তল্লাশি কয়লা পাচারে, রেগে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী
-
-
- Dec 02, 2020 10:16 [IST]
- Last Update: Dec 02, 2020 10:16 [IST]
কয়লাকাণ্ডে আসাসনোলে ফের তল্লাশি সিবিআই’র। ইসিএলের আধিকারিকদের সঙ্গে রেখেই ঝটিকা তল্লাশি চালালো সিবিআই। কয়লা পাচারকাণ্ডে রীতিমতো তৎপর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা, দৃশ্যতই বেকায়দায় শাসক তৃণমূলও। এদিনই আবার আদালতের সম্মতি পেয়েই সারদা কেলেঙ্কারিতে একদা তৃণমূল নেতা ব্যবসায়ী আসিফ খানের কণ্ঠস্বরের নমুনা নেওয়ার জন্য তলব করে সিবিআই। অন্যদিকে এদিনই দুপুরে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক থেকে কেন্দ্রীয় এজেন্সির তৎপরতার বিরুদ্ধে পালটা সুর চড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, আমাদের বদনাম করার চেষ্টা, এজেন্সি লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তৎপরতায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, হাত চিরকূট ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, না মানা হলে জেলে পোরার হুমকি। যদিও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্রের পালটা দাবি, ‘কয়লা পাচারের তদন্ত রাজ্যের সহায়তা করা প্রয়োজন। কোটি কোটি টাকার রয়্যালটি হারাচ্ছে রাজ্য’। গত পনেরো দিনে আসানসোল, জামুড়িয়া, কাজোরা, রানিগঞ্জ, পুরুলিয়ায় তিন দফায় সিবিআই-আয়কর তল্লাশি চলে। উদ্ধার হয় বিপুল নথিপত্র। গত শনিবার কয়লা মাফিয়া অনুপ মাঝির বাড়ি, অফিস,একাধিক ঠিকানায় তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর নথি আসে সিবিআই’র হাতে।পুলিশ-প্রশাসন-ইসিএল-রেলের একাংশের আধিকারিকের আঁতাতের ছবি তাতে সামনে আসে। সিবিআই’র হাতে আসে লালার ভুয়ো সংস্থার মাধ্যমে কয়লার টাকা ঢুকেছে থাইল্যান্ডের অ্যাকাউন্টে। শাসক তৃণমূলের এক প্রভাবশালীর আত্মীয়ের অ্যাকাউন্ট সেটা। মিলেছে রীতিমতো নথি যাতে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে ফি মাসে ২৭-৩০ কোটি টাকা কলকাতায় শাসক দলের শীর্ষ মহলে পৌঁছাতো। এরপরেই তৎপরতা বাড়ছে সিবিআই’র, বেকায়দায় শাসক দল। মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠকেও সেই ছবি ধরা পড়ে।
মঙ্গলবার আসানসোল-সালানপুরে ইসিএলের বিভিন্ন দপ্তরে তল্লাশি চালায় সিবিআই। তল্লাশি অভিযানের সময় ইসিএলের ভিজিল্যান্স দপ্তরের আধিকারিকদেরও সঙ্গে নেয় সিবিআই। ইসিএলের একাধিক দপ্তর থেকে বিপুল নথি উদ্ধার হয়েছে। তদন্তের ক্ষেত্রে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবি করছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকরা। ইতিমধ্যেই বাজেয়াপ্ত নথি খতিয়ে দেখার জন্য আলাদা দল গড়েছে সিবিআই। একাধিক ইসিএল আধিকারিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কয়লা পাচারের তদন্তে ইসিএলের বেশ কয়েকজন আধিকারিকের বিরুদ্ধেও এফআইআর রুজু হয়েছে। যদিও একাধিক কেন্দ্রীয় সংস্থা তদন্তে নামলেও কয়লা মাফিয়া অনুপ মাঝি ওরফে লালা কোথায়? সে বিষয়ে কোনও কিছু জানাতে অস্বীকার করা হচ্ছে। কীভাবে এখনও ফেরার রয়েছে লালা? রাজ্য পুলিশের মদত নাকি কেন্দ্রীয় সংস্থার কোনও কৌশল এটা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যদিও একটি সূত্রের দাবি ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সংস্থার কাছে বেশ কিছু বয়ান দিয়েছে লালা। তার ভিত্তিতেও চলছে তদন্তের পরবর্তী ধাপ।
এদিকে কয়লা পাচারের তদন্তের মাঝেই ফের এদিন সারদা তদন্ত নিয়েও তৎপরতা দেখা যায় সিবিআই’র মধ্যে। এমনিতেই গত ছয় বছর ধরে তদন্তের শ্লথতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। স্বাধীনতার পরে পশ্চিমবঙ্গে সবথেকে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি- চিট ফান্ডকাণ্ড। শাসক তৃণমূল, সরকার জড়িত। একাধিকজন গ্রেপ্তার হয়েছে। তবুও সিবিআই’র তদন্ত প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতার জন্য অভিযুক্ত তৃণমূল নেতারা বহাল তবিয়তে বাইরে। এদিন সারদাকাণ্ডে কণ্ঠস্বরের নমুনা পরীক্ষার জন্য আসিফ খানকে তলব করা হয়।
সিবিআই’র হাতে আসে বেশ কয়েকটা অডিও ক্লিপিংস। তাতে সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে প্রভাবশালী একাধিকজনের কথাবার্তার প্রমাণ রয়েছে। সেই ভিত্তিতেই তালিকা তৈরি হয়। আদালত থেকে কণ্ঠস্বরের নমুনা পরীক্ষার অনুমতি মেলার পরে সিবিআই’র তরফে প্রথমেই আসিফ খানকে ডাকা হয়। দুপুরে সিজিও কমপ্লেক্সে আসেন তিনি। তবে এদিন পরীক্ষা হয়নি।
সারদা তদন্তে একাধিকবার ‘তথ্য’ দিয়ে সিবিআই’কে ‘সাহায্য’ করেছিলেন একদা মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী আসিফ খান। এমনকি মুকুল রায় যখন তৃণমূলে ক্ষমতাবান সেসময় এই ব্যবসায়ীকে তৃণমূলের উত্তর প্রদেশের পর্যবেক্ষক করে দেওয়া হয়েছিল। সেই আসিফ খানই সারদাকাণ্ডে তৃণমূলকে ‘সহযোগিতা’ করতেই রাজ্য পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তারও করেছিল। এমনকি খোদ মুখ্যমন্ত্রীকেও প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের সামনে আসিফ খান চিট ফান্ডকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগ করে ‘ডাকাতরানি’ বলেছিলেন।এমনকি আসিফ খানকে নিয়ে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ২০১৪ সালে শারদোৎসবের সময়ে সিঙ্গাপুরে গিয়েছিল নির্দিষ্ট তথ্যের সন্ধানে। এদিন সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বাইরে বেরিয়ে আসিফ খান জানান, আমি এসেছি সিবিআই ডেকেছে বলে। তদন্তে সহযোগিতা করছি। নিশ্চয়ই কোনও কারণে সিবিআই ফের এটি নিয়ে তৎপর হয়েছে। তবে টেকনিক্যাল কারণে আজ কণ্ঠস্বরের নমুনা পরীক্ষা হয়নি।
এদিকে এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় সংস্থা বনাম কলকাতা পুলিশের স্নায়ুযুদ্ধও শুরু হয়েছে। গত ২১ নভেম্বর তড়িঘড়ি পুলিশ কলকাতা থেকে একটি ভুয়ো চার্টার্ড ফার্মের মালিক গোবিন্দ আগরওয়ালকে গ্রেপ্তার করে। দু’দিনের মাথাতেই জামিন পেয়ে যায় এই প্রতারক চার্টার্ড অ্যাকাউন্টটেন্ট। এই চার্টার্ড অ্যাকাউন্টটেন্টকে নিজেদের হেপাজতে নিতে চাইছিল সিবিআই, আয়কর দপ্তর। গোরু-কয়লা পাচারের তদন্তে বিপুল টাকার বাজার থেকে উবে যাওয়ার তদন্তে কেন্দ্রীয় সংস্থা জানতে পারে এই ব্যক্তির নাম। এই ব্যক্তির সঙ্গে আবার গোরু পাচার কারবারের পান্ডা এনামুল হকের সংস্থার সঙ্গে যোগ আছে। তৃণমূল ঘনিষ্ঠ কয়লা মাফিয়া লালার বিপুল টাকা এই ব্যক্তির চার্টার্ড ফার্মের মাধ্যমে বিভিন্ন ভুয়ো সংস্থায় ঘুরে শাসক দলের শীর্ষ মহলে পৌঁছেছে। তবে সিবিআই’র আগেই কলকাতা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। এবার সেই গোবিন্দ আগরওয়ালকে জেরা করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এদিন কলকাতা পুলিশ আয়করের প্রাক্তন প্রিন্সিপাল চিফ কমিশনার বিশ্বনাথ ঝাঁ-কে লালবাজারে জেরা করে ঘণ্টাদেড়েক। আয়করের আরেক সাসপেন্ডেড আধিকারিক এমকে সিংকেও জেরা করতে পারে লালবাজার। সিবিআই’ও আবার এই আধিকারিককে জেরা করতে চাইছে।