এ ব্রিগেড অন্য ব্রিগেড
-
দেবব্রত ঘোষ
- Feb 28, 2021 12:04 [IST]
- Last Update: Feb 28, 2021 12:04 [IST]
পশ্চিমবঙ্গ
উদ্ধার অভিযান চলছে। দুষ্কৃতী, ধর্ষক, খুনি, লুটেরা, তোলাবাজ, ঘুষখোর, গণতন্ত্র
হত্যাকারী, কৃষি ও শিল্প ধ্বংসকারীদের হাত থেকে এরাজ্যকে
মুক্ত করার লড়াই দশ বছর ধরে চলছে। বিরামহীন লড়াই। এই লড়াইতে হাজার হাজার বামপন্থী
কর্মীদের ঘরছাড়া হতে হয়েছে। মিথ্যা মামলায় জেলে যেতে হয়েছে। দুই শতাধিক কর্মী,
নেতা শহীদ হয়েছেন। অজস্র সমর্থক-দরদিকে কত কিছু হারাতে হয়েছে তাঁর
সব হিসাব নেই। যে হারিয়েছে তাঁর কাছে মনের ডায়েরিতে সব কিছু লেখা আছে। এসব স্মৃতি
কেউ মুছে ফেলতে পারবে না।
এতকিছু হারানোর পর দুই-একজন বেইমান ছাড়া
হাজার হাজার বামপন্থী কর্মী এবং নেতারা কেউ কিন্তু ময়দান ছেড়ে পালায়নি। প্রতি
ইঞ্চি জমি পুনরুদ্ধার করার লড়াই চলছে। এই সংগ্রামে জোয়ার ভাটা আছে। এগিয়ে যাওয়া, পিছিয়ে যাওয়া আছে, কিন্তু সংগ্রাম থামেনি।
এই লড়াই খুব সহজ নয়। একটি শক্তির বিরুদ্ধে
নয়; দুটি শক্তির
বিরুদ্ধে। একদিকে স্বৈরাচারীদের হাত থেকে রাজ্যকে উদ্ধার করা আর একদিকে দাঙ্গাবাজ,
ফ্যাসিবাদী পথ অনুসরণকারীদের ঠেকানো। এই কাজ করতে গেলে প্রথমে এই
দুই শক্তির বিরুদ্ধে যে মানুষজন আছে তাঁদের একত্রিত করা প্রয়োজন। না হলে এই কাজ
কোনও রাজনৈতিক দল সে বাম হোক বা কংগ্রেস হোক পারবে না। এই কাজ করতে গেলে প্রথমেই
এদের বিরুদ্ধে যে রাজনৈতিক দলগুলি আছে তাঁদের একত্রিত হতে হয়, যা এতদিন ঠিকমতো দানা বাধছিল না। এবার সম্ভব হচ্ছে বাম, সহযোগী দল, জাতীয় কংগ্রেস, আইএসএফ
সকলেই ঐক্যবদ্ধভাবে এই লড়াইয়ে অনেকটা পথ এগিয়ে যেতে পেরেছে। অবশ্যই এই ঘটনার
ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে জনগণের মধ্যে। ফলে তৃণমূল ও বিজেপি বিরোধী মানুষও
ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন, একসঙ্গে মাঠে ময়দানে আন্দোলন, সংগ্রামে শামিল হচ্ছেন।
স্বৈরাচারী, দাঙ্গাবাজদের হাত থেকে পশ্চিমবঙ্গকে শুধু পুনরুদ্ধার
করে একটি সরকার গঠন করাই একমাত্র উদ্দেশ্য হতে পারে না, তা
নেই। মানুষের সামনে বিকল্প, উন্নত একটি শক্তিকে হাজির করাই
চ্যালেঞ্জ। এই শক্তি ভাঙবে না, গড়বে। ধ্বংস করবে না, সৃষ্টি করবে। ঘৃণা, হিংসা, সন্ত্রাস
মুক্ত করে কাজ, উন্নয়ন, সম্প্রীতি উপহার
দেবে। কোনও লুট, কাটমানি, মস্তানি,
গুন্ডামি, সন্ত্রাস থাকবে না।
৩৪ বছর বামফ্রন্ট সরকারের আমলের কিছু
প্রয়োগের ত্রুটি ত্যাগ করা হবে। কিন্তু সেই সরকারের দেওয়া গরিব মানুষের অধিকার, মহিলাদের অধিকার, কৃষক-খেতমজুর-শ্রমিকশ্রেণি এবং মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে ফিরিয়ে আনা
হবে। আত্মমর্যাদা নিয়ে মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার, সাম্প্রদায়িকতা
মুক্ত করে জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ধর্মনিরপেক্ষ
পশ্চিমবঙ্গ আবার স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত হবে। কৃষি ব্যবস্থাকে সংহত করে শিল্প
বিকাশের সংগ্রাম আবার শুরু হবে, যার মূল লক্ষ্য কাজ, কাজ আর কাজ। শুধু ডোল দেওয়া কোনও সরকারের কাজ হতে পারে না। যে রাজ্য এই
কাজ করেই যায়, সেই রাজ্য ক্রমশ ডুবে যায়। সরকার মানে কাজ,
খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য,
বাসস্থান যার প্রত্যেকটি এরাজ্যে ধ্বংসের কিনারায়। সবচেয়ে হাহাকার
কাজের বাজারে। উচ্চশিক্ষিত, শিক্ষিত, স্বল্প শিক্ষিত কারো কাজ নেই পশ্চিমবাংলায়। দেশে ১৫-২০ কোটি কর্মরত
মানুষের কাজ খেয়ে, দেশকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে
নরেন্দ্র মোদী এরাজ্যকে সোনার বাংলার গড়ার গল্প কখনোই এ রাজ্যের মানুষের কাছে
বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না।
বামপন্থী নেতারা এখন থেকেই ঘোষণা করেছেন —
বিকল্প সরকার প্রতিষ্ঠা হলে সব শূন্যপদ পূরণ হবে, প্রতি বছর এসএসসি হবে, টেট হবে।
কোনও নিয়োগে কাটমানি থাকবে না। যোগ্যতাই হবে মাপকাঠি। কৃষকদের অভাবী ধান, আলু বিক্রি করতে হবে না। সরকার থাকবে পাশে। স্বাস্থ্যসাথীর নামে
ভাঁওতাবাজি নয়, সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা চালু হবে।
কর্পোরেটদের হাত থেকে শিক্ষা ব্যবস্থা মুক্ত করা হবে। দয়া বা আনুগত্য নয়, সংখ্যালঘু, আদিবাসী, তফসিলি সব
অংশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে।
এবারের লড়াই শুধু কিছু রাজনৈতিক দলের লড়াই
হবে না, মানুষের লড়াই
হবে। এই লড়াইয়ে নতুন নতুন বহু মানুষের অংশগ্রহণ, স্বতঃস্ফূর্ততা
ঘটছে যার বেশিরভাগ তরুণ প্রজন্ম। প্রচার মাধ্যম যতই বিজেপি ও তৃণমূলের দালালি করে
যাক, যতদিন যাবে পরিস্থিতি বিকল্প শক্তির দিকে জোরালো হওয়ার
নানান সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। আর সেই সম্ভাবনাকেই বাস্তবায়িত করাই এই লড়াইয়ে অংশ
নেওয়া প্রত্যেক কর্মী ও নেতার কাছে চ্যালেঞ্জ।
যা চলছে তা জোরদার হোক, অপ্রতিরোধ্য শক্তি হিসাবে উত্থান
হোক ব্রিগেড সমাবেশ থেকে। যা হবে শত্রুর বুকে কাঁপন ধরানোর এবং বিকল্প শক্তির
আত্মবিশ্বাস তৈরি হওয়ার সমাবেশ। আত্মবিশ্বাস থেকে শপথ নিতে হবে শেষ রক্ত বিন্দু
দিয়ে লড়াই চালানোর। এক ইঞ্চি জমি না ছেড়ে সকলকে আঁকড়ে থাকতে হবে মাটি, পাড়া, বুথ। নিবিড় জনসংযোগ গড়ে তোলায় মনোনিবেশ করতে
হবে। মানুষকে জয় করাই হবে প্রধান লক্ষ্য।
তাই এবারের ব্রিগেড অন্য ব্রিগেড।
পশ্চিমবঙ্গকে পুনরুদ্ধার করার, মানুষের অধিকারগুলিকে ফিরিয়ে আনার ব্রিগেড। লুটে খাওয়া মানুষদের বিরুদ্ধে
খেটে খাওয়া মানুষের, বিভেদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করার,
ভাঙায় নয় গড়ার, ধ্বংসের নয় সৃষ্টির ব্রিগেড।
সামনের ঐতিহাসিক সংগ্রামের প্রাণ প্রতিষ্ঠার দিন ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখ।
চলুন, সবাই সাক্ষী থাকি।