চিত্তরঞ্জন থেকে কলকাতা লঙ মার্চের সূচনা
-
গণশক্তির প্রতিবেদন
- Dec 01, 2019 00:46 [IST]
- Last Update: Dec 01, 2019 00:46 [IST]
চিত্তরঞ্জন থেকে কলকাতা লঙ মার্চের সূচনা। শনিবার সকাল সাড়ে দশটায় চিত্তরঞ্জন রেল কারখানা থেকে শুরু হয় এই লঙ মার্চ। এদিন পতাকা নেড়ে লঙ মার্চের উদ্বোধন করেন প্রবীণ শ্রমিক নেতা শ্যামল চক্রবর্তী। রয়েছেন কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন সহ গণ সংগঠনের নেতৃত্ব, এছাড়াও রয়েছেন আইএনটিইউসি’র নেতৃত্ব। সাত দফা দাবিকে সামনে রেখে এদিন কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশনগুলি এই লঙ মার্চের ডাক দিয়েছেন। এদিনের লঙ মার্চ চিত্তরঞ্জন কারখানা থেকে শুরু হয়ে ১৮ কিলোমিটার এগিয়ে দুপুরে বিশ্রাম নেয় সালান পুরে। এই ১৮ কিমি পথের মাঝে অসংখ্য মানুষ এই পদযাত্রাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। চিত্তরঞ্জন, রূপনারায়নপুর, জেমিরা এই রকম জায়গাগুলিতে রাস্তার দুই ধারে মানুষ এই লঙ মার্চকে সংবর্ধনা জানায়। সালান পুর থেকে মিছিল আসে লিয়াৎত পুরে মিছিল জড়ো হয়। সেখানে পুরুলিয়া থেকে আসে একটি জাঠা। এই দুটি জাঠা এবার মিলিত হলো। এখানেই হবে সমাবেশ। সভা শেষে আরো ১১ কিলোমিটার হেঁটে রাতে আসানসোলে পৌঁছাবে। সেখানেই রাত্রিবাস। রবিবার সকালে আসানসোল থেকে রওনা দিয়ে এই লঙ মার্চ রানিগঞ্জের দিকে যাবে।
দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষের লঙ মার্চ। বিজেপি ও তৃণমূল কতোটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তা মানুষ নিজ অভিজ্ঞতায় টের পাচ্ছেন। আসানসোল— দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল। মিনি ভারত। সারা দেশের মানুষ রুজিরুটির টানে এই ভূমিতে মিলিত হয়েছেন। কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই সরকার রুজিরুটি কেড়ে নেবার প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
শিল্পমালায় সজ্জিত এই শিল্পাঞ্চলে একটার পর একটা শিল্প বন্ধ। বামফ্রন্ট সরকার শিল্প শহরকে ছড়িয়ে দিয়েছিল পূর্বে কাঁকসা পর্যন্ত। পশ্চিমে সালানপুর কল্যাণেশ্বরী পর্যন্ত।
এখন প্রতিদিনই শিল্প শ্রমিক কাজ হারিয়ে বেকার বাহিনীতে পরিণত হচ্ছেন এই শিল্পাঞ্চলে। একে একে বন্ধ হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিওজিএল, এমএএমসি, এইচএফসিএল, বার্নস্ট্যান্ডার্ড রিফ্র্যাকটারি, বার্নস্ট্যান্ডার্ড ওয়াগন, বালকো, সাইকেল কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া, এইচসিএল সহ ২৩টি রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা। তৃণমূল সরকারও বিজেপি সরকারের থেকে কিছু কম যায়না। রাজ্য সরকারের সাড়া জাগানো কারখানা ডিপিএল'র কোকওভেন ইউনিট বন্ধ করে দিয়েছে। ডিপিএল'র স্পান পাইপ ইউনিট বন্ধ। ডিপিএল-কে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে। রাজ্য সরকার দুর্গাপুর কেমিক্যালস বিক্রি করে দিতে চায়। রাজ্য সরকারি সংস্থা দুর্গাপুর ডেয়ারি বন্ধ। শ্রমিকরা শিল্পের স্বার্থে রুজিরুটির স্বার্থে আন্দোলন করলে তৃণমূল বাহিনীর গুন্ডাদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে।
ইসিএল-এ ১৭টি কয়লা খনি বন্ধ করে দিতে চাইছে। লড়াই জারি রেখেছে শ্রমিকরা। ২০১৭ সালের ২৩ মার্চ কর্তৃপক্ষ পারবেলিয়া, সোদপুর, বেজডি, ধেমোমেন, নিংঘা, ময়রা, জেমারি, কুমারডি ও রতিবাটি কোলিয়ারি বন্ধ করা হবে বলে নোটিস ঝুলিয়ে দেয়। আন্ডারগ্রাউন্ড খনি রাখা হবেনা, এমন কথা সোচ্চারে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বেসরকারি মালিকরা ঢুকে পড়েছে কয়লা ক্ষেত্রে। আউটসোর্সিং চলছে বেপরোয়াভাবে। কয়লাঞ্চল ধস-গ্যাস-আগুনের বিপদ নিয়ে রয়েছে। প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে এই বিপদ।
বেসরকারি ক্ষেত্রে ১৮টি কারখানা বন্ধ হয়েছে এই শিল্পাঞ্চলে। বেসরকারি লৌহ ও ইস্পাত উৎপাদনের কারখানা বন্ধ হয়েছে ৩১টি। চালু কারখানাগুলিতে শিফ্ট কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে শ্রমিক কমেছে।
তৃণমূল সরকার শ্রম আইন মানেনা। কোথাও ন্যূনতম মজুরি হার নেই। ফ্যাক্টরি ইন্সপেক্টারের পদ আছে কিন্তু কার্যকরি ভূমিকা নেই।
তৃণমূল সরকারের সর্বশেষ শ্রমিক বিরোধী শিল্প বিরোধী কাজের উদাহরণ দুর্গাপুর ডিপিএল। গত বুধবার শ্রম আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ডিপিএল কর্তৃপক্ষ ডিপিএল'র বন্ধ কোকওভেন ইউনিটের ৩১৩ জন শ্রমিকের হাতে স্থানান্তরের চিঠি ধরিয়েছে এবং তাদের ডিপিএল থেকে রিলিজও করে দেওয়া হয়েছে। জেলা শাসকের তত্ত্বাবধানে এরা বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে কাজে যোগ দেবেন। কয়েকজনকে আসানসোল নগরনিগমে, দুর্গাপুর নগরনিগমে বদলি করা হয়েছে। আসানসোল নগরনিগমে ২৫ জন কাজে যোগ দিতে গেলে তাদের জয়নিং দেওয়া হয়নি। নগরনিগম বলেছে আমরা নির্বাচিত সংস্থা। যারা বদলি হলেন, তারা সবাই কারখানার ডেজিগনেটেড শ্রমিক। কেউ ফিটার, কেউ ওয়েলডার, কেউ অপারেটার, কেউ গ্রেড ওয়ান দক্ষ শ্রমিক। এতোদিন মেশিন চালিয়ে এসেছেন। এদের সরকারি দপ্তরে যা খুশি কাজে বহাল করা হচ্ছে। এর প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে এবারের লঙ মার্চ।
লঙ মার্চে শামিল হবেন সর্বস্তরের শ্রমিকরা। শিল্প শহরের সর্বস্তরের মানুষ এগিয়ে এসেছেন। লড়াই মাথা তুলেছে। রুজিরুটি কেড়ে পেটে লাথি মারা হচ্ছে। কাঁহাতক চুপ করে থাকা যায়। আক্ষরিক অর্থেই এ লড়াই বাঁচার লড়াই।