রুজি বাঁচাতে সংযুক্ত মোর্চাই ভরসা শ্রীরামপুরের বাসিন্দাদের
-
গণশক্তির প্রতিবেদন
- Apr 07, 2021 20:45 [IST]
- Last Update: Apr 07, 2021 20:45 [IST]
সকালের পালা শেষ করে রাতের পালার সাইরেনের ভোঁ আজ আর শোনেন না শ্রীরামপুর ধর্মতলা এলাকার বাসিন্দারা। ইন্ডিয়া জুটমিল বন্ধ হয়েছে বছর তিনেক হল। বার বার শ্রমদপ্তরে দরবার হয়েছে, কিন্তু মিল খোলেনি। একটা একটা করে দীপ নেভার মতো বন্ধ হয়েছে কারখানা, জমি হাতবদল হয়েছে। তাই রুজি বাঁচাতে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীকেই ভোট দেবেন জানাচ্ছেন শ্রীরামপুর বিধানসভার শ্রমজীবী ও আবাসিক মানুষ।
শ্রীরামপুর ও রিষড়া পৌরসভা সহ রাজ্যধরপুর, রিষড়া পঞ্চায়েত এলাকা নিয়ে শ্রীরামপুর বিধানসভা কেন্দ্র। হুগলী নদীর পশ্চিম তীরে এর অবস্থান। বিস্তীর্ণ এই এলাকার ২৭২ টি বুথে দুই লক্ষ ছয় হাজারের মতো ভোটার আছেন। এখানকার তিনটি জুটমিলের ওপর বিধানসভা এলাকায় রুজি রুটি নির্ভর করে। কিন্তু এই তিনটি জুটমিলের মধ্যে দুটি জুটমিল দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। ইন্ডিয়া জুটমিল ও ওয়েলিংটন এই দুটি জুটমিল ছাড়াও দুটো পাটের সুতো কারখানা রয়েছে এই বিধানসভা এলাকায়। এর মধ্যে ইন্ডিয়া জুটমিল নিয়ে সম্প্রতি শ্রীরামপুরের তৃণমূল বিধায়কের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে একটি সম্পূর্ণ ভুল প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে বহুবিক্রিত দৈনিকে। ইন্ডিয়া জুটমিলের শ্রমিকরা এদিন জানান সংবাদমাধ্যম বিক্রি হয়ে গেছে। বিধায়ক সুদীপ্ত রায় যিনি পেশায় চিকিৎসক ও বটে কোনদিন ইন্ডিয়া জুটমিলের পাশে দাঁড়াননি। উল্টে তার দলের সাংসদ, কাউন্সিলর ও রাজ্য সরকারের মদতে মালিক সঞ্জয় কাজোরিয়ার সংস্থা মূরলীধর রতনলাল এক্সপোর্টস লিমিটেডকে ৯৩ বছরের লিজ পাইয়ে দিয়েছে। ওরা আমাদের কোয়ার্টার ভেঙে আবাসন বানাতে চাইছে। এবছর জানুয়ারিতে কলকাতার নিউ সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিং এ শ্রমমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বলা হয় পয়লা এপ্রিল থেকে কারখানা খোলা হবে। ১ এপ্রিল চলে গেলো, মিল চালু করবে বলে এখনও চালু করতে পারলোনা কর্তৃপক্ষ। শুধু ইন্ডিয়া জুটমিলই নয় রিষড়ার ওয়েলিংটন জুটমিল খোলা বন্ধ এই দোটানার মধ্য দিয়ে এতদিন চলছে। লকডাউনের পুরো সময় কারখানা বন্ধ থেকেছে। আগের বছরের জুলাইমাস থেকে চার বার সাসপেনশন অফ ওয়ার্কের নোটিস দিয়েছে মিল কর্তৃপক্ষ। আবার তারাই আন্দোলনের চাপে আগের নির্দেশ বাতিল করেছে। এই মিলের ২০০০ শ্রমিকের মধ্যে ১২০০ শ্রমিককে পুণর্বহাল করা হলেও ৮০০ জন শ্রমিকের ভাগ্যে জুটেছে শুধুই যন্ত্রণা। ৮০০ জন শ্রমিকের বেতন বন্ধ হয়েছে। তাই ইএসআই পিএফএর সুবিধে পাচ্ছেননা সেখানকার শ্রমিক ভাইয়েরা। সম্প্রতি মাদুরা কোট কারখানা বন্ধ হয়েছে। কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেখানকার ১৮৫ শ্রমিক এখন কাজহারা। কারখানার যন্ত্রপাতি সরিয়ে দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। বঙ্গলক্ষ্মী কারখানার ২১০ বিঘে জমি লিজ পেয়েছে কারখানার মালিক। রামপুরিয়া কারখানার ২৪০ বিঘে জমি লিজ দেওয়া হয়েছে। কারখানার জমিতে আবাসন তৈরি শুরু করার প্রক্রিয়া চলছে। কাটমানির লোভে সরকার শ্রমিকদের টুঁটি চেপে ধরেছে। কেন্দ্রীয় সরকার যেভাবে চারটি শ্রমকোড ঘোষণা করে শ্রমিকদের মারতে চাইছে তেমনি রাজ্য সরকারও শ্রমিকদের উচ্ছেদ করতে চাইছে দুজনের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।
শ্রমিক মহল্লা বাদ দিলে শ্রীরামপুর বিধানসভার এলকার বড় অংশই আবাসিক অঞ্চল। সেই অঞ্চলের বড় অংশ জুড়ে রয়েছে পৌরসভা। পৌরসভার একজন অস্থায়ী কর্মচারী জানান আমরা তো দেখছি শ্রীরামপুর পৌরসভায় অস্থায়ী কর্মচারীদের বেতন নিয়মিত হচ্ছেনা। আমরা লাগাতার আন্দোলন করছি যখন তখন শাস্তির খাঁড়া নামিয়ে আনছে পৌর কর্তৃপক্ষ। শ্রীরামপুর পৌরসভার অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরা জানান পেনশন হচ্ছেনা নিয়মিত। জিজ্ঞাসা করলে সঠিক উত্তর দিতে চাইছেনা বর্তমান পৌর প্রশাসন। শ্রীরামপুর ও রিষড়া পৌরসভায় স্বজন পোষন লাগামছাড়া দুর্নীতি তো ছিলোই এখন জুড়েছে পৌর কাউন্সিলরদের অস্বাভাবিক আয়। রিষড়া পৌরসভা এলাকায় তো বহু পার্ক ও মাঠ জঙ্গল ও কাঁটাঝোপে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। অনেক ক্ষেত্রেই সেই মাঠের সংস্কারই প্রায় হয়না। অন্যদিকে পৌরসভায় নিয়োগ নিয়ে লাগামছাড়া স্বজনপোষন ও আর্থিক লেনদেনের ঘটনা সামনে এসেছে। এখন এলাকায় কান পাতলে শোনা যাবে কোন কাউন্সিলরের কত কোটি টাকার সম্পত্তি। তাই শ্রীরামপুর বিধানসভা এলাকার অটো, টোটো, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, যারা তৃণমূলের তোলাবাজি, বিজেপি সরকারের জিএসটি ও মূল্যবৃদ্ধির ত্রিমুখী আক্রমণে বিপর্যস্ত তারাও বলেছেন একদলের উচ্ছিষ্ট নিজেদের দলে ভরছে বিজেপি। অন্যদিকে দূর্নীতির ঘড়া পূর্ণ করেছে তৃণমূল তাই বিজেপি-তৃণমূল নয় আমরা সংযুক্ত মোর্চার পাশেই রয়েছি।
সম্প্রতি বিধানসভা এলাকার সংযুক্ত মোর্চার কংগ্রেস প্রার্থী আলোকরঞ্জন ব্যানার্জি ধর্মতলায় মিল শ্রমিক মহল্লায় প্রচার মিছিল করছিলেন। মিল শ্রমিকরা প্রার্থীকে দেখে তাদের প্রত্যাশার কথা জানান। পেশায় আইনজীবী ও অল ইন্ডিয়া হ্যান্ডলুম সোসাইটির সদস্য প্রার্থী আলোকরঞ্জন ব্যানার্জি বলেন পাট একটা সম্ভাবনাময় শিল্প খাদ্যপণ্য ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের বস্তা তৈরি ছাড়াও পাট হ্যান্ডলুম শিল্পের অন্যতম কাঁচামাল। দেশে ও বিদেশে উন্নতমানের কাপড় তৈরিতে আজকাল পাটের মিশ্রিত সুতো ব্যবহার করা হচ্ছে। পাটের ব্যাগ এখন প্লাস্টিকের বিকল্প। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে প্রাকৃতিক তন্তু নির্মিত খাদির মোটা কাপড় আপন করে নিয়েছিলেন মানুষ। আমাদের পূর্বসূরিরা সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। পশ্চিমবঙ্গে সংযুক্ত মোর্চার সরকার তৈরি হলে সম্ভাবনাময় পাট শিল্পের আধুনিকীকরণ ও উন্নতির উদ্যোগ নেওয়া হবে। মানুষ তাদের প্রত্যাশা ও ভালোবাসায় চিনে নিয়েছেন তার সঠিক বন্ধু। তাই দিন দিন ভিড় বাড়ছে সংযুক্ত মোর্চার মিছিল ও সমাবেশে।