলো উদ্দেশ্য।
অন্যদিকে, ঘোলা জল দেখে নেমে পড়েছে রাজ্যের শাসক দল। সাঙ্গোপাঙ্গ-সহ অমিত শাহ শান্তিনিকেতনে ঘুরে যাবার পরপরই বিশ্বভারতীর মধ্যে তৃণমূলের পতাকা ছেয়ে গেছে। স্থানীয় বাহুবলী নেতা হুমকি ছুঁড়েছেন এতদিন তিনি শান্তিনিকেতনকে ‘ছেড়ে’ রেখেছিলেন, এবার ‘ধরবেন’। পাঁচিল উপলক্ষ মাত্র, বিশ্বভারতীর মধ্যে দখলদারির যুদ্ধ শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে কেন্দ্র-রাজ্যের দুই শাসক দল।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী শান্তিনিকেতনে এসে বলেছিলেন, তিনি ছুটি নিয়ে এক সপ্তাহ রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতে চান। শুনতে পারেন, বাধা দিচ্ছে কে? কিন্তু তাঁর কানে পৌঁছালেও প্রাণে পৌঁছাবে না রবিঠাকুরের গান। বিদ্বেষ-কলুষিত, সাম্প্রদায়িক চিন্তায় আচ্ছন্ন, অপরাধের রেকর্ড থাকা মনে ওই গান ঢুকবে কী করে? আরেক দল রাস্তার মোড়ে রবীন্দ্রনাথ বাজিয়েছে যখন রাজ্যজুড়ে গণতন্ত্রের বহ্নুৎসব চলছিল। ভোটের জন্য বিশ্বভারতীর প্রতি দরদ দেখালেও তা মেকি।
যাঁরা শান্তিনিকেতনে পড়েছেন তাঁরা বলেন ‘সব থেকে আপন’। এই আপনার নাড়ির টান এরাজ্যের বহুলাংশের মানুষই অনুভব করেন। তাই বিশ্বভারতীতে কী ঘটছে, কেন ঘটছে তা জানার এবং খারাপ কিছু দেখলে তার প্রতিবাদ করার ন্যায়সঙ্গত অধিকার আছে রাজ্যবাসীর। বিশ্বভারতী নিয়ে ছেলেখেলা বা কুৎসিত রাজনীতির কুনাট্য রাজ্যবাসী অনুমোদন করবেন না।