হেলমেটধারী লোক দেখলেই আতঙ্ক বউবাজারে
-
নিজস্ব প্রতিনিধি
- Sep 09, 2019 11:07 [IST]
- Last Update: Sep 09, 2019 03:00 [IST]
কলকাতা, ৮ সেপ্টেম্বর— মাথায় হেলমেট, পায়ে গামবুট পরা মেট্রোর লোকজনকে ঘুরতে দেখলেই ঘুম ছুটছে বউবাজারবাসীর। উদ্বিগ্ন মানুষের মনে তৈরি হচ্ছে প্রশ্ন। তবে কি এবার আমাদের ঘর ছাড়ার পালা? এমনই উদ্বেগের বহিপ্রকাশ হলো রবিবার সকালে গোয়েঙ্কা কলেজের কন্ট্রোল রুমের সামনে। রামকানাই দত্ত লেন, মদন দত্ত লেন, হিদারাম ব্যানার্জি লেনের বাসিন্দারা মেট্রোর লোকজনকে ঘুরতে ও ছবি তুলতে দেখেই আতঙ্কিত হয়ে কন্ট্রোলের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। তাঁদের বাড়ির কী অবস্থা? সেখানেও মাটির নিচে কি মেট্রোর কাজ হয়েছে? জানাতে হবে কর্তৃপক্ষকে বলে দাবি করেন। মেট্রো অবশ্য বিক্ষোভকারীদের ম্যাপ দেখিয়ে জানায় তাঁরা নিরাপদ।
শনিবারও মেট্রো জোর কদমেই চালালো বাড়ির ফাটল মেরামতি গ্রাউটিংয়ের কাজ। সঙ্গে বেশ কিছু ঘরছাড়া বাসিন্দাকে দেখা গেল তাঁরা পুলিশের উপস্থিতিতে নিজেদের বাড়ি থেকে আসবাবপত্র সহ অন্যান্য পড়ে থাকা জিনিস বের করে সাময়িক আস্তানায় নিয়ে যাচ্ছেন। মেট্রোর ঘণ্টায় ঘণ্টায় মতের বদলের জেরে দিশাহারা অবস্থা তৈরি হওয়াতে শনিবারই কিছু মানুষ বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। বউবাজারের ধসের ঘটনায় গোটা এলাকায় কীরকম আতঙ্কে আছেন মানুষ তারই বহিঃপ্রকাশ এদিনের বিক্ষোভ। শনিবার বেশ কয়েক বার মেট্রোর ইঞ্জিনিয়ার কর্মীরা বিপর্যস্ত এলাকার আশপাশের গলি রামকানাই দত্ত লেন, মদন দত্ত লেন ও হিদারাম ব্যানার্জি লেনে গিয়েছিলেন। তাঁরা বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও তোলেন। আর এই ঘটনায় কার্যত মনে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে এই এলাকার বাসিন্দাদের। মদন দত্ত লেনের বাসিন্দা এক বিক্ষোভকারী বলেন, ঘটনার পর দিন থেকেই শুনে আসছি রাত নেই দিন নেই যে কোনও সময় মেট্রোর লোকজন এসে নোটিস দিয়ে ঘরছাড়া করে দিচ্ছেন। আমাদের পাশের তিনটে পাড়া প্রায় মানুষ শূন্য। শনিবার থেকে বেশ কয়েকবার আমাদের পাড়ায় সব মেট্রোর লোকজন এসেছে। মাথায় হেলমেট ও পায়ে গামবুট পড়া সব। ওঁরা বেশ কিছু ছবি তুলেছে। আমাদের তখন থেকে মনে ভয় করতে শুরু করেছে। আমাদের বাড়িটাও কি বিপদের মুখে!
এদিন সকালে বিক্ষোভ শুরু হলে স্থানীয় কাউন্সিলর ঘটনাস্থলে আসেন। তাঁকে বিক্ষোভকারীরা বলেন, আমাদের বাড়ির কেন ছবি তোলা হলো? আমাদের বাড়িও কি তবে নিরাপদ নেই? ঘর ছাড়তে হবে? এমন নানা প্রশ্ন কাউন্সিলরের উদ্দেশ্য ছুঁড়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। কাউন্সিলর কেএমআরসিএল কর্তৃপক্ষকে ডেকে দেন। কেএমআরসিএল এর চিফ ইঞ্জিনিয়ার বিশ্বনাথ দেওয়ানজি বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের এলাকার ম্যাপ এনে দেখান। তিনি জানান, আপনাদের বাড়ি নিরাপদ আছে। নিচে কোনও কাজ হয়নি। তবে এর বড় বিপর্যয় হয়েছে তার কোনও প্রভাব পড়েছে কি না তাই পরীক্ষা করা হচ্ছে। মেট্রোর এক আধিকারিক জানান, সুড়ঙ্গের ৩০মিটার আশপাশের এলাকার মধ্যে যেসমস্ত বাড়ি আছে সেগুলিতেই প্রভাব পড়তে পারে তার বাইরে নয়। এদিন গৌর দে লেন থেকে ৭টি বেশি বাড়ি খালি করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘরছাড়া বাসিন্দাদের সংখ্যা রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বেড়ে হয়েছে প্রায় ৭৫০জন। এই বিক্ষোভ সামাল দেওয়ার পর এমজি রোডে একটি হোটেল থেকে ঘরছাড়া বেশ কিছু বাসিন্দা এসে কেএমআরসিএল’কে হোটেলের খাওয়া দাওয়া নিয়ে অভিযোগ করেন। মেট্রোর জিএম(প্রশাসনিক) একে নন্দী জানান, আমরা লোক পাঠাচ্ছি হোটেলে। কী সমস্যা তা দেখে হোটেল কর্তৃপক্ষকে সমাধান করার নির্দেশ দেব। আরও এক আধিকারিকের দাবি, এই সুযোগে ব্যবসা করছে হোটেলগুলো। মানুষের পরিস্থিতি বোঝা উচিত। সোমবার থেকে দুর্গা পিথুরি লেন, স্যাঁকরা পাড়া লেনে ভেঙে পড়া বেশ কিছু বাড়ি কেএমআরসিএল ইঞ্জিনিয়াররা পরীক্ষা করে ভাঙার কাজ শুরু করবে বলে জানা গেছে।