কেশপুরে হামলা বিজেপি'র, পালটা অফিস ঘেরাও মহিলাদের
-
-
- Jan 08, 2021 03:33 [IST]
- Last Update: Jan 08, 2021 01:24 [IST]
দশ বছর পরে সন্ত্রাস, হুমকির আগল ভেঙে মিছিল অবরুদ্ধ কেশপুরের সাহসপুরে। মিছিল শুরু হতেই সশস্ত্র হামলা। তৃণমূল থেকে বিজেপি’তে যাওয়া দুষ্কৃতী বাহিনী হামলা চালালো লাল ঝান্ডার মিছিলে। হামলায় নেতৃত্ব বিজেপি’র মণ্ডল নেতা। কিন্তু এখানেই থেমে থাকেনি কেশপুর।
বিজেপি’র হামলায় রক্তাক্ত, আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসাকেন্দ্রে পাঠিয়ে ফের শুরু হলো মিছিল। হামলাকারীরা লুকালো গ্রামের বিজেপি অফিসের ভিতরে। গ্রামের প্রতি ঘর থেকে বেরিয়ে মহিলারাই পালটা প্রতিরোধের মেজাজে হামলাকারীদের আশ্রয়স্থল বিজেপি অফিস ঘিরে রাখলো। বিকাল চারটে থেকে রাত আটটা— ঠান্ডার মধ্যেই চার ঘণ্টা বিজেপি অফিস ঘিরে রাখলো গ্রামের মহিলার। পুলিশ এসে ঘেরাও তুলতে গেলে বিক্ষোভের মুখে পড়ে। শেষপর্যন্ত হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা হবে বলে আশ্বস্ত করার পর গ্রামের মহিলারা ঘেরাও তোলেন।
একদিকে হামলা প্রতিহত করা, বিজেপি অফিস ঘিরে রাখা অন্যদিকে তখন মিছিল করেই প্রায় এক দশক ধরে তৃণমূলের দখল করা কার্যলায় উদ্ধার করলেন সিপিআই(এম) কর্মীরা, গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়েই। বিকালেই ফের লাল পতাকায় সাজিয়ে তোলা হলো আনন্দপুর থানা এলাকার সাহসপুরে গাঁটরা এলাকার সিপিআই(এম) কার্যালয়।
পালটা প্রতিরোধের অনন্য দৃশ্য সেই কেশপুরে। এদিন বিকালে। শুধু কেশপুরেই নয়, এদিন সকালে চন্দ্রকোনা রোডেও দিল্লির কৃষক আন্দোলনের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছে, ফসলের দাম ,কাজের অধিকারের দাবিতে হলো লাল ঝান্ডার উত্তাল মহামিছিল। জেলা জুড়েই একাধিক জায়গায় হাজার হাজার মানুষ এদিন পথে নামলেন কৃষক-মারা কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে, দিল্লির আন্দোলনের পাশে দাঁড়ানোর শপথ নিয়ে।
সন্ত্রাসের বধ্যভূমি কেশপুরের আনন্দপুর থানার সাহসপুর এলাকায় দশ বছর পর মহামিছিল হলো। তৃণমূল কংগ্রেস গাঁটরা এলাকায় সিপিআই(এম) দপ্তর দখল করেছিল। সেই দপ্তর পরে তৃণমূলের হয়ে বিজেপি-তে যাওয়া বাহিনী দখল নিয়ে নেয়। এদিন বিকাল চারটে নাগাদ সেই সাহসপুর বাজার থেকেই মিছিল শুরু হওয়ার কথা ছিল। আশপাশের এলাকা থেকে গ্রামবাসীরা চারটের আগেই সেখানে জড়ো হতে শুরু করেন। রড, লাঠি নিয়ে অতর্কিতভাবে মিছিল শুরুর আগে রাস্তার উপর আক্রমণ চালানো হয়। আক্রমণকারীরা হলো বিজেপি’র মণ্ডল সভাপতি প্রবীণ হালদার সহ জনা তিরিশ দুষ্কৃতী। সৌমেন জাল নামে এক কর্মী জখম হয়েছেন, তাঁর মাথায় গভীর ক্ষত। অমল রায় ও অবোদ দণ্ডপাট রক্তাক্ত হন। খবর পেয়ে কর্মীরা ছুটে গিয়ে উদ্ধার করেন তাঁদের। স্থানীয় প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। তিনজনকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে হামলাকারীরা তখন বিজেপি’র দপ্তরে গা ঢাকা দেয়। খবর পেয়েই কয়েকশো মহিলা সহ গ্রামের মানুষ বিজেপি’র সেই দপ্তর ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। পুলিশ ভ্যান ঘটনাস্থলে এলে সেই গাড়িকেও ঘিরে ধরে জনতা। দাবি ওঠে ওই বিজেপি নেতা সহ তার আক্রমণকারীদের সবাইকে গ্রেপ্তার করতে হবে। শ’তিনেক মানুষ বিকাল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ঘেরাও করে রাখেন। বাকি মানুষ মিছিলে শামিল হোন। সেই মিছিল থেকেই তারপর গাঁটরায় সিপিআই(এম)র কার্যালয় দখলমুক্ত করা হয়। সাজানো হয় লাল পতাকায়।
একদিকে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের চেহারায় বিজেপি দপ্তরে গা ঢাকা দেওয়া দুষ্কৃতীদের ঘেরাও অন্যদিকে মহামিছিল, চলে একইসঙ্গে। গ্রামের মহিলারাই দুষ্কৃতীদের ঘিরে রাখেন। শেষ পর্যন্ত জনরোষের চাপে পুলিশ কয়েকজন হামলাকারীকে আটক করতে বাধ্য হয়। মিছিলে বিজেপি’র এই হামলার ঘটনায় তীব্র ধিক্কার জানান সিপিআই(এম) জেলা সম্পাদক তরুণ রায়। তিনি গ্রামবাসীদের এই প্রতিরোধকে অভিনন্দন জানিয়ে গরিব মানুষের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। গাঁটরা এলাকার উদ্ধার করা পার্টি দপ্তরটি সাজিয়ে তোলা হয় মুহূর্তের মধ্যে। কৃষকদের আন্দোলনের স্মরণে মাল্যদান সহ পতাকা উত্তোলন করা হয়। পার্টি নেতা মানিক সেনগুপ্ত, আহমেদ আলি, এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুভাশিষ পাইন, গোরা চাঁদ গুইন সহ নেতৃত্ব হাজির ছিলেন।
এদিনই জেলার চন্দ্রকোনা রোড সহ জেলায় ছয়টি স্থানে কৃষকদের জাঠা মিছিলে লাল ঝান্ডার উত্তাল স্রোত দেখা যায়। গড়বেতাতে কৃষক আন্দোলনের সংহতিতে মিছিল হলো এদিন। গড়বেতা তিন নম্বর ব্লকের চন্দ্রকোনা রোড এলাকায় সাত কিমি পথ ধরে কৃষক বিক্ষোভ হয়। চন্দ্রকোনা রোড ও গুহাদহ দুই এরিয়া কমিটির ডাকে কেন্দ্রীয়ভাবে এই কর্মসূচিতে হাজার হাজার কৃষক শামিল হোন। পার্টিনেতা বিজয় পাল, সুশান্ত ঘোষ, সনৎ চক্রবর্তী, অরবিন্দ ব্যানার্জি সহ পার্টি নেতৃবৃন্দ শামিল হোন। ডাবচা এলাকায় প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন বিজয় পাল, সুশান্ত ঘোষ সহ নেতৃবৃন্দ। দুই শাসকদল তৃণমূল ও বিজেপি যে আসলে বড়লোকের নীতিতেই সরকার চালাচ্ছে, দুই দলই জনবিরোধী কর্মসূচি নিচ্ছে তা উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, দুই দলকে পরাস্ত করে বাম ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির সরকারই পারে কৃষকের দাবিকে মান্যতা দিতে। এছাড়া জেলার খড়্গপুর গ্রামীণ ব্লকের বড়কোলা ও কলাইকুন্ডা, শালবনী, ঘাটালের দেওয়ানচক, সবং-এর ভেমুয়া, মনোহরপুর এমন গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায় ছটি জাঠা মিছিল শতাধিক বুথের মধ্য দিয়ে যায়। প্রতিটি স্থানে কৃষক রমণী ও খেতমজুর মহিলাদের অংশগ্রহণ ছিল নজরকাড়া।