ফের ফাটল বউবাজারে, ঘর ছাড়ছেন অনেকে
-
-
- May 12, 2022 23:46 [IST]
- Last Update: May 13, 2022 03:00 [IST]
আড়াই বছর আগের আতঙ্ক ফিরল বউবাজারে। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের জন্য বউবাজারের দুর্গা পিটুরি লেনে একের পর বাড়িতে ফাটল দেখা গেল আবার। আড়াই বছর আগে এই গলিতেই একই ঘটনা ঘটেছিল।
বুধবার সন্ধ্যার পর দুর্গা পিটুরি লেনের একের পর এক বাড়িতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ভয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন বাসিন্দারা। ফাটলের কারণে প্রায় ৮২ জন বাসিন্দা বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। অনেকে অবশ্য আতঙ্ক নিয়ে ফাটল ধরা বাড়িতেই রয়ে গিয়েছেন। মেট্রোর কাজ চলাকালীন ১১টি জায়গা থেকে সুড়ঙ্গে জল ঢোকায় এই বিপত্তি ঘটেছে বলে মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে নিয়েছে।
এক সোনার দোকানের মালিক প্রলয় পুরকাইতের দাবি, ‘‘গতবার যখন আমার দোকানে ফাটল দেখা গিয়েছিল, তখন মেট্রো কর্তৃপক্ষ কোনও ক্ষতিপুরণ দেয়নি। নবান্নকে জানিয়েছিলাম। কোনও লাভ হয়নি। নিজে খরচ করে দোকান সারিয়েছি। এবারও ফাটল ধরল। এবারও ক্ষতিপূরণ পাব কি না, জানি না।’’ স্থানীয় বাসিন্দা, যাঁরা বৃহস্পতিবার বাড়ি ছেড়েছেন, তাঁদেরও অনেকের অভিযোগ একই।
বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে যান কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র ফিরহাদ হাকিম। সেখানে সাংবাদিকদের মেয়র জানিয়েছেন, বউবাজারের নিচে মাটি নরম হওয়াতেই বসে যাচ্ছে বাড়ি। মেট্রো কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। মেট্রোর কাজের জন্যই বাড়িতে ফাটল দেখা গিয়েছে। এই এলাকায় পুরানো বাড়ি রাখা কতটা নিরাপদ, তাও খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে বিল্ডিং বিভাগকে। ইঞ্জিনিয়াররা অবস্থা খতিয়ে দেখবেন। কোন বাড়ি বেশি বিপজ্জনক, তা চিহ্নিত করা হবে। বিপজ্জনক বাড়ি নিয়ে পৌরসভা রিপোর্ট তৈরি করবে। সেই রিপোর্ট নিয়ে নবান্নে বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
দ্বিতীয়বার ফাটল দেখা দেওয়ায় মেট্রো কর্তৃপক্ষের দিকে আঙুল তুলেছেন বাসিন্দারা। আড়াই বছর আগে মেট্রোর ফিট সার্টিফিকেট পেয়ে দুর্গা পিটুরি লেনের বাড়িতে ফিরেছিলেন ঘরছাড়ারা। ফের মেট্রোর কাজের জন্য ফাটল দেখা দিয়েছে একাধিক বাড়িতে। স্বভাবতই মেট্রোর দেওয়া ফিট সার্টিফিকেট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার বাসিন্দারা। একইসঙ্গে গতবারের ক্ষতিপূরণ না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মেট্রো কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
এদিন মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কী করে এই ফাটল দেখা দিল, তা নিয়ে তদন্ত চলছে। সুড়ঙ্গের ভেতর জল ঢুকেছে। জল ঢোকা রুখতে আগে থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিপত্তি ঘটেছে। শিয়ালদহ এবং বউবাজার এলাকায় আলাদা আলাদা রকম বিপত্তি হয়েছে। বউবাজারে বাড়ি ফেটেছে। বৃষ্টিপাতের কারণে বা কোনওভাবে জল ঢুকে পড়ায় মাটি নরম হয়েছিল। সেখানে মেশিন চালানোর ফলে চারপাশের দেওয়াল বসে গিয়ে ফাটল হয়ে থাকতে পারে। টানেলের ভেতর জলের লেভেল অনেকটা উঠে গিয়েছে। কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, মেট্রোর বেস লাইন এমনভাবে তৈরি হয়েছে যে, চারপাশ থেকে জল ঢুকে পড়ার সুযোগ নেই। জল ঢুকেছে উপর থেকেই। ফাটলের উৎসমুখগুলিকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। যে ১১টি জায়গা থেকে জল সুড়ঙ্গে ঢুকেছিল, তার মধ্যে ১০টি জায়গাকে বন্ধও করা গিয়েছে। এখনও অনেক বাড়ি ফাঁকা করতে হবে। সেই সব বাসিন্দাকে হোটেলের রাখা হবে।
গত তিন-চার দিন ধরে বাড়িগুলিতে দেওয়াল ও মেঝে কাঁপছিল বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন। বুধবার সন্ধ্যার পর বাড়িগুলিতে ফাটল দেখা যায়। এরপরই বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন বাসিন্দারা। খবর দেওয়া হয় মেট্রো কর্তৃপক্ষকে। বুধবারই রাতে মেট্রো কর্তৃপক্ষ কয়েকটি হোটেলে ঘরছাড়াদের রাখার ব্যবস্থা করলেও অনেকে আশ্রয় না পেয়ে রাস্তায় রাত কাটিয়েছেন। বড় ধরনের বিপত্তি যাতে না ঘটে, তার জন্য দুর্গা পিটুরি লেন পুলিশ ঘিরে রেখেছে। ওই গলির বাসিন্দা ছাড়া বাইরের কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
বউবাজারের দুর্গা পিটুরি লেনে পরপর সোনার দোকান। কর্মীরা দোকানেই থাকেন। তাঁদের দাবি, বুধবার নোটিস পাওয়া মাত্র তড়িঘড়ি বেরিয়ে আসতে হয়। সকাল থেকে দোকান খোলা যায়নি। ভিতরে দামী গয়না থাকায় রাতভর খোলা আকাশের নিচেই কাটিয়েছেন সোনার দোকানের মালিক থেকে শুরু করে কর্মীরা।