এক ইঞ্চিও এগল না কেন্দ্র, আন্দোলনে অটল কৃষকরা
-
অরূপ সেন
- Jan 16, 2021 11:31 [IST]
- Last Update: Jan 16, 2021 11:31 [IST]
কেন্দ্রের সঙ্গে কৃষক সংগঠনগুলির আরেকটি নিষ্ফলা বৈঠক হলো। শুক্রবার এই বৈঠকে কৃষক নেতারা আবারও স্পষ্ট জানিয়েছেন, সরকারের সঙ্গে সরাসরি আলোচনাই চান তাঁরা। আদালতের মধ্যস্থতা বা আদালত গঠিত কমিটি সম্পর্কে তাঁদের কোনও আগ্রহ নেই।
এদিন বৈঠকের শুরুতে কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ সিং তোমার বলেন, আমরা আলোচনা চাই। কিন্তু কৃষকদের নমনীয় হতে হবে। কৃষক নেতারা স্পষ্ট জানান, তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত আন্দোলন প্রত্যাহার করা যাবে না। মন্ত্রী বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনের রূপায়ণ আপাতত স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে। কৃষক নেতারা মন্ত্রীকে দুইয়ের পার্থক্য কী তা বুঝিয়ে বলেন। তাঁরা বলেন, আইনের রূপায়ণ স্থগিত রাখা হয়েছে পরবর্তী নির্দেশ পর্যন্ত। আইন তুলে নেওয়া হয়নি। যে কোনও সময় এই আইনই আবার চালু করা হতে পারে। আমাদের দাবি তিন আইন তুলে নিন, তারপরে আলোচনা করুন।
কৃষক নেতারা এদিন বৈঠকে বলেন, সরকার প্রতিহিংসামূলক আচরণ করছে। পাঞ্জাব থেকে বাসে কৃষকরা এসেছিলেন। বাস মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে। শহীদ পরিবারকে অর্থ সাহায্য করেছিলেন যাঁরা তাঁদের বিরুদ্ধে জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) মামলা করছে। দেশদ্রোহিতার মামলাও দেওয়া হচ্ছে। গণতান্ত্রিক দেশে কোনও সরকার এই আচরণ করতে পারে না। হরিয়ানায় মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানোর জন্য ৯০০ জনের বিরুদ্ধে হত্যার চেষ্টার মামলা দেওয়া হয়েছে। এই সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, আপনারা আলোচনার জন্য প্রতিনিধিদলের সংখ্যা ছোট করে আনুন। ক্ষুব্ধই হয়েছেন কৃষক নেতারা। ৪০টি সংগঠন একসঙ্গে এবং ঐকমত্যের ভিত্তিতে আলোচনা করছে, একথা পুনরায় জানিয়ে কৃষক নেতারা মন্ত্রীকে বলেন, আমাদের উপদেশ দেবেন না।
আদালতের প্রসঙ্গও ওঠে। পরে, সারা ভারত কৃষকসভার সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লা সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সরকারকে জানিয়ে দিয়েছি আমরা আদালতে কোনও আবেদন করিনি। বরাবর সরকারের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা চেয়েছি। আদালতের মামলায় আমরা পক্ষও নই। কমিটির সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই।
কৃষক নেতারা আইন প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছেন এবং সরকার সংশোধনীর কথা বলেই চলেছে, এমন অবস্থায় কৃষক নেতারা বলেন, তাহলে আরও আলোচনা করে লাভ কী? আলোচনা খতম করে দিন। আমরা চলে যাই। মন্ত্রী বলেন, না, আমরা আলোচনা চাই। কৃষক নেতারা বলেন, আমরা কখনও আলোচনায় অরাজি হইনি। যতবার ডেকেছেন, এসেছি। কিন্তু সরকার একই কথা বারংবার বলছে। যে কথায় কৃষক রাজি হবে না সেই কথাই বলছে। পরে, ঠিক হয়েছে ১৯ জানুয়ারি আরেক দফা আলোচনা হবে।
এদিন ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি নিশ্চয়তার দাবিও তুলেছিলেন কৃষক নেতারা। আগে কথা হয়েছিল এই বিষয়ে সরকার আলোচনা করবে। কিন্তু এদিন সরকার বলে এ নিয়ে এখন আলোচনা হবে না। কৃষক নেতারা বলেন, সরকার কথা দিয়ে রাখছে না।
প্রায় পাঁচ ঘণ্টা আলোচনার পরে কৃষি মন্ত্রী তোমার বলেন, নির্ণায়ক আলোচনা হয়নি। তবে আলোচনা বন্ধ হয়নি। আমরা কৃষকদের শীতের মধ্যে বসে থাকার কষ্ট বুঝছি। প্রশ্নের উত্তরে তোমার বলেন, সুপ্রিম কোর্টের কমিটি আমাদের ডাকলে আমরা সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করব।
এদিনের আলোচনা সম্পর্কে হান্নান মোল্লা বলেন, সরকারের ভূমিকা নেতিবাচক, ষড়যন্ত্রমূলক। সরকার আলোচনা এগিয়ে নিতে ইচ্ছুকই নয়। একই কথা বারংবার বলছে। কালক্ষেপ করছে, সময় নষ্ট করতে চাইছে। আমরা এখনও আলোচনায় রাজি কিন্তু আলোচনা থেকে কোনও ফল দেবে কিনা তা নিয়ে সংশয় বাড়ছেই।
মোল্লা বলেন, এই প্রেক্ষিতে আন্দোলন তীব্র করা ছাড়া কৃষকদের সামনে রাস্থা খোলা নেই। রাজ্যে রাজ্যে রাজভবনের সামনে ধরনা, মিছিল, বিক্ষোভ চলতে থাকবে। ২৬ জানুয়ারি কৃষক প্যারেড সম্পর্কে সরকার গুজব ছড়াচ্ছে। আমরা স্পষ্টই বলেছি সাধারণতন্ত্র দিবসের সরকারি প্যারেডের পরে কৃষক প্যারেড হবে। তা শান্তিপূর্ণ হবে। আজ আমরা সরকারকে বলেছি তার পরেও সংঘাতের কথা বলছেন কেন? সাধারণতন্ত্র দিবস জনগণের দিন। কৃষকরা রাজধানীতে এসে বলবে, আমরা অন্নদাতা, সারা বছর আমরা খাদ্যের জোগান দিই। এখন আমরা রাজধানীর চারপাশে বসে থাকতে বাধ্য হচ্ছি। সরকার আমাদের ন্যায়বিচার দেয়নি। জনগণের প্রতি সমর্থনের আহ্বান জানাবো আমরা। এই গণতান্ত্রিক অধিকারে বাধা দেবার চেষ্টা করবেন না। সংযুক্ত কৃষক মোর্চাও এদিন এক বিবৃতিতে বলেছে, সরকারি অনুষ্ঠানের কোনও ক্ষতি করার ইচ্ছা কৃষকদের নেই। ১৭ জানুয়ারি কৃষক সংগঠনগুলি বৈঠকে বসবে, ১৮ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের শুনানির পরে এই কর্মসূচির চেহারা সম্পর্কে চূড়ান্ত রূপরেখা ঠিক হবে।
কৃষক নেতা দর্শন পাল বলেন, কৃষকদের মনোভাব ইতিবাচক। আমরা সদর্থক আলোচনা চাই।
সংযুক্ত কৃষক মোর্চা এদিনের বৈঠকের পরে এক বিবৃতিতে বলেছে, সুপ্রিম কোর্টের কমিটির সদস্যদের সরকারই বেছে দিয়েছে, এ বিষয় এখন আর গোপন নেই। কমিটির সদস্য ভূপিন্দার মান কমিটি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। আমরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। সেইসঙ্গে কমিটির অন্য সদস্যদের কাছেও আমরা আবেদন করছি বিবেকের আহ্বান শুনুন, কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবি জানান।
মোর্চা বলেছে, কৃষক আন্দোলন এখন দেশব্যাপী জন আন্দোলনে রূপান্তরিত হচ্ছে। দিল্লির সমস্ত সীমান্তে কৃষকদের সংখ্যা বাড়ছে। রাজস্থান, উত্তরাখণ্ড থেকে লাগাতার ট্রাক্টর মিছিল আসছে। ওডিশা থেকে শুক্রবারই দিল্লি চলো মিছিল শুরু হয়েছে। সাতদিন ধরে পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তর প্রদেশ হয়ে এই মিছিল দিল্লি পৌঁছবে। ১২ জানুয়ারি পুনে থেকে কিষান জ্যোতি যাত্রা শুরু হয়েছে, ২৬ জানুয়ারি দিল্লি পৌঁছাবে। সুপ্রিম কোর্ট মহিলাদের সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছে তার জবাবে জলগাঁও থেকে মহিলাদেরই এক জাঠা দিল্লি রওনা হবে। কেরালা থেকে আজই শাহজাহানপুরে এসে পৌঁছেছেন কৃষকরা।