জনগণের পকেট লুট
-
-
- Feb 06, 2021 14:36 [IST]
- Last Update: Feb 06, 2021 14:36 [IST]
বাড়িয়েই চলেছে পেট্রোল-ডিজেল ও রান্নার গ্যাসের দাম। সেই ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ক্রমাগত বাড়ছে। মানুষের প্রাত্যহিক জীবন হোক বা দেশের অর্থনীতি, সবক্ষেত্রেই পেট্রোপণ্য তথা জ্বালানি একটি অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ। জ্বালানি ছাড়া সভ্যতা অচল, এক মুহূর্তও চলার উপায় নেই। আর এই অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যটির ওপরই সে গোড়া থেকে কুনজর পড়েছে মোদী সরকারের। আসলে এমন কামধেনু তো আর দ্বিতীয়টি নেই যে চাইলেই ভূরি ভূরি অর্থ মিলবে অথচ প্রিয় কর্পোরেট বন্ধুদের গায়ে আঁচড় পড়বে না। মরে মরুক জনগণ। ওদের কথা ভেবে সময় নষ্ট করার কোনও মানে হয় না। মোদী সরকারের ফলিত দর্শন এমনটাই।
সরকার চালাতে গেলে কর বা রাজস্ব সংগ্রহ করতেই হয়। ঘুরে ফিরে সেই রাজস্বের বোঝা বইতে হয় দেশের নাগরিকদেরকেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো কোন নাগরিকরা সেই বোঝা বইবেন সকলে নাকি বাছাই করা অংশরা। এই জায়গাতেই সরকারের নৈতিক অবস্থানের প্রশ্ন এসে যায়। সরকারের নীতি যদি সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধের অনুসারী হয়, দৃষ্টি যদি সমতা বা সাম্য অভিমুখী হয় তাহলে রাজস্ব সংগ্রহের প্রশ্নে অপেক্ষাকৃত ধনী তথা সম্পদশালীদের দিকেই বেশি হাত বাড়াবে। এমনভাবে কর কাঠামো তৈরি করবে এবং করের হার নির্ধারণ করবে যাতে গরিবদের উপর চাপ না পড়ে। সরকারের কর নীতিই প্রধানত ঠিক করে দেয় সমাজে আয় ও সম্পদ বৈষম্য বাড়বে না থিতু হবে। যদি বাড়ে তবে কত দ্রুততায় বাড়বে। যদি দেখা যায় আয় ও সম্পদ বৈষম্য তীব্র গতিতে বাড়ছে তবে বুঝতে হবে সরকার বিত্তবানদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত হারে কর আদায় করছে না বা নানাভাবে তাদের কর ছাড় ও কর মকুব করে যাচ্ছে। মোদী জমানায় এটাই স্পষ্ট লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
সরকারের কর আদায় হয় দুই ভাগে। একটি প্রত্যক্ষ কর, যা আদায় হয় কর্পোরেট কর ও ব্যক্তিগত আয়কর থেকে। এই কর দেয় শিল্প-বাণিজ্য সংস্থা এবং একটা সীমার উপরে আয়ের লোকেরা। বলা যায় বড়লোকদের কাছ থেকেই আদায় প্রত্যক্ষ হয় কর। অন্যটি পরোক্ষ কর যা আসলে বিক্রয় কর। প্রতিটি পণ্য ও পরিষেবার মূল্যের সঙ্গে যুক্ত থাকে এই কর। ফলে সমাজের প্রত্যেক মানুষকে এই কর দিতে হয়। পরোক্ষ কর মানেই সাধারণ মানুষের উপর বোঝা। জনমুখী হলে বা সমাজে সম্পদ বৈষম্য নিয়ন্ত্রণের ইচ্ছা থাকলে সরকার পরোক্ষ করে জোর কম দেয়। বেশি রাজস্ব আদায়ের চেষ্টা করে প্রত্যক্ষ কর থেকে। এক্ষেত্রে মোদী সরকার গোড়া থেকেই উলটো পথ বেছে নিয়েছে। কর্পোরেট কর বাড়ানোর বদলে কমিয়ে দিয়েছে যাতে আদানি-আম্বানিদের মুনাফার পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। বাস্তবে সেটাই হয়েছে। তেমনি আয়করের ক্ষেত্রে উচ্চবিত্তদের অনেক বেশি হারে কর দেবার সুযোগ থাকলেও তার ব্যবস্থা করেনি। ফলে দেশে বছর বছর পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শত কোটিপতি ও কোটিপতির সংখ্যা।
অন্যদিকে সরকার সব থেকে বেশি জোর দিয়েছে পরোক্ষ কর থেকে অর্থাৎ আমজনতার কাছ থেকে রাজস্বের সিংহভাগ আদায়ে। পেট্রোপণ্য থেকে কর আদায়কে তাই পাখির চোখ করা হয়েছে। ক্ষমতায় আসার পর থেকে নিয়ম করে প্রায় প্রতি মাসে, কোনও মাসে দু’বারও বাড়িয়েছে পেট্রোল-ডিজেলের দাম। পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়া মানে পরিবহণ ব্যয় বাড়া। পরিবহণ ব্যয় বাড়লে প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়ে, পরিষেবারও দাম বাড়ে। মোদী সরকার পেট্রোপণ্যের দাম বাড়িয়ে প্রতি বছর কোষাগার ভরাচ্ছে। আর আমজনতার জীবন দুর্বিষহ করে চলেছে।
ভারত যেহেতু আমদানিকৃত তেলের উপর নির্ভরশীল তাই আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দামের উপর ভারতে পেট্রোপণ্যের দাম ওঠানামা করার কথা। কিন্তু মোদী সরকারের কল্যাণে বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে দেশেও দাম বাড়ে। তবে বিদেশে কমলে দেশে কমে না। বিশ্ব বাজারে দাম কমার সঙ্গে সরকার সমহারে কর চাপিয়ে দাম একই রেখে দেয়। জনগণের পকেট কেটে বাড়তি টাকা লুটের এটাই মোদীর কারসাজি। ফলত দেখা যাচ্ছে ২০১৪ সালের তুলনায় দেশে পেট্রোলের দাম ২১ শতাংশ বাড়লেও সরকারের কর বেড়েছে ১৪২ শতাংশ। তেলের আন্তর্জাতিক মূল্যের নিরিখে দেশে পেট্রোলের উৎপাদন ব্যয় হবার কথা এখন ২৯ টাকা লিটার। তাতে যদি সর্বোচ্চ হারের জিএসটি ২৪% করা হয় তবে বিক্রি হবার কথা ৩৭ টাকা লিটার। কিন্তু মোদী সরকার বিক্রি করছে ৮৮ টাকায়। জনগণের পকেট কেটে সরকারের ভাঁড়ার ভরাচ্ছে আর আদানি-আম্বানিকে ছাড়ের পর ছাড় দিয়ে যাচ্ছে।