অমানবিক চিকিৎসা ক্ষেত্র
-
-
- Jul 13, 2020 13:14 [IST]
- Last Update: Jul 13, 2020 03:00 [IST]
করোনা মহামারীর মধ্যে রাজ্যের চিকিৎসা পরিকাঠামোকে বেআব্রু করে দিয়ে প্রাণ দিয়েছে এরাজ্যের এক ছাত্র। সদ্য উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে আসা শুভ্রজিৎ চ্যাটার্জি তার বাবা মায়ের সঙ্গে ১৪ ঘণ্টা ধরে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরেছে। কোথাও চিকিৎসা তো দূরের কথা তাকে ভর্তিই নেওয়া হয়নি। যেভাবে কলকাতা শহরের বুকে এক ছাত্রকে বিনাচিকিৎসায় প্রাণ দিত হলো সেটা এরাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার শুধু বেহাল চিত্রকেই প্রমাণ করে দিল না, সরকারি এবং বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামো কত অমানবিক হয়ে উঠেছে সেটাও বেআব্রু করে দিয়েছে। শুভ্রজিৎ চ্যাটার্জি নামের ছাত্রটি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় তার বাবা মা তাকে একের পর এক হাসপাতাল নিয়ে গেছে, কিন্তু হাসপাতালগুলি তাকে শুধু প্রত্যাখ্যানই করেছে। রোগী প্রত্যাখ্যানের এই ঘটনাকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন? শুক্রবার ভোর চারটার সময় শুভ্রজিৎকে নিয়ে কামারহাটি ইএসআই হাসপাতালে গিয়েছিলেন তার বাবা মা। চিকিৎসা না করেই তাকে বেলঘরিয়ায় একটি বেসরকারি নার্সিং হোমে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে দেয় ইএসআই কর্তৃপক্ষ। এরপর বেলঘরিয়ায় ওই নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়ার পরে করোনা টেস্ট না করে ভর্তি নিতে অস্বীকার করা হয়। বাবা-মা অনেক অনুরোধ করার পরে তার করোনা টেস্ট হয়। কিন্তু নমুনা সংগ্রহের কিছুক্ষণের মধ্যে তাকে করোনা পজিটিভ বলে দেওয়া হয়। সেখান থেকে সাগর দত্ত হাসপাতালে শুভ্রজিৎকে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানেও বেড নেই বলে দেওয়া হয় সরাসরি। ততক্ষণে ছেলের শ্বাসকষ্টের সমস্যা বাড়তে দেখে বাবা মা অ্যাম্বুলেন্স জোগাড়ের চেষ্টা করেও হয়রানির শিকার হন। করোনা পজিটিভ জেনে কোনও অ্যাম্বুলেন্স তাকে নিয়ে যেতে রাজি হয়নি। অনেক চেষ্টার পরে বিপুল টাকা দিয়ে একটি অ্যাম্বুলেন্স জোগাড় করে শেষপর্যন্ত শুভ্রজিৎকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় দুপুরে। কিন্তু সেখানেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সটান বলে দেয় বেড নেই। তিন ঘণ্টা ধরে অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে শ্বাসকষ্টে ছটফট করেছে শুভ্রজিৎ চ্যাটার্জি। কোনও ডাক্তার তাকে দেখতে আসেনি। ছেলের অবস্থার ক্রমশ অবনতি দেখে মা বাধ্য হয়ে হাসপাতালের সুপারের ঘরের সামনে চিৎকার করে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন। প্রায় তিন ঘণ্টা পরে অ্যাম্বুলেন্স থেকে হাসপাতালের শয্যায় ঠাঁই পায় শুভ্রজিৎ। কিন্তু তার প্রাণ বাঁচানো যায়নি। রাতেই তার মৃত্যু হয়েছে।
কলকাতার বুকে এভাবে বিনাচিকিৎসায় কেন প্রাণ দিতে হলো এক ছাত্রকে? মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি নিজেই স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দায়িত্বে। তাঁকেই জবাব দিতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিকাঠামোর কথা গর্ব করে বলে বেড়ান, প্রশান্ত কিশোরের বাহিনী আর সরকার মিলিতভাবে বিজ্ঞাপনী প্রচার করেছে ঝাঁ চকচকে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়ে। শুভ্রজিতের বাবা মা টের পেয়েছেন কিরকম সেই পরিকাঠামো। ‘করোনা’ আক্রান্ত সন্দেহে এক রোগীকে কেন হাসপাতালের পরে হাসপাতালে প্রত্যাখ্যানের শিকার হতে হবে? কেন একজন গুরুতর অসুস্থ একটা অ্যাম্বুলেন্স পাবে না? ছেলের অবস্থার ক্রমাগত অবনতি সত্ত্বেও মেডিক্যাল কলেজে ভর্তিতে বিলম্ব দেখে বাবা বিশ্বজিৎ চ্যাটার্জি লালবাজারে ১০০ নম্বরে ডায়াল করে সাহায্য চেয়েছিলেন। সেখান থেকেও কোনও সাহায্য মেলেনি। তারপরে তিনি স্বাস্থ্য ভবনে ফোন করে ছেলের কথা বলেছিলেন। সেখান থেকে বলা হয় তাঁর ছেলের নামে কোভিড পজিটিভ রিপোর্টই স্বাস্থ্য দপ্তরে আসেনি। সবাই দায় এড়িয়েছে, ঘুরিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে অসুস্থ শুভ্রজিৎকে। কিন্তু শুক্রবার রাতের সরকারি তথ্যই বলছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ৫০০টি বেডের মধ্যে ৫৩টি বেড খালি ছিল। স্বাস্থ্য ভবনের বুলেটিনের তথ্য বলছে, গোটা রাজ্যে সমস্ত সরকারি হাসপাতালে কোভিড চিকিৎসায় ১০হাজার ৮৩০টি বেডের মধ্যে শুক্রবার রাতে মাত্র ২৯২৬টি বেডে রোগী ছিল, অর্থাৎ ৭৯০৪টি বেড খালি ছিল। তারপরেও কেন তিন ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্সে পড়ে থাকতে হলো রোগীকে? কেন বারেবারে বেড নেই বলে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ? সবকিছু ‘ঠিক আছে’ বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যতোই দেখানোর চেষ্টা করুন, স্বাস্থ্যক্ষেত্রের কিছুই ঠিক নেই। শুভ্রজিৎকে যেভাবে প্রাণ দিতে হলো তার দায় কে নেবে? মুখ্যমন্ত্রীকেই এর জবাব দিতে হবে।