বিদ্যুতের মাশুল নিয়ে প্রতিবাদ দেখানোয় সিপিআই(এম) কর্মীদের মার পুলিশের
-
গণশক্তির প্রতিবেদন
- Jan 15, 2021 21:33 [IST]
- Last Update: Jan 15, 2021 21:33 [IST]
নিজস্ব প্রতিনিধি:কলকাতা,১৫ জানুয়ারি- বিদ্যুতের দাম কমানো, মহামারীর আবহে গরিব মানুষের জন্য বিদ্যুৎ বিল মকুবের দাবি তোলায় ,সিপিআই( এম) কর্মীদের ওপর নৃশংস হামলা চালালো মমতা ব্যানার্জির দলদাস পুলিশ।পুলিশের হামলায় আক্রান্ত হয়েছেন বহু সি পি আই ( এম) কর্মী সমর্থক।মাথা ফেটেছে অনেকর, পুলিশের লাঠির আঘাতের দগদগে চিহ্ন রয়েছে শরীরে।আক্রান্ত শরীর নিয়েও পাল্টা প্রতিরোধ ও গড়ে তুলেছেন সিপিআই(এম) কর্মীরা।ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার কলকাতা জুড়ে এলাকায় এলাকায় ধিক্কার মিছিল, সভা করবে সিপিআই(এম)। ধর্মতলায় সিইএসসি 'র দপ্তরের সামনের এই ঘটনা আবারও তুলে ধরলো তৃণমূল সরকারের মেকি গরিব দরদের ভাঁওতাবাজি।পাশাপাশি মানুষের স্বার্থে বামপন্থীদের লড়াই আন্দোলনের নাছোড়বান্দা জেদের সাক্ষী থাকলো শহর কলকাতা।মহামারির এই সময়ে মানুষের রুটিরুজির বেহাল দশা।কাজ হারিয়েছেন বহু মানুষ।দু'মুঠো জোগাড় করাই যখন দুস্কর, তখন সিইএসসির পাঠানো বিপুল অংকের বিদ্যুৎ বিল হাতে পেয়ে মাথায় হাত পড়ছে গরিব,মধ্যবিত্ত মানুষের।এই পরিস্থিতিতে মানুষের দুশ্চিন্তা লাঘবের দাবি - বিদ্যুতের দাম কমানো,মহামারীর আবহে ২০০ ইউনিটের কম বিদ্যুৎ ব্যবহারকারিদের বিল মকুব,এবং ইউনিট পিছু দাম কমানোর মতো মানুষের সুরাহার প্রশ্নের দাবিগুলি নিয়ে , শুক্রবার সিইএসসি'র দপ্তর ভিক্টোরিয়া হাউস অভিযান করেন সিপিআই( এম) কর্মী সমর্থক সহ কলকাতার বিভিন্ন অংশের মানুষজন।এদিন কলকাতার মহাজাতিসদন, সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার, এবং দক্ষিণ কলকাতার নেলসন ম্যান্ডেলা পার্ক থেকে তিনটি কেন্দ্রীয় মিছিল সংগঠিত করে ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে শামিল হন বহু মানুষ।বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম)'র পলিট ব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম, পার্টির কলকাতা জেলার সম্পাদক কল্লোল মজুমদার, সারাভারত গণতান্ত্রিক মহিলা রাজ্য সম্পাদিকা কনীনিকা ঘোষ,ফৈয়াজ খান,তরুণ ভরদ্বাজ, কৌস্তভ চ্যাটার্জি প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।বিক্ষোভ সমাবেশের পাশাপাশি দাবি গুলি নিয়ে সিইএসসি কর্তৃপক্ষকে ডেপুটেশন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সিপিআই(এম) নেতারা।চড়া বিদ্যুৎ বিল,মানুষের আর্থিক অবস্থার করুন হালহকিকত তুলে ধরে যখন মানুষের দাবির পক্ষে স্লোগান তুলছিলেন সিপিআই(এম) কর্মীরা ,তখন কোনও প্ররোচনা ছাড়াই আচমকা সিপিআই(এম) কর্মীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশ।চলে বেধড়ক লাঠিচার্জ।পুলিশের লাঠির আঘাতে আহত হন বহু পার্টি কর্মী।মহিলাদের ও রেয়াত করেনি তৃণমূলের দলদাস পুলিশ। কোন মহিলা পুলিশ ছাড়াই টেনে হিঁচড়ে মাটিতে ফেলে মারা হয়।পুলিশের আক্রমণের নৃশংসতা এতটাই ছিল যে পুলিশের হাতে থাকা শক্ত ডান্ডা ভেঙে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।কয়েকজন কর্তব্যরত পুলিশকে দেখা গেছে পার্টি কর্মীদের হাতে থাকা লাল ঝান্ডা কেড়ে নিয়ে তার লাঠি দিয়েও সিপিআই(এম) কর্মীদের আক্রমণ করতে।এতদসত্ত্বেও মানুষের সমস্যা লাঘবের দাবিতে বুক চিতিয়ে রাস্তার দখল নিয়ে রাস্তায় থেকেছেন সিপিআই(এম)কর্মীরা।পুলিশি হামলার ধিক্কার জানিয়ে পার্টির কলকাতা জেলার সম্পাদক কল্লোল মজুমদার বলেছেন-আমাদের দাবি গুলি আদতে হাজার হাজার গরিব মানুষের দাবি।মহামারীর এই সময়ে আর্থিক সঙ্কটে জেরবার মানুষের দাবি।মানুষের সেই দাবির প্রতি সোচ্চার হয়েছেন পার্টির কর্মীরা।তা ভন্ডুল করতে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে যে হামলা পুলিশ চালালো তা আদতে গরিব,মধ্যবিত্ত মানুষের জীবন যন্ত্রণা লাঘবের দাবির ওপর হামলা, গরিব মানুষের ওপর আক্রমণ।ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার কলকাতা জুড়ে এলাকায় এলাকায় প্রতিবাদ সভা,মিছিল করার জন্য মহানগরের মানুষের কাছে আবেদন করেছেন কল্লোল মজুমদার।লকডাউন, মহামারী সবটা মিলিয়ে করোনা সংক্রমণের এই সময় কালে গরিব,মধ্যবিত্ত, নিম্ন বিত্ত মানুষের জীবন জীবিকায় নেমে এসেছে নিদারুণ সঙ্কট।বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন।বন্ধ রোজগার।সংসারের খাই খরচ চালাতে যখন কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ, তখন চাল,ডাল,আলু,তেল নুন থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের আকাশছোঁয়া দাম খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকাকেই দুস্কর করে তুলেছে।এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের মোটা অংকের বিল হাতে পেয়ে নাভিঃশ্বাস ওঠার জোগাড় হয়েছে গরিব মধ্যবিত্ত মানুষের।করোনা মহামারীর কারনে লকডাউন পর্বে গত বছরের এপ্রিল থেকে জুন,তিন মাসের মিটার রিডিং না দেখার অজুহাতে সিইএসসি গড় হিসাবে একটা মোটা অংকের টাকার বিল গ্রাহকদের পাঠায়।যা দেখে চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার জোগাড় হয় গ্রাহকদের।দেখা যায় যে পরিবারের মাসে বিদ্যুৎ বাবদ বিল আসে ১০০০-১২০০ টাকার মধ্যে, সেই পরিবার গুলির হাতে তিনমাসের গড় বকেয়া বিলবাবদ দশ হাজার টাকার বেশি মূল্যের বিল পাঠানো হয়েছিল।সিইএসসি'র এই কষাই সুলভ আচরণের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ বিল প্রত্যাহারের দাবি নিয়ে ধারাবাহিক আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়েছিল বামপন্থীরা।আন্দোলনের চাপে সিইএসসি একবারে সেই বিলের টাকা না নেওয়ার কথা বলে,বলা হয় ধাপে ধাপে নেবে।এক ই সঙ্গে মহামারীর আবহে ২০০ ইউনিটের কম বিদ্যুৎ ব্যবহারকারি পরিবারের বিদ্যুৎ বিল মকুবের যে দাবি সিপিআই(এম) ধারাবাহিক করে আসছে, সে বিষয়ে আলাপ আলোচনার আশ্বাস দেওয়া হয়।কিন্তু সে আশ্বাস পূরণতো দুরঅস্ত, উপরন্তু বর্তমান সময়ে প্রতিমাসে মোটা অংকের বিল পাঠানো হচ্ছে ।এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার বিদ্যুতের মাশুল কমানো,ইউনিট পিছু দাম কমানো এবং ২০০ ইউনিটের কম বিদ্যুৎ ব্যবহারকারিদের বিল মকুবের দাবিতে সিইএসসি'র দপ্তর ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সিপিআই(এম)'র কলকাতা জেলা কমিটি।সমাবেশে বক্তব্য রেখে মহম্মদ সেলিম বলেন- সরকার এবং কর্পোরেট,এক যোগে ফন্দিফিকির করে মানুষকে লুঠ করছে।তৃণমূলের এই দশ বছরে সিইএসসি'র মুনাফার পরিমাণ দেখলেই বোঝাযায় মানুষের নয়,বিদ্যুৎ বিলের মধ্যদিয়ে গোয়েঙ্কাদের কি পরিমাণ মুনাফা লুটতে সহায়তা করেছে তৃণমূল সরকার।মানুষের স্বার্থে বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বামফ্রন্ট সরকার যে সাবসিডি,পারস্পরিক ভর্তুকির মধ্যদিয়ে যে সুরাহার বন্দোবস্ত করতো তৃণমূল সেটা করছেনা কেন???প্রশ্ন তুলেছেন সেলিম।সেলিম বলেন বর্তমান সময়ে মানুষ একদিকে কর্পোরেট শোষণের জুলুম অন্যদিকে তৃণমূলের তোলাবাজি, চুরি, জচ্চুরি সহ নানা জুলুমের শিকার।এই দুই জুলুম থেকে নিস্তার পেতেই তৃণমূল এবং বিজেপি দুটো দলকেই এরাজ্যের মাটি থেকে সমূলে উৎখাত করতে হবে।গরিব মানুষের পকেট কাটার সিইএসসি'র অভিসন্ধির বিরুদ্ধে সরব হয়ে সেলিম হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন এভাবে বিদ্যুৎ বিলের মধ্যদিয়ে মানুষকে লুট চালাতে থাকলে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে রাষ্ট্রায়ত্ত করে গোয়েন্কাদের তাড়ানোর বিষয়ে ভাবতে হবে মানুষকে।এদিন দাবিগুলো নিয়ে সিপিআই(এম)কলকাতা জেলার পক্ষে দীপু দাস,শিবেন্দু ঘোষ,সুদীপ সেনগুপ্ত, সংগ্রাম চ্যাটার্জি, দেবেশ দাস সহ প্রতিনিধি দল সিইএসসি কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি দিয়েছেন।


শুক্রবার শহরের ৩ টে জায়গা থেকে শুরু হয় বামেদের বিক্ষোভ মিছিল। শেষ হয় ধর্মতলার ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে। সেখানে চলে অবস্থান বিক্ষোভ। ছিলেন সুজন চক্রবর্তী, মহম্মদ সেলিম-সহ অনেকেই। বিদ্যুতের দাম কমানো, মহামারীর আবহে ২০০ ইউনিটের কম বিদ্যুৎ ব্যবহারকারিদের বিল মকুবের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।