তৃণমূল নেতার বাড়িতে ইভিএম
-
নিজস্ব প্রতিনিধি
- Apr 07, 2021 12:10 [IST]
- Last Update: Apr 07, 2021 12:10 [IST]
হাওড়া, ৬এপ্রিল– আসামে বিজেপি বিধায়কের গাড়ির পর এবার একই কায়দায় পশ্চিমবঙ্গের ভোটে তৃণমূল নেতার বাড়ি থেকে উদ্ধার হলো ৪টি ইভিএম ও ভিভিপ্যাট। যাঁর বাড়িতে ইভিএম রাখা হয়েছিলো, সেই তৃণমূল নেতা গৌতম ঘোষ ও সেক্টর অফিসার তপন সরকারকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন গ্রামবাসীরা। উলুবেড়িয়া উত্তর কেন্দ্রের তুলসীবেড়িয়া গ্রামে মাঝরাতে তৃণমূল নেতার বাড়িতে ইভিএম ঢোকানো সত্ত্বেও কেবলমাত্র গ্রামবাসীদের সতর্কতা এবং সাহসের সঙ্গে প্রতিবাদের কারণেই এই ইভিএম লুটের কান্ড প্রকাশ্যে এসেছে। এর জন্য প্রতিবাদী গ্রামবাসীদের অবশ্য পুলিশের নির্বিচার লাঠির মারও খেতে হয়েছে।
কেন তৃণমূল নেতার বাড়িতে ইভিএম এলো? সেক্টর অফিসার গৌতম ঘোষ নিজে কী করে তৃণমূল নেতার বাড়িতে চার-চারটি ইভিএম মেশিন ও ভিভিপ্যাট নিয়ে এলেন? তাহলে কি ভোট চুরির অন্য কোন চক্রান্ত ছিল? গোপনে কি এরকম ঘটনা আরও ঘটে চলেছে? প্রশ্ন দেখা দিয়েছে রাজ্যের ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া ঘিরে।
গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, সোমবার রাত আড়াইটে নাগাদ উলুবেড়িয়া উত্তর কেন্দ্রের তুলসীবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৭৫নং বুথের গাঁতাইতপাড়ায় একটি মারুতি এসে থামে। রাতে গাড়ির শব্দ পেয়ে গ্রামবাসীদের ঘুম ভেঙে যায়। বাইরে বেরিয়ে তাঁরা দেখেন গাড়ি থেকে চারটি ইভিএম ও ভিভিপ্যাট নামিয়ে এলাকার তৃণমূল নেতা গৌতম ঘোষের বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন সেক্টর অফিসার তপন সরকার। এরপরই গ্রামবাসীরা গৌতম ঘোষের বাড়ির সামনে জড়ো হতে থাকেন। তাঁরা তৃণমূল নেতা গৌতম ঘোষকে বলেন, ‘‘কেন আপনার ঘরে ইভিএম ও ভিভিপ্যাট?’’ এরপরই সেক্টর অফিসার তপন সরকার ও গৌতম ঘোষকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের বক্তব্য, ভোট চুরির জন্য এই কাজ করছে তৃণমূলীরা। ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী। তাদেরও ঘিরে গ্রামবাসীরা ব্যাপক বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। এরপরই পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী মহিলা, শিশু নির্বিশেষে ব্যাপক লাঠিচার্জ শুরু করে। ঘটনায় এক শিশু ও চার মহিলা সহ বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী আহত হয়েছেন। কিন্তু গ্রামবাসীরা তাতেও দমে যাননি।
এরপর উলুবেড়িয়া ২নং ব্লকের বিডিও এলে তাঁকে ঘিরেও চলে বিক্ষোভ। গ্রামবাসীরা দাবি জানান, এই এলাকার ভোট বাতিল করতে হবে। কারণ আরও অনেক জায়গায় এই ঘটনা ঘটতে পারে। দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে এই বিক্ষোভ। অনেক পরে সেক্টর অফিসার তপন সরকার ও ইভিএমগুলিকে উদ্ধার করে গ্রাম থেকে নিয়ে যায় পুলিশ। এই ঘটনার কোনও ব্যাখ্যা মেলেনি প্রশাসনের তরফ থেকে, স্থানীয় প্রশাসনের কেউ ফোন ধরেননি। তবে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সেক্টর অফিসার তপন সরকার, সেক্টর অফিসারের সঙ্গে থাকা পুলিশের সাব ইনস্পেক্টর সুদীপ চক্রবর্তী ও দু’জন হোমগার্ডকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। কিন্তু আসামের বিজেপি’র মতো একই কৌশলে এরাজ্যের শাসকদলও ইভিএম নিয়ে এমন ভোটচুরির অপচেষ্টা রাজ্যের অন্যান্য বিধানসভা কেন্দ্রেও চালাচ্ছে না তো? এই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ভোটপর্বের মাঝপথে।