কৃষকদের ‘কোভিড’ প্রশ্নে বোবদের উদ্বেগ, কেন্দ্রের চাল নিয়েই সন্দেহ
-
-
- Jan 08, 2021 01:41 [IST]
- Last Update: Jan 08, 2021 03:00 [IST]
মাত্র বুধবারই বিতর্কিত কৃষি আইন নিয়ে একদফা শুনানি হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির এজলাসে। শুনানি শেষে বিচারপতিরা ঘোষণা করেছিলেন, কৃষি আইন এবং চলতি কৃষক আন্দোলন সংক্রান্ত সমস্ত আবেদন নিয়ে পরবর্তী সওয়াল-জবাব হবে আগামী ১১জানুয়ারি। এর চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই বৃহস্পতিবার অন্য মামলার সূত্রে কোভিড প্রসঙ্গে কৃষক আন্দোলনের প্রশ্ন তুলে আনলেন খোদ প্রধান বিচারপতি এসএ বোবদে। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার কাছে তিনি জানতে চাইলেন, কৃষক আন্দোলনে কোভিড মোকাবিলার বিধিনিয়ম মানা হচ্ছে কি? সলিসিটর জেনারেলও ঝটিতি জবাবে তাঁকে বলেন, ‘নিশ্চয়ই না’। খোদ প্রধান বিচারপতির এজলাসে এহেন চিত্রনাট্যের তাৎপর্য কি হতে পারে, তা নিয়ে নানান প্রশ্ন ও সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
এই ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ধেয়ে এসেছে সামাজিক মাধ্যমেও। ‘ট্রাক্টর ২’ নামে আন্দোলনকারী কৃষকদের একটি টুইটার হ্যান্ডেলে লেখা হয়, ‘‘মাননীয় সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে আমরা একমত। সরকার অবিলম্বে অসাংবিধানিক এবং কৃষকবিরোধী কৃষি আইন,২০২০ বাতিল করুক। তাহলে আমরাও বাড়ি ফিরে যেতে পারবো। একইসঙ্গে কোভিড এবং সরকারের সাঙ্ঘাতিক নীতি থেকে আমরা ফের সুরক্ষা পাবো।’’
কৃষকবিরোধী তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে টানা ৪৩দিন ধরে দিল্লি সীমান্তে লাগাতার ধরনা আন্দোলন চালাচ্ছেন লক্ষ লক্ষ কৃষক। কৃষকদের যুক্তি খণ্ডনে ব্যর্থ হয়ে আন্দোলন ভণ্ডুলের চেষ্টায় বারবার নানা কসরৎ দেখিয়েছে মোদী সরকার। কখনো ‘সমাজবিরোধী’, কখনো ‘খালিস্তানী’, কখনো ‘মাওবাদী’, কখনো বা ‘চীন-পাকিস্তানের মদতপুষ্ট’ বলে আন্দোলনকারীদের দেগে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন শাসকদল বিজেপি’র নেতা-মন্ত্রীরা। কিন্তু সরকারের সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে নিজেদের ঐক্য এবং শক্তি প্রতিদিনই জোরদার করেছেন আন্দোলনকারীরা। কালাকানুন প্রত্যাহারের দাবিতে অবিচল রয়েছেন তাঁরা।
এর মধ্যেই এদিন প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজে গত বছরের তবলিঘি জমায়েত এবং লকডাউনের সময়ে আনন্দ বিহার বাস টার্মিনাসে পরিযায়ী শ্রমিকদের উৎকণ্ঠিত সমাবেশ সংক্রান্ত মামলা ওঠে। শুনানি চলাকালীন প্রধান বিচারপতি বোবদে সলিসিটর জেনারেলের উদ্দেশে বলে ওঠেন, ‘‘কি চলছে তা আমাদের জানান। কৃষক আন্দোলনেও তো একই সমস্যা তৈরি হয়েছে। কৃষকরা কোভিড থেকে সুরক্ষিত কিনা, তা জানিনা। সুতরাং সেখানেও একই প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। এমন নয় যে সব সমস্যা শেষ হয়ে গিয়েছে। কৃষক আন্দোলনে কোভিড মোকাবিলার বিধিনিয়ম মানা হচ্ছে কি?’’ কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সলিসিটর জেনারেল মেহতা সঙ্গে সঙ্গেই জবাব দেন, ‘‘নিশ্চয়ই না’’। সর্বোচ্চ আদালতকে তিনি জানান, ‘‘এব্যাপারে কি করা হয়েছে এবং কি কি করা দরকার, তা নিয়ে আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যেই আমরা একটি রিপোর্ট জমা দেবো।’’ বিচারপতি বোবদের সঙ্গে এদিনের বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি এএস বোপান্না এবং বিচারপতি ভি রামসুব্রহ্মণিয়ান।
সাধারণভাবে, প্রধান বিচারপতির এদিনের মন্তব্যে কোভিড পরিস্থিতিতে আন্দোলনকারী কৃষকদের সুরক্ষা নিয়েই উদ্বেগ প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু একইসঙ্গে কেউ কেউ এই আশঙ্কাও জানাচ্ছেন যে, কৃষক আন্দোলন ভাঙতে এর আগে লাঠি, জলকামান, কাঁদানে গ্যাসের মতো বলপ্রয়োগেও কসুর করেনি মোদী সরকার। পাশাপাশি লাগাতার অপপ্রচারসহ কোনও কৌশলেই কৃষক আন্দোলন ছত্রভঙ্গ করতে না পেরে এবার কোভিডকেই ফের হাতিয়ার করবে না তো তারা! একাজে সরকার সর্বোচ্চ আদালতকে কাজে লাগাতে পারে বলেও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
শুরু থেকেই আন্দোলনকারী কৃষকরা বলে চলেছেন, কোনও প্রতিবাদ বা আন্দোলন দানা বাঁধতে দেখলেই মোদী সরকার কোভিড পরিস্থিতির অজুহাত দিতে শুরু করে! অথচ এই কোভিড মহামারীর মধ্যেই সরকার পরপর এমন সব পদক্ষেপ নিয়েছে যা শ্রমিক-কৃষক সহ দেশের সমস্ত শ্রমজীবী মানুষকে আরও সর্বস্বান্ত করেছে। সাধারণ মানুষের দুর্দশা আরও বেড়েছে। লকডাউন চলাকালীনই কর্পোরেট কোম্পানিগুলির স্বার্থ পূরণে সর্বনাশা শ্রম কোড, কৃষি আইন পাশ করিয়ে নিয়েছে সরকার। ফলে আন্দোলনকারী কৃষকদের বক্তব্য, মানুষের ওপর সর্বগ্রাসী আক্রমণ হলে মানুষ তো প্রতিরোধে পথে নামবেনই। মানুষের সামনে আর কি পথ খোলা রয়েছে? করোনা মহামারীতে কেন এসব জনবিরোধী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, আগে তার জবাব দিক কেন্দ্র। কৃষি আইনের মতো এসব অপকর্ম ফিরিয়ে নিলেই প্রতিবাদী মানুষ ফের ঘরে ফিরে যেতে পারেন। পরিবারের সদস্যদের ছেড়ে, হাড়-কাঁপানো ঠান্ডায় রাজধানী দিল্লির খোলা রাস্তায় এভাবে আন্দোলনে লেগে থাকা যে একান্তই বেঁচে থাকার তাগিদে, কেন্দ্র তা না বুঝলেও সর্বোচ্চ আদালত নিশ্চয়ই বুঝবে বলে এখনও বিশ্বাস করছেন কৃষকরা।