উলটো চিকিৎসা
-
-
- Oct 10, 2019 13:10 [IST]
- Last Update: Oct 10, 2019 03:00 [IST]
অর্থনীতির দুরবস্থার সময় মোদী সরকারের অন্যতম প্রধান দাওয়াই হিসাবে বার বার সামনে আসছে সুদের হার কমানো। গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে পরপর সুদের হার কমানোর পর অর্থনীতিতে তার কোনও সুফল লক্ষ্য করা না যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই দাওয়াই সম্পর্কে পুনর্বিবেচনা জরুরি হয়ে পড়ে। হিন্দুত্বের অন্ধ বিশ্বাসের মতো এখানেও সরকারের বিশ্বাস সুদের হার কমলেই অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। তাই চোখ বুজে পঞ্চম বারেই সুদ কমানোর ব্যবস্থা হয়েছে। অর্থনীতির সাধারণ জ্ঞান বলে নেতিয়ে পড়া অর্থনীতিকে মূল স্রোতে গতিশীল করতে সুদের হার কমানোর ভূমিকা থাকলেও সেটা নেহাতই কম। ভারতের অর্থনীতি বর্তমানে যে চাহিদা মন্দার সঙ্কটে জীর্ণ তাকে চাঙ্গা করতে হলে নিছক সুদের হার কমালেই চলে না। দরকার তার সঙ্গে আরও অনেকগুলি পদক্ষেপ। অথচ সরকার প্রধানত ঘাড় গুঁজে আছে সুদের হার কমানোর মধ্যেই। একই দাওয়াই কাজ না করলে, উলটে রোগের অবনতি ঘটলে যে কোনও ডাক্তারই দাওয়াই বদলায় এবং চিকিৎসার পথ বদলায়। এখানে সরকার ৮ মাস ধরে সুদের হার কমিয়ে চলার পর অর্থনীতির কোনও উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। এরপরই ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে আগামী দিনেও সুদের হার কমতে পারে।
এতদিন ধরে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বলে আসছে ২০১৯-২০ সালে বিকাশের হার হবে ৬.৯ শতাংশ। বাজেট বক্তৃতার সময়ও অর্থমন্ত্রী ৭ শতাংশ বৃদ্ধির উজ্জ্বল ছবি এঁকেছেন। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এখন জানাচ্ছে বৃদ্ধির হার হবে ৬.১ শতাংশ। এক ঝটকায় ৬.৯ শতাংশ থেকে ৬.১ শতাংশ? এক ধাক্কায় পূর্বাভাস এতটা কমানোর নজির বিরল। বৃদ্ধির হার এতটা কমলে তার বড়সড় ধাক্কা সকলকেই কিছুটা নাড়া দিত। বাস্তবে তেমনটা হয়েছে বলে মনে হয় না। এই সম্ভাব্য পতন ধারাবাহিকভাবে চলছে। আগে সেই সত্যকে গোপন করে উজ্জ্বল ছবি দেখানোর জন্য সম্ভাব্য বৃদ্ধির হার বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। গত আট মাস ধরেই সচেতনভাবে এই লুকোচুরি খেলা হয়েছে। অথবা এই সময়ে অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি ও প্রবণতা নিয়ে সমীক্ষা-বিশ্লেষণ কিছুই হয়নি। তাই অর্থনীতির হাল হকিকত জানা ছিল না। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দক্ষতা যে নিম্নগামী এই ঘটনা থেকেই আঁচ পাওয়া যাচ্ছে।
বারবার দাবি করা হচ্ছে সুদের হার কমলেই নাকি বাজারে নগদের জোগান বাড়বে। মানুষ বাজারে কেনাকাটার জন্য হামলে পড়বেন। অন্যদিকে সুদের হার কমলে শিল্পপতিরা সস্তায় ব্যাঙ্ক ঋণ পাবে। তারা ঢেলে বিনিয়োগ করবে। বাস্তবে তার কিছুই হয়নি। শিল্পে বিনিয়োগ যেমন বাড়েনি তেমনি কেনাকাটাও বাড়েনি। সুদের হার কমলেই মানুষ বেশি বেশি পণ্য পরিষেবা কিনবেন তার কোনও যুক্তি নেই। মানুষের আয় বাড়লেই চাহিদা নিশ্চিতভাবে বাড়ে। আর যদি পণ্য পরিষেবার মূল্য কমে তবে কিছুটা চাহিদা বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। সুদ কমলে মানুষের কেনার আগ্রহ তখনই বাড়ে যখন তারা নিশ্চিত হন তাঁদের আয় বাড়বে। এখন সর্বত্র কাজ হারানোর আতঙ্কের মধ্যে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে পণ্য কেনার মতো নির্বোধ মানুষ পাওয়া দুষ্কর। তাছাড়া নতুন কাজ তৈরি হবার ফলে নতুন ক্রেতাও তৈরি হচ্ছে না। এই অবস্থায় সুদের হার কমানোর দাওয়াইয়ে যে কোনও কাজ হবে না তাতে সন্দেহ নেই। তাছাড়া সুদের হার কমার নেতিবাচক প্রভাবই কম নয়। অবসরপ্রাপ্ত ও বয়স্কদের সীমিত আয় সুদের হারের ওপর নির্ভরশীল। সুদের হার কমা মানে তাদের আয় কমা, ক্রয়ক্ষমতা কমা। চাহিদা মন্দায় তার প্রভাবকে খাটো করে দেখা ঠিক নয়।
সুদের হার কমার পাশাপাশি অপর যে পদক্ষেপগুলি সরকার নিয়েছে তার কোনোটিই মানুষের রুজি বৃদ্ধি বা ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়। সবকটিই কর্পোরেটকে আর্থিক সুবিধা করে দেবার জন্য। কর্পোরেট কর হার কমানো, প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগে বিপুল ছাড়। রপ্তানিতে ছাড়। কম সুদে আবাসন ঋণ ইত্যাদি তার অন্যতম। তাছাড়া ঋণে ছাড়, সুদে ছাড়, কর মকুব ইত্যাদিও আছে। সব ক’টি পদক্ষেপই মালিকদের সুবিধার জন্য। যেখানে চাহিদা বৃদ্ধির জন্য মানুষের হাতে অর্থের জোগান জরুরি সেখানে মালিকদের জন্য উজাড় করে টাকা ঢাললে বিকাশের হার আবার কমার আশঙ্কা বাড়ে।