বন্ধ করো এলআই সি বিক্রি
-
-
- Apr 30, 2022 12:04 [IST]
- Last Update: Apr 30, 2022 03:00 [IST]
বন্ধ করো
এলআইসি বিক্রি
এলআইসি আর পাঁচটা কোম্পানির মতো নয়। মালিকানার দোহাই দিয়ে সরকার যা খুশি সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এলআইসি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। মানে জাতীয় সম্পদ। জাতীয় মানে দেশের জনগণের সম্পদ। মাত্র ৩০ থেকে ৩৫শতাংশ মানুষের ভোট পেয়ে সরকার চালাচ্ছে বলে বাকি ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষের সম্পদ একতরফাভাবে খেয়ালখুশি মতো বিক্রি করে দেবার অধিকার নেই মোদী সরকারের। নির্বাচিত সরকারের দায়িত্ব জাতীয় সম্পদ তথা জনগণের সম্পদ রক্ষা করা এবং সমৃদ্ধ করা, দেশি-বিদেশি বেসরকারি লুটেরাদের হাতে তুলে দেওয়া নয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকার নির্বাচিত হয় জনগণের ভোটে, কর্পোরেট শিল্পপতি ব্যবসায়ীদের ভোটে। সরকার জনগণের প্রতিনিধি, জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। কর্পোরেটের প্রতিনিধি নয়, কর্পোরেটের কাছে দায়বদ্ধ নয়। দুর্ভাগ্যের হলেও এটা সত্য দেশের বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলেও তাদের দায়বদ্ধতা আদানি-আম্বানিদের মতো কর্পোরেটের কাছে। তাই এই জমানায় জনগণের রুজি-রোজগার কমলেও, জীবন-জীবিকার দুর্দশা বাড়লেও কর্পোরেট মালিকদের শ্রীবৃদ্ধি ঘটছে রকেট গতিতে। মানুষের শ্রম ও সম্পদ লুট করে ধনী থেকে ধনীতম হচ্ছে ভারতের বড়লোকরা। মোদী সরকারের কল্যাণে ভারতের বড়লোকরা আমেরিকা ইউরোপের বড়লোকদের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে সম্পদের পরিমাণে। মোদীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু আদানির মতো একজন সাধারণ ব্যবসায়ী কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্বের ৬ষ্ঠ ধনী শ্রেষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। মোদী সরকারের কল্যাণে বেপরোয়া জাতীয় সম্পদ লুট এবং জনগণকে সব দিক থেকে লুটে নিঃস্ব করে এটা সম্ভব হচ্ছে। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়ে তাদের মজুরি সঙ্কোচন করা হচ্ছে। জিনিসপত্রে অস্বাভাবিক দাম বাড়িয়ে যথেচ্ছ মুনাফা লোটা হচ্ছে। তারপর কর কমিয়ে, কর ছাড় বা মকুব করে, ঋণ মকুব করে তাদের আয় ও সম্পদ কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। মোদী সরকার যথার্থ অর্থেই জনগণের স্বার্থবিরোধী কর্পোরেটের তল্পিবাহক সরকার।
এই মোদী সরকারই আজ দেশি-বিদেশি কর্পোরেট মালিক ও পুঁজি বিনিয়োগকারীদের কাছে এলআইসি’র মতো ভারতে গর্বের সংস্থাকে বিক্রি করে দেবার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। শুধু ভারতে নয় বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ও প্রভাবশালী বিমা সংস্থাকে জলের দরে বিক্রি করে দিতে চাইছে। এলআইসি’র মতো মহামূল্যবান সংস্থা কেনার যোগ্যতা খুব কম বিনিয়োগকারীর আছে। তাই তাদের চাপে এলআইসি’র বাজার দর কমিয়ে প্রায় বিনামূল্যে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। ভারতের জনগণের ৩৮লক্ষ কোটি টাকার সম্পদ জমা আছে এলআইসি-তে। তাই এলআইসি’র সম্পদ জনগণেরই সম্পদ। এফআইসি গঠনের পর থেকে মাত্র পাঁচ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই ছোট্ট এলআইসি আজ অতিকায় চেহারা নিয়েছে জনগণের সম্পদে। তাছাড়া এই সংস্থা ১৯৫৬ সাল থেকে দেশের পরিকাঠামো নির্মাণে সর্বাধিক বিনিয়োগ করেছে। মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৩৫লক্ষ কোটি টাকা। দেশের উন্নয়নে বৃহত্তম অবদান এলআইসি। তাছাড়া যে কোনও আর্থিক সঙ্কটে ও অর্থের প্রয়োজনে এলআইসি-ই প্রধান ভরসা।
দেশের বিমা ক্ষেত্র বেসরকারি পুঁজির কাছে উন্মুক্ত করে দেবার পর প্রায় তিন দশক পেরিয়ে গেলেও বিমার বাজারে এলআইসি’র আসন এক চুলও কেউ টলাতে পারেনি। আমেরিকা-ইউরোপের বৃহৎ বৃহৎ বিমা সংস্থা ভারতের বাজারে এলেও এলআইসি’র কাছে মাথানত করে ব্যবসা গুটাতে হয়েছে অনেককে। আজও দেশের ৭৫শতাংশ বাজার এলআইসি’র দখলে। মানুষ এলআইসি-কে বিশ্বাস করে, ভরসা করে। তাই এলআইসি’র সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমে তাবড় তাবড় সংস্থা গোহারা হারে। এই এলআইসি-কে বেসরকারি হাতে তুলে দেবার উদ্যোগ জাতীয় স্বার্থ ও জনস্বার্থের বিরোধী। এটা বেসরকারি পুঁজির দালালি ছাড়া আর কিছুই নয়। এটা কোনও অবস্থাতেই মেনে নেওয়া যায় না।