কৃষক আন্দোলনের ব্যাপ্তি ঘটছে
-
-
- Feb 08, 2021 13:37 [IST]
- Last Update: Feb 08, 2021 03:00 [IST]
গত প্রায় ৭৫ দিন ধরে নজিরবিহীন এক কৃষক আন্দোলন দেখছে দেশ। রাজধানীর বাইরে কৃষকদের আটকে দেওয়ায় নভেম্বরের শেষ থেকে তাঁরা সেখানে বসে আছেন। অন্তত পাঁচটি জায়গায় লাগাতার ধরনা চলছে। এখন রাজ্যে রাজ্যে ধরনাস্থল বেড়ে চলেছে। দিল্লিতে যেভাবে কাঁটাতার, কংক্রিটের ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছে তা-ও নজিরবিহীন। অনেকেই বলছেন, মোদী সরকারের কৃতিত্ব হলো দেশের সীমান্তকে দিল্লির দুয়ার পর্যন্ত টেনে এনেছে।
কিন্তু এর মধ্যেই লক্ষ্য করার মতো ঘটনা দিল্লি বাদ দিয়েই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে। সরকার প্রথম থেকেই দাবি করছিল এই আন্দোলন পাঞ্জাবের। কৃষি মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমার সংসদে দাঁড়িয়ে সেদিনও বলেছেন, একটি মাত্র রাজ্যের আন্দোলন। অথচ দেখা যাচ্ছে দিল্লির সীমান্তে ধরনায় রয়েছেন অন্তত সাত-আটটি রাজ্যের কৃষক। একের পর এক রাজ্যে চলছে কৃষক সমাবেশ-বিক্ষোভ। শনিবার কৃষক মোর্চার ডাকে দেশের অন্তত এক হাজার সড়কে অবরোধ হয়েছে। উত্তর ভারত তো বটেই পশ্চিমের মহরাষ্ট্র, মধ্য ভারতের মধ্য প্রদেশ-ছত্তিশগড়, পূর্বের বিহার-ওডিশা-বাংলা, দক্ষিণের কর্ণাটক-তেলেঙ্গানা-তামিলনাডুতে লক্ষ লক্ষ কৃষক রাস্তায় নেমেছেন। দিল্লিতে আটকে কৃষক আন্দোলনকে কোন মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে খোদ কেন্দ্রীয় সরকারই তার আরও একটি প্রমাণ হলো কৃষক মহাপঞ্চায়েত। উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, রাজস্থান, মধ্য প্রদেশে একেকটি পঞ্চায়েতেই দিল্লির সীমান্তে ধরনাস্থলের দশগুণ মানুষ সমবেত হচ্ছেন। একেকদিনে চার-পাঁচটি, এমনকি পাশাপাশি জেলায় পঞ্চায়েত হলেও সমাবেশের কোনও ঘাটতি নেই। সেখান থেকে আওয়াজ উঠছে, যতদিন আইন প্রত্যাহার না করা হবে ততদিন লড়াই চলবেই। এই সব কৃষক সমাবেশের আরেকটি উপাদানও সমাজবিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করছেন। উত্তর ভারতে জাতপাতের যে বিভাজন, তা অতিক্রম করেই এইসব মহাপঞ্চায়েতে সব ধর্ম-বর্ণ-জাতপাতের মানুষ একসঙ্গে উপস্থিত হচ্ছেন। শিখ-হিন্দু-মুসলিম কৃষক কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে লড়াইয়ে শামিল হয়েছেন। পশ্চিম উত্তর প্রদেশে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের যে জমি চাষ করে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় এসেছিলেন সেখানে এখন সাম্প্রদায়িক ঐক্যের বার্তা বাজছে। জাঠ ও গুজ্জরদের সংঘাতের বদলে একসঙ্গে হাত ধরার ছবি নতুন দিশা তৈরি করছে। অন্য পরিচয়ের বদলে ‘কৃষক’ পরিচয়ের সম্মান রাখতে কৃষক মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
এইসঙ্গেই আরেকটি বার্তাও ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। আন্দোলনের প্রথম পর্বে মোদী সরকারকে হটানোর স্লোগান তোলেননি কৃষকরা। এখন স্বতঃস্ফূর্তভাবেই কৃষকদের মধ্যে থেকে আওয়াজ উঠছে আইন হটাও, অন্যথায় নিজেদের বিপদ ডেকে আনবে। কৃষক আন্দোলনের বিরুদ্ধে কেন্দ্র যত আক্রমণাত্মক হচ্ছে, আন্দোলন তত প্রসারিত হচ্ছে। মোদী ও অমিত শাহের অঙ্ক ভুল হয়ে গেছে। দিল্লিতে ব্যারিকেড করে, জল-বিদ্যুৎ বন্ধ করে, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের আওয়াজ তুলে, দুর্বৃত্ত পাঠিয়ে কৃষক আন্দোলনকে দুর্বল করা যাবে বলে তাঁরা ভেবেছিলেন। উলটে কৃষক আরও ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তার প্রতিফলন পড়ছে প্রতিদিনের রাস্তায়। দিল্লি সামলাতে গিয়ে সরকারই এই আন্দোলনকে সর্বভারতীয় চরিত্র দিয়ে দিয়েছে।
এখনও সুযোগ আছে। সরকার একগুঁয়েমি, প্রতারণা ছেড়ে যদি কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করে, তিন আইন তুলে নিয়ে সংসদেই আলোচনার পরে নতুন আইন পেশ করে তাহলে এই সঙ্কট সমাধানের রাস্তা তৈরি হবে। না হলে দিল্লির রাস্তায় যে পেরেক পোঁতা হচ্ছে তা মোদী সরকারের রাজনৈতিক কফিনের পেরেকে পরিণত হবে।