জবরদখল, পিটিশনে বললেন ক্ষুব্ধ বিশিষ্ট কাশ্মীরিরা
-
-
- Aug 12, 2019 09:55 [IST]
- Last Update: Aug 12, 2019 03:00 [IST]
শ্রীনগর, ১১ আগস্ট— নিজেদের ‘রাজ্যহীন রাজ্যের বাসিন্দা’র তকমা দিয়ে ৩৭০ ধারা বিলোপের বিরুদ্ধে পিটিশনে স্বাক্ষর করলেন কাশ্মীরের বিশিষ্ট নাগরিকরা। কাশ্মীরি পণ্ডিত, ডোগরা, শিখ মিলিয়ে ৬৪জন বিশিষ্ট সই করেছেন এই পিটিশনে। গোপনীয়তা বজায় রেখে ‘অসাংবিধানিক এবং অগণতান্ত্রিক’ পদ্ধতিতে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাঁরা। একইসঙ্গে স্বেচ্ছাচারী কার্যকলাপে চূড়ান্ত নিন্দাও করেছেন। কেন জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের, রাজ্য বিধানসভার কোনও মতামত না নিয়েই এই ধারা রদ করে দেওয়া হলো, সেই প্রশ্নও তোলা হয়েছে পিটিশনে।
সংবিধানের ৩৭০ নম্বর ধারা বাতিলের সিদ্ধান্তে দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে রাজ্যকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করার দাবি তোলা হয়েছে এই পিটিশনে। চৌর্যবৃত্তির মাধ্যমে এবং জবরদখল করে এই ৩৭০ ধারা রদ করে দেওয়া হলো বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে পিটিশনে। অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ভাইস মার্শাল কপিল কাক, নাট্যব্যক্তিত্ব এমকে রায়না, কার্ডিওলজিস্ট উপেন্দ্র কল, প্রবীণ সাংবাদিক শারদা উগরা, প্রদীপ ম্যাগাজিন, অনুরাধা ভাসিন সহ একাধিক বিশিষ্টদের স্বাক্ষর সম্বলিত এই পিটিশনে চূড়ান্ত নিন্দা করা হয়েছে কেন্দ্রের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের এই পদক্ষেপের। তাঁদের বক্তব্য, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক তো বটেই, একইসঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরবাসীকে ভারত সরকার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেই ঐতিহাসিক ক্ষেত্রটিও লঙ্ঘন করা হয়েছে।
এয়ার ভাইস মার্শাল (অবসরপ্রাপ্ত) কপিল কাক এই প্রসঙ্গে ‘দ্য কুইন্ট’কে বলেছেন, ‘‘এই পদ্ধতি একেবারেই অসাংবিধানিক, আইনবিরুদ্ধ এবং অগণতান্ত্রিক। সংবিধানকে নিয়েই এমন নাড়াচাড়া করা হলো, তা আইনসিদ্ধ নয়। সরকারের এই পদক্ষেপে জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার অনুমোদনকে কেন সম্পূর্ণভাবে বর্জন করা হলো সেই প্রশ্নও তোলা হয়েছে পিটিশনে। নিন্দা করে বিশিষ্টরা বলেছেন, জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার সম্মতি এবং মতামত না নিয়েই এই সিদ্ধান্তের প্রয়োগ ঘটানো স্বেচ্ছাচার। গণতন্ত্রের সমস্ত নিয়মকেই তুচ্ছ করে দেওয়া হলো। জম্মু-কাশ্মীরের সাধারণ নাগরিক কী চাইছেন, নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁরা কী ভাবছেন, সেসব নিয়ে ভাবেননি নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ। কপিল কাক দুঃখের সঙ্গে বলেছেন, আমাদের মানে জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয়ে গেল আমাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই।
প্রবীণ থিয়েটার ব্যক্তিত্ব এম কে রায়না বলেছেন, ‘‘১৯৯০ সালে কাশ্মীর থেকে যখন পরিবার নিয়ে চলে যাই, তখন মনে একটা আশা ছিল। কখনও ঠিক ফিরে আসব। কিন্তু এখন তো এটা আমার রাজ্যই নয়, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। আমি যদি ফিরেও আসি, তাহলেও আমাকে সন্দেহের চোখে দেখা হবে। যেন আমিই সংবিধানকে চুরি করেছি, রাজ্যের মর্যাদা ছিনিয়ে নিয়েছি। আর এটাই আমাকে খুবই যন্ত্রণা দিচ্ছে। সবাই লাল পতাকা নিয়ে কথা বলছে। কিন্তু এটা শুধু পতাকাই নয়, এটা একটা লড়াই। কোনও মহারাজার পতাকা নয়, এটি মানুষের পতাকা।’’ একপেশে, অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক এই নির্দেশ আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হলেও তা মানছি না, স্পষ্ট উল্লেখিত হয়েছে পিটিশনে। নিজেদের জন্মভূমির বিভাজনে শোকার্ত বিশিষ্টরা পারস্পরিক বন্ধনে আবদ্ধ থেকে এই সঙ্কট মোকাবিলার কথা বলেছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তিনটি দাবি জানিয়ে শেষ করা হয়েছে পিটিশন। প্রথমত, অবিলম্বে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করতে হবে রাজ্যকে। দ্বিতীয়ত, জম্মু-কাশ্মীরে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করতে হবে। তৃতীয়ত, নিয়মবিরুদ্ধ এবং আইনবিরুদ্ধভাবে আটক করা রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের মুক্ত করতে হবে।