বারংবার অভিযোগ সত্ত্বেও গ্রেপ্তার করা হয়নি কেডি-কে: সেলিম
-
-
- Jan 16, 2021 11:44 [IST]
- Last Update: Jan 16, 2021 11:44 [IST]
তৃণমূলের সাংসদ থাকা অ্যালকেমিস্টের কেডি সিং’কে যথাসময়ে গ্রেপ্তার না করে এখন নির্বাচনের মুখে কেন্দ্রীয় সরকার নাটক করছে বলে অভিযোগ করলেন সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম। শুক্রবার তিনি বলেছেন, এই গ্রেপ্তারি যতটা সামান্য, ততোটাই বিলম্বিত। আমি সাংসদ থাকাকালীন ২০১৫ সালে এবং ২০১৬ সালে যথাক্রমে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীকে চিঠি দিয়ে কেডি সিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলাম। তখন গ্রেপ্তার করলে লুটের টাকা পাচার করতে পারত না, প্রতারিতদের টাকা ফেরত দেওয়া অনেক সহজ হতো। ভাইপো কেডি সিংয়ের জামাই বলে ব্যবস্থা নেননি?
রোজভ্যালির মালিক গৌতম কুন্ডুর স্ত্রী শুভ্রা কুন্ডুকে গ্রেপ্তারি এবং তারপরেই রোজভ্যালিকাণ্ডে নাম ওঠা তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়ের দলবদলের ইঙ্গিত সম্পর্কে সেলিম একথাও বলেছেন, সারদাকাণ্ডের পরে চিট ফান্ড লুট প্রকাশ্যে এসে যাওয়ার পরেও মমতা ব্যানার্জি এবং মোদীর সরকার এই সব চিট ফান্ড সংস্থাকে মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলতে দিয়েছে। আমরা দাবি করা সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এখন বিজেপি’তে যোগদান করানোর জন্য নির্বাচনের আগে লোক দেখানো নাড়াচাড়া হচ্ছে। মাথা ধরা হচ্ছে না কেন?
সেলিমের দাবি, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন লালুপ্রসাদ যাদবকে যে অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল সেই একই অভিযোগে মমতা ব্যানার্জি ও মুকুল রায়কে গ্রেপ্তার করা উচিত। প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় করে রেখে চুরিতে সাহায্য করেছিলেন তাঁরা। ভাগ নেওয়া প্রশ্ন তো পরের কথা, স্রেফ এই অভিযোগেই এখনই সিবিআই’র উচিত মমতা ব্যানার্জির দুয়ারে হাজির হওয়া।
কেডি সিং যখন রাজ্যসভায় পদত্যাগ করে নতুন করে তৃণমূলের প্রতীকে এরাজ্য থেকে রাজ্যসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন, তারপরে মহম্মদ সেলিম ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তারির দাবি করেছিলেন। সেলিম বলেন, সেই সময়ে পশ্চিমবঙ্গের কোনও থানা থেকে শুরু করে পুলিশ সুপারের অফিস পর্যন্ত ঘুরে ঘুরেও চিট ফান্ড প্রতারণার অভিযোগে কেউ এফআইআর করতে পারতেন না। রাজ্য সরকারের নির্দেশ ছিল এফআইআর না নেওয়ার। শেষপর্যন্ত ঝাড়খণ্ডের একটি আদালতের নির্দেশের ভিত্তিতে কেডি সিংয়ের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছিল। তার ভিত্তিতে আমি অর্থমন্ত্রী জেটলি এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীকে চিঠি দিয়েছিলাম। কলকাতা এবং দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করে সব অভিযোগ প্রকাশ্যে জানিয়েছিলাম। কিন্তু সেদিন মিডিয়া আমাদের কথা ব্ল্যাকআউট করেছিল তৃণমূল আর বিজেপি’র নির্দেশে। আর কেন্দ্রীয় সরকারের ইডি, সেবি, সিবিআই, কোম্পানি অ্যাফেয়ার্স দপ্তর কেউ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। রাজীব কুমারের মতো অফিসারদের মমতা ব্যানার্জি যেভাবে ব্যবহার করেছেন সেভাবেই কেন্দ্রীয় সরকারও কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোকে ব্যবহার করেছে। কেবল নিজেদের রাজনৈতিক লক্ষ্যপূরণের জন্য নজরদারি করিয়েছে। তারপরে জেরায় ডাকার নাম করে বিজেপি’তে যোগ দিতে বলেছে।
সেলিম জানান, সেই সময়ে সংসদে একদিন এক তৃণমূল সাংসদ আমাকে কফি খেতে ডাকলেন। গিয়ে দেখি সেখানে কেডি সিং’কেও ডাকা হয়েছে। কেডি সিং সেদিন আমাকে বলেছিলেন, ‘আপনি অ্যালকেমিস্টের বিরুদ্ধে বারবার চিঠি দিচ্ছেন কেন? এতে আপনার কোনও লাভ হবে না, কিন্তু আমাকে বারবার টাকা দিতে হচ্ছে। তার চেয়ে আপনারাও তো নির্বাচনে লড়েন, আপনাদের কোনও সাহায্য লাগলে বলুন।’ সাংবাদিকদের সেলিম জানিয়েছেন, আমি তাঁকে বলেছিলাম, আপনি বাংলার ভেজালদের দেখেছেন। বাংলার প্রকৃত সংস্কৃতিকে এখনও দেখেননি। আমাদের সওদা করা যায় না। সেই চেষ্টা করে লাভ হবে না।
সেলিম বলেন, এই কেডি সিং’কে একশো কোটি টাকার বিনিময়ে তৃণমূল রাজ্যসভায় সাংসদ করেছিল, সেই পদ ব্যবহার করে তিনি বাজার থেকে টাকা তুলেছিলেন, কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোর থেকে সুরক্ষা পেয়েছিলেন, নিরাপদে সম্পত্তি পাচার করেছেন। এই লুটেরাদের শাস্তি তৃণমূল এবং বিজেপি কেউই দেবে না। জনগণকেই সক্রিয় হতে হবে যাতে এদের নিঙড়ে টাকা আদায় করা যায়।