দামে ভয় বিজেপি’র, প্রধান প্রশ্ন যে কাজই, মানছেন তৃণমূল প্রার্থীও
-
নিজস্ব প্রতিনিধি
- Mar 17, 2021 14:22 [IST]
- Last Update: Mar 17, 2021 03:00 [IST]
ঝাড়গ্রাম
১৬ মার্চ— ‘‘গ্র্যাজুয়েট, এমএ পাশ করে এলাকার ছেলে মেয়েরা বসে আছে। তাঁদের কাজ নেই। কাজের খুব অভাব।’’
বীরবাহা হাঁসদা বললেন।
কাজের সুযোগ ঠিক মতো যুবক-যুবতীরা পাচ্ছে না বলছেন? সাঁওতালি সিনেমার অভিনেত্রী বললেন,‘‘বললাম যে। কাজের বিষয় ঠিক মতো হয়নি। মানুষের একটাই কথা। যেখানে যাচ্ছি, এক কথা— কর্ম চাই।’’
এই দাবিতে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে মধুজা সেনরায়কে বেশ কয়েকবার রাজ্যের পুলিশ গ্রেপ্তার করে লালবাজারে রেখেছে। তাহলে তো মধুজাদের দাবিই ঠিক? আপনার কী মত? এবার বীরবাহা সতর্ক। বললেন,‘‘এই বিষয়ে কিছু বলার নেই।’’
এসএফআই’র রাজ্য কমিটির প্রাক্তন সভানেত্রী, বর্তমানে যুব আন্দোলনের নেত্রী মধুজা সেনরায় সিপিআই(এম) প্রার্থী, ঝাড়গ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রের। বীরবাহা হাঁসদাও প্রার্থী তৃণমূলের। প্রচারে নেমে তিনি বুঝেছেন বুথ পিছু ১২৯ জনের কাজ হয়েছে বলে তাঁর দলের নেত্রী যে দাবি করছেন তার সঙ্গে বাস্তবে কোনও মিল নেই।
কাজের অভাবই এবারের নির্বাচনের অন্যতম প্রধান বিষয়।
গত দশ বছর ঝাড়গ্রামে তৃণমূল জিতেছে। ২০১১-তে নির্বাচনে জিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির প্রথম সফর এই ঝাড়গ্রামেই। ২০১১-র ১২ জুলাই। সেদিন ভাষণে তিনি একবারও কাজের অভাবের প্রসঙ্গ তোলেননি। তখন মূলত নানা প্রকল্পের ঘোষণায় ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। গত দশ বছরে ২ টাকা কেজির চাল রেশনে দেওয়া ছাড়া আর কোনও ‘সাফল্য’র উল্লেখ তৃণমূলের প্রচারেও নেই। কিন্তু সেই ২ টাকা কেজি চাল দেওয়ার প্রকল্পও চালু করেছিল বামফ্রন্ট সরকার।
সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত সিপিআই(এম) প্রার্থী মধুজা সেনরায় প্রতিটি সভাতেই কাজের সঙ্কটের কথা বলছেন। তাঁর কথায়,‘‘কাজের অভাব তখনও এমন চেহারায় ছিল না। বামফ্রন্ট শিল্পায়নের উদ্যোগ নিয়েছিল। কাজের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল অনেক। তা ধ্বংস করেছে তৃণমূল-বিজেপি মিলে। আজ প্রমাণ হয়েছে বামফ্রন্ট ঠিকই বুঝেছিল। ঠিক পদক্ষেপ নিচ্ছিল। এখন সেই সম্ভাবনা পরিণত হয়েছে হাহাকারে। কাজের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে নবান্ন অভিযানে প্রাণ দিয়েছেন কমরেড মইদুল মিদ্যা। অনেকে আহতও হয়েছেন।’’
তৃণমূল প্রার্থীও প্রচারে বেরিয়েও বুঝছেন কথা ঠিক।
শহর আর গ্রাম মিলিয়ে এই বিধানসভা কেন্দ্র। জেলার মাত্র ৪ শতাংশ মানুষ শহরবাসী। তাঁরা প্রায় সবাই এই কেন্দ্রের বাসিন্দা। রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের শেষ শহর ঝাড়গ্রামকে ঘিরে আছে বিস্তীর্ণ গ্রাম। সেই গ্রামের সিংহভাগ জঙ্গলমহলের মধ্যে। বামপন্থীদের শক্ত ভিতের এই এলাকায় বারবার শহীদ হয়েছেন সিপিআই(এম) কর্মীরা, শুধু এই জেলায় প্রায় দেড়শো জন। মূল লক্ষ্য ছিল বামপন্থীদের দুর্বল করা। মাওবাদী-তৃণমূল মিলে এই কাজ করেছিল।
দশ বছর তার ফায়দা নিয়েছে তৃণমূল। কিন্তু মমতা-শাসনের সেই দশ বছরে জঙ্গলমহলে মাথাচাড়া দিয়েছে সঙ্ঘ পরিবার। আরএসএস ছড়িয়েছে জঙ্গলমহলে। ‘হিন্দুত্ববাদ’র বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে চ্যালেঞ্জ। গ্রামে গ্রামে সঙ্ঘ যখন স্কুল খুলেছে, এক-দু’ হাজার টাকা দিয়ে শিক্ষিত বেকার যুবকদের পড়ানোর দায়িত্ব দিয়েছে, তখন তৃণমূল মূলত পঞ্চায়েতের টাকা চুরির কাজে ব্যস্ত ছিল। তারা রুখতে পারেনি বিজেপি’কে।
গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি জিতেছে ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে। এবার ঝাড়গ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি’র প্রার্থী সুখময় সৎপথি— আরএসএস’র স্বয়ংসেবক। ছিলেন আরএসএস’র জেলা কার্যাবহও। বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে সুখময় সৎপথিরা এখানে জেতার আশা কখনও করেননি।
তবে শুধু স্বয়ংসেবক, তাদের নানা নামের সংগঠনই এখানে বিজেপি’র শক্তি নয়। প্রচারে তারা সবার আগে। গেরুয়া গেঞ্জি, টুপি, অসংখ্য পতাকা, প্রচার গাড়ি, অনেক ফেস্টুন বলে দিচ্ছে প্রচুর টাকা বিজেপি’র। লড়াই সেই অর্থের সঙ্গেও।
কিন্তু বিজেপি’র পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পেট্রোল, ডিজেল, গ্যাস, জিনিসপত্রের দাম। মানলেন কুনার হেমব্রমও। বিজেপি’র ঝাড়গ্রামের সাংসদ বললেন, ‘‘এটা ঠিক। জিনিসের দাম, জ্বালানির দাম বাড়ার জন্য মানুষ আমাদেরকে দায়ী ভাবছেন।’’ তবে তাঁর দাবি,‘‘বিরোধীরা এই বিষয়ে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে।’’
২০১৯’র লোকসভা নির্বাচন আর ২০২১’র বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে পরিস্থিতির তফাৎ কী? কুনার হেমব্রমের কথায়, ‘‘মানুষের ভয় ভেঙেছে তৃণমূল সম্পর্কে।’’ ভয় ভাঙল কী করে? সাংসদের সোজা জবাব, ‘‘শুভেন্দুদার মতো নেতা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি’তে এসেছেন। তাঁর অনুগামীরা এসেছেন। তৃণমূল ভাঙছে। আমার উপস্থিতিতেই কয়েক হাজার তৃণমূল নেতা, কর্মী, সমর্থক বিজেপি’তে এসেছেন।’’
বিজেপি’তে ক্রমাগত মিশে যেতে থাকা তৃণমূল এখানে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে বিদীর্ণ।
লড়াই তাই প্রধানত সংযুক্ত মোর্চার সঙ্গে বিজেপি’র।
প্রমাণ? কাঁটাপাহাড়ি। গত দশ বছরে যেখানে সিপিআই(এম) কোনও কর্মসূচি করতে পারেনি, সেখানে এবার দেওয়াল লিখেছেন পার্টিকর্মীরা। হয়েছে সভা। ছিলেন প্রার্থীও। অথচ এখানেই পার্টিনেতা কমরেড রোহিত রায় সহ বেশ কয়েকজনকে খুন করে মাওবাদীরা জায়গা তৈরি করে দিয়েছিল তৃণমূলের।
মঙ্গলবার লালগড়েও এক মিছিলে অংশ নিয়েছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। ছিলেন মধুজা সেনরায়, পার্টিনেতা ডহরেশ্বর সেন, প্রদীপ সরকার, পার্থ যাদব, অলক দাস, স্বপন ফৌজদার প্রমুখ।
-----------------------------------------------