নির্বাচনে অস্বচ্ছতা
-
-
- Jul 06, 2020 13:18 [IST]
- Last Update: Jul 06, 2020 13:18 [IST]
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচন একটি স্বচ্ছ ও সর্বজনীন প্রক্রিয়া। জনমতের যথাযথ প্রতিফলনের মধ্যেই এই প্রক্রিয়ার সার্থকতা। কিন্তু যদি নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বাধাপ্রাপ্ত হয়, নাগরিকদের স্বাধীন মতামত প্রকাশের সুযোগ সঙ্কুচিত হয় তাহলে জনপ্রিতিনিধি নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে কখনোই গণতান্ত্রিক বলা যাবে না। ভারতে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের যে পদ্ধতি চালু আছে তার লক্ষ্য নির্বাচনকে যথাসম্ভব স্বচ্ছ করা এবং নাগরিকদের মত প্রকাশের অবাধ অধিকার নিশ্চিত করা। যদিও ক্ষমতালোভ ও রাজনৈতিক অসততা এই প্রক্রিয়াকে বিপর্যস্ত করার চেষ্টা করে তথাপি গণতন্ত্রকে রক্ষার শক্তি এখনো নির্মূল হয়নি। ক্ষমতাসীনরা বা শাসকরা সদা চেষ্টা করে জনমতকে তাদের অনুকূলে নিয়ে আসতে। স্বাভাবিকভাবে তা সম্ভব না হলে তারা সরকারি ক্ষমতাকে নিজেদের অনুকূলে ব্যবহার করে। পুলিশ ও আমলাদের ব্যবহার করে অসৎ উপায়ে জয় ছিনিয়ে নিতে। একাজেও যখন জয় নিশ্চিত করা যায় তখন নির্বাচনী বিধি পরিবর্তন করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সঙ্কুচিত করার চেষ্টা করে। মোদী সরকারের কাজে এই প্রবণতা স্পষ্ট লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একটার পর একটা আইন সংশোধন করে নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতাকে আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে।
নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে দলীয় তহবিলের জন্য টাকা তোলার ব্যবস্থা করেছে মোদী সরকার। ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কর্পোরেট তন্ত্রের সঙ্গে মিলিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে অধিকার দেওয়া হয়েছে বাজার থেকে টাকা তোলার। এই টাকার দাতাদের পরিচয় গোপন রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে আইনে। অর্থাৎ কালো টাকার কারবারিরা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে গ্রাস করার সুযোগ পেয়ে গেছে। তেমনি বৃহৎ পুঁজিপতিরা গোপনে তাদের অনুগামী নেতা বা দলকে যথেচ্ছ টাকা দিয়ে ক্ষমতাসীন হবার সুযোগ করে দিতে পারছে। কর্পোরেট অর্থে বলীয়ান হয়ে বড় দলগুলি বিশেষ করে কর্পোরেট স্বার্থরক্ষাকারী দলগুলি প্রচারে ঝড় তুলে জয়ের রাস্তা প্রশস্ত করতে পারছে। কর্পোরেটের অর্থে ক্ষমতায় এসে তারা যে কর্পোরেটের সেবা করবে তার সবচেয়ে জ্বলন্ত উদাহরণ মোদী সরকার। জনগণের জন্য ঢালাও হিন্দুত্ব, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, জাতপাতের ঘৃণা এবং দেশপ্রেম বিলিয়ে এই সরকার কর্পোরেট লুটের যাবতীয় বন্দোবস্ত করে চলেছে।
এই সরকারই এখন নির্বাচনী বিধি বদল করে ৬৪ বছরের বেশি বয়স্ক মানুষের জন্য পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে। আর এটা করা হচ্ছে গণতান্ত্রিক পথে আলোচনা ছাড়া একতরফাভাবে নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে নতুন কিছু নিয়ম করার আগে সব দলের মতামত নেওয়া বরাবরের রীতি। মোদী সরকার সেই ব্যবস্থা বাতিল করে নিজেদের মতো করে নিয়ম চালু করতে চাইছে শাসকদলের সুবিধার জন্য।
নির্বাচনে ভোটাররা সকলের সামনে নিজে এসে ভোট দেবেন সেটাই সবচেয়ে স্বচ্ছ ব্যবস্থা। কিন্তু পোস্টালে ভোটের ক্ষেত্রে নজরদারির কোনও সুযোগ নেই। বয়স্ক ভোটার নিজের ভোট নিজে দিচ্ছেন তার কোনও নিশ্চয়তা থাকবে না। অর্থাৎ শাসক দল প্রশাসনকে ব্যবহার করে এবং পেশি শক্তির জোরে ভোট নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসতে পারে। সরকারি কর্মী, পুলিশ বা নিরাপত্তারক্ষীদের যারা নির্বাচনী দায়িত্বে থাকেন তাদের জন্যই পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থা। বিকল্প নেই বলেই তা করতে হয়। তাতেও বিস্তর কারচুপির অভিযোগ মেলে। এখন ৬৪ ঊর্ধ্ব সকল প্রবীণ ভোটারদের যদি পোস্টাল ব্যালটের আওতায় আনা যায় তাহলে কারচুপি করে বহু ক্ষেত্রে জয় নিজেদের অনুকূলে আনা যায়। মোদী সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নির্বাচন প্রক্রিয়ায় এই অস্বচ্ছতা চালু করতে চাইছে। গণতান্ত্রিক জনগণ এই অসৎ উদ্দেশ্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবেন এটাই স্বাভাবিক।