আজ রাজ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা, মাস শেষে আসছে ফুল বেঞ্চ
-
-
- Jan 15, 2021 10:57 [IST]
- Last Update: Jan 15, 2021 10:57 [IST]
এখন শুধু ঘোষণাটুকুই বাকি। এটুকু বাদ দিলে পশ্চিমবঙ্গে ভোটের চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল। শুক্রবার রাজ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন। তার আগে উপ নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন দ্বিতীয় দফায় রাজ্যে এসে বুধবার এবং বৃহস্পতিবার দু’দিন ধরে প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে বোঝাতে চেয়েছেন এবার কোনও প্রকার গাফিলতিই বরদাস্ত করবে না নির্বাচন কমিশন। কোনও প্রকার নোটিস ছাড়াই অপসারণ করবে কমিশন। আইএএস, আইপিএস অফিসারদের বিশেষভাবে সতর্ক করেছেন উপ নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন। সেই সঙ্গে এ মাসের শেষের দিকে রাজ্যে আসতে চলেছে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরার নেতৃত্বে কমিশনের ফুল বেঞ্চ, এমনটাই কমিশন সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে। দু’দিনের দফায় দফায় বৈঠকের পর জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গে এপ্রিলেই ভোট করতে চায় কমিশন। যদি সবকিছু ঠিকঠাক চলে তাহলে ফেব্রুয়ারিতেই ভোটের বিজ্ঞপ্তিও জারি করতে পারে নির্বাচন কমিশন।
করোনার আবহে এবার রাজ্যের ভোটে বিহারের ছায়া দেখা যাবে। ৮০ বছর বা তার ঊর্ধ্বে যাঁদের বয়স তাঁদের আর ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে হবে না। তাঁরা বাড়ি বসে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেবেন। এছাড়া যাঁরা শারীরিকভাবে অক্ষম (ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জ) তাঁরাও ভোট দেবেন পোস্টাল ব্যালটে। তবে ‘শারীরিকভাবে অক্ষম’ এর একটা গাইড লাইন আছে কমিশনের। সেই গাইড লাইনের মধ্যে থাকতে হবে। এর বাইরে যাঁরা করোনা পজিটিভ হয়ে কোয়ারান্টিনে আছেন তাঁদের জন্যও এবার পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থা হয়েছে। তবে করোনা আক্রান্তদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের শংসাপত্র লাগবে।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রত্যেক দফায় ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারির পর দিন থেকে ৫ দিনের মধ্যে বুথ লেভেল অফিসাররা বুথ এলাকায় প্রত্যেক ভোটারের বাড়ি বাড়ি যাবেন। যে তিন ধরনের ভোটারের পোস্টাল ব্যালটের কথা বলা হয়েছে তাঁদের নামের তালিকা প্রস্তুত করে প্রত্যেককে ১২/ডি ফর্ম পূরণ করাবেন। এরপর মনোনয়নপত্র জমা দেবার শেষ তারিখ থেকে ভোটগ্রহণের আগের দিন পর্যন্ত পোস্টাল ব্যালট হাতে এসে গেলে ২জন নির্বাচন কমিশনের কর্মী (একজন সিনিয়র সহ), ২ জন পুলিশ কর্মী এবং একজন ভিডিও ফটোগ্রাফার যাবেন সংশ্লিষ্ট ভোটারের বাড়িতে। গোটা ভোটদান প্রক্রিয়া ভিডিওগ্রাফি করা হবে। ওই সময় কমিশনের কর্মীরা সংশ্লিষ্ট ভোটারকে দিয়ে ১৩/এ ফর্ম পূরণ করাবেন। ভোটদান পর্ব শেষ হয়ে গেলে কমিশনের কর্মীরা খামে করে পোস্টাল ব্যালটটি নিয়ে যাবেন।
এছাড়া প্রত্যেক বুথে কোভিড গাইড লাইন মেনে স্যানিটাইজার, গ্লাভসের ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে। এদিনের বৈঠকে রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব ছাড়াও স্বাস্থ্য সচিবকেও ডাকা হয়েছিল। স্বাস্থ্য সচিবের কাছে উপ নির্বাচন কমিশনার জানতে চান বুথে বুথে আপনার ‘ব্লু-প্রিন্ট’ কি? স্বাস্থ্য সচিব জানান, করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে তিনি কিছুটা ব্যস্ত। ফলে সম্পূর্ণ প্রস্তুত নই। সুদীপ জৈন তখন স্বাস্থ্য সচিকে কোভিড প্রটোকল মেনে দ্রুত একটা ‘ব্লু-প্রিন্ট’ নির্বাচন কমিশনে পাঠাতে বলেন। প্রসঙ্গত, বুথে প্রত্যেক ভোটারকেই একটা করে গ্লাভস দেওয়ার কথা হয়েছে। ভোটার গ্লাভস পরে বুথের ভিতরে ঢুকবেন। ভিতরে একবার কালি লাগানোর জন্য গ্লাভস খুলতে হবে। তারপর আবার পরে নিয়ে বাইরে এসে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় গ্লাভস খুলে ফেলে দেবেন ভোটার।
এদিনের বৈঠকে শিক্ষা সচিবকেও ডাকা হয়েছিল। তাঁর কাছে স্কুল বাড়িগুলির অবস্থা জানতে চান উপনির্বাচন কমিশনার। কারণ এবার বুথ প্রতি ভোটার সংখ্যা এক হাজারের আশেপাশে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। ফলে ৭৮ হাজার ৯০৩টি বুথ যা এখন রাজ্যে আছে তা বেড়ে ১ লক্ষ এক হাজারের কাছাকাছি চলে যাবে। স্বভাবতই আরও বেশি করে স্কুল বিল্ডিং বা স্কুলের ক্লাস রুমের প্রয়োজন হবে। সেই কারণেই শিক্ষা সচিবকে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষা সচিব জানান, সুন্দরবন এলাকায় স্কুল বিল্ডিংগুলি আমফানে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অভাবে স্কুল বিল্ডিংগুলি মেরামত করা যায়নি। এ বাবদ কেন্দ্র অর্থ দেবে বলেছিল। সেই অর্থও আসেনি। এই বিষয়টি নিয়ে কমিশন আলোচনা করবে বলে জানা গেছে।
বুধবার জেলার ডিএম, এসপিদের সঙ্গে বৈঠক এবং এদিন রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রতিটি জেলার জেলা শাসক, পুলিশ সুপার এবং পুলিশ কমিশনারদের বলা হয়েছে জেলার মধ্যে অবস্থিত সমস্ত সংশোধনাগারগুলিতে নিজেরা উপস্থিত থেকে পরিদর্শন করতে হবে। কারণ জেল থেকে নির্বাচনে কলকাঠি নাড়ার ঘটনা এ রাজ্যেও ঘটছে। এই ধরনের অপরাধী কারা তাদের চিহ্নিত করে এক সপ্তাহের মধ্যে তালিকা নির্বাচন কমিশনে পাঠাতে বলা হয়েছে। এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) জ্ঞানবন্ত সিংয়ের কাছে সুদীপ জৈন জানতে চান কেন নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকা মান্যতা দিতে তিনি বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন? কেন এখনও জেলায় জেলায় সংঘর্ষ, গোলমালের খবর আসছে? কেন জামিন অযোগ্য অপরাধীদের তালিকা সম্পূর্ণ হয়নি? কমিশনের ফুল বেঞ্চ আসছে। তার আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতেই হবে। বিশেষত, যেখানে অশান্তির পরিবেশ আছে সেখানে শান্তির পরিবেশ ফিরিয়ে আনতেই হবে।