পেহেলুকে কেউ খুন করেনি! অভিযুক্তই বেকসুর খালাস
-
-
- Aug 15, 2019 09:51 [IST]
- Last Update: Aug 14, 2019 09:51 [IST]
নয়াদিল্লি, ১৪ আগস্ট— পেহলু খানকে নাকি কেউই খুন করেনি! রাজস্থানের আলোয়ারের এক আদালত বুধবার পেহলু-খুনে অভিযুক্ত ছ’জনকেই বেকসুর খালাস করে দিয়েছে। স্বঘোষিত গোরক্ষকদের নির্মম অত্যাচারের সেই ভিডিও-কেও কার্যত নকল বলে দাবি করা হলো আদালতে। আর সেই দাবির ভিত্তিতে বিচারপতিও অভিযুক্ত ছ’জনকেই বেকসুর খালাস করে দিলেন। স্বঘোষিত গোরক্ষক, উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের ধর্মের নামে রামের নামে দেশজুড়ে তাণ্ডব চললেও বরাবর তা আড়াল করার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে গেরুয়া শিবির। বিজেপি’র হাত থেকে ক্ষমতা নিজেদের হাতে নিলেও রাজস্থানে কংগ্রেস সরকার যে একই পথে হাঁটছে তা ক’দিন আগেই টের পাওয়া গিয়েছিল। এবার কার্যত প্রমাণই হলো। অবশ্য সরকারি আইনজীবীর দাবি, উচ্চ আদালতে এই রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন জানানো হবে।
আলোয়ারের অতিরিক্ত জেলা বিচারপতি সরিতা স্বামীর এজলাসে এই বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হয় গত ৭ আগস্ট। এদিন ছিল রায় ঘোষণা। বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন অভিযুক্তদের পক্ষের আইনজীবী দাবি করেন, পিটিয়ে খুনের যে ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, তা গ্রহণযোগ্য প্রমাণ নয়। এই ভিডিও’র সিডি ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানোই হয়নি। যিনি এই ভিডিও করেছিলেন, তাঁর ফোনও আদালত পরীক্ষা করেনি বলেই দাবি করেন আইনজীবী হুকুমচাঁদ শর্মা। ফলে ভিডিওটি যে বিকৃত নয়, তার কী প্রমাণ আছে সেই প্রশ্নও তুলে দেন তিনি। বিচারব্যবস্থায় গাফিলতির অভিযোগ উঠলেও তাঁর এই সওয়ালের ভিত্তিতেই বিচারপতি সন্দেহের অবকাশে ছাড় দিয়ে দিলেন ছ’জন অভিযুক্তকেই। পেহলু খানের কীভাবে মৃত্যু হয়, তা নিয়েও দ্বন্দ্ব তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মারধরের ক্ষতই মৃত্যুর কারণ বলা হলেও সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারান।
স্বঘোষিত গোরক্ষকরা দুগ্ধচাষি পেহলু খানকে ট্রাক থেকে ঘাড় ধরে নামিয়ে পিটিয়ে খুন করে। সেই ভিডিওই ছড়িয়ে পড়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। ঘটনাটি দু’বছর আগের। তখন রাজস্থানে ছিল বসুন্ধরা রাজের নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার। পেহলু খান তাঁর মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে যে ছ’জনের নাম করেছিলেন, তাদের প্রত্যেককেই ক্লিনচিট দিয়েছিল রাজ্য পুলিশ। সমালোচনার মুখে পড়ে ফের তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। বিজেপি আমলেও যেভাবে পরোক্ষে দোষীদের সাজা মকুবের চেষ্টাই চালিয়ে যাওয়া হয়েছিল, একই ছবিই ঘুরে ফিরে আসছে। গত জুন মাসেই নিহত পেহলু খান এবং তাঁর দুই ছেলের বিরুদ্ধেই চার্জশিট দাখিল করে দেয় অশোক গেহলটের সরকার। তথাকথিত গো-রক্ষকদের হাতে বেধড়ক মার খেয়ে নিহত পেহলু খানের বিরুদ্ধে ঠিক যেভাবে পূর্বতন বিজেপি সরকার এফআইআর দায়ের করেছিল, সেই একই কায়দায়। উন্মত্ত গোরক্ষকদের হাতে মার খেয়ে প্রাণ হারান পেহলু খান। গুরুতর জখম হন তাঁর দুই ছেলে। পরে তাঁদের বিরুদ্ধেই দায়ের করা হয় গোরু চুরির অভিযোগ। ক্ষমতার পালাবদল হলেও সুবিচার পাননি পেহলুর পরিজনরা। পরিকল্পনামাফিকই এবার দোষীদের একেবারে বেকসুর খালাস করে দেওয়া হলো। যদিও এদিন সরকারি আইনজীবী যোগেন্দ্র খাতানা জানিয়েছেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে। এই আদালতের নির্দেশের কপি হাতে পেলেই উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে বলে জানান তিনি। মেয়ো সম্প্রদায়ভুক্ত পেহলু খানের খুনিরা মুক্ত হয়ে যাওয়ার বিরোধিতা করে মেয়ো পঞ্চায়েত প্রধান শের মহম্মদও এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এআইএমআইএম নেতা আসাদুদ্দিন ওয়াইসি কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘তাহলে এখন থেকে প্রত্যেককে বিশ্বাস করতে হবে যে পেহলু খানকে কেউ খুন করেনি! এই মিথ্যা কী করে বলা হবে ওঁর পরিবারকে?’’
এদিকে রাজস্থানের বিরোধী দলনেতা রাজ্যের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গুলাবচাঁদ কাটারিয়া এই রায়কে সমর্থন জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘আমরা আদালতকে সবরকম তথ্যপ্রমাণ দিয়ে সাহায্য করেছিলাম।’’ এই ছ’জন ছাড়াও আরও তিনজন অভিযুক্ত এই খুনের ঘটনায়। তারা নাবালক হওয়ায় জুভেনাইল আদালতে বিচার চলছে।
ঘটনাটি ২০১৭সালের এপ্রিল মাসের। জয়পুরের এক পশুহাট থেকে গোরু কিনে নিজের বাড়ি হরিয়ানার নুহ গ্রামে ফিরছিলেন ৫৫বছর বয়সি পেহলু খান। সঙ্গে ছিলেন দুই ছেলে আরিফ এবং ইরশাদ। মাঝপথে জয়পুর-দিল্লি জাতীয় সড়কে আলওয়ারে তাঁদের গাড়ি আটকায় তথাকথিত গোরক্ষকরা। গোরু পাচারের অভিযোগে চলে বেধড়ক মারধর। অভিযোগ, গোরু কেনার রসিদ দেখিয়েও কোনও লাভ হয়নি। অবশ্য পুলিশ সেইসময় দাবি করেছিল, তাঁদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় নথিপত্র ছিল না। মারধরের পর আহত অবস্থায় পেহলু খানকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই মারা যান তিনি। গুরুতর আহত হন তাঁর দুই ছেলেও। রাজস্থান পুলিশ সে সময় দু’টি এফআইআর দায়ের করে। প্রথম এফআইআরে আট জনের বিরুদ্ধে পহলুকে মারধরের অভিযোগ আনা হয়। দ্বিতীয় এফআইআরে অভিযোগ করা হয়, জেলা শাসকের বিনা অনুমতিতে পেহলু ও তাঁর দুই ছেলে গোরু পাচার করছিলেন। তবে ওই আট অভিযুক্তই পরে জামিন পেয়ে যায়। তারা এখন বহাল তবিয়তে ঘুরছে। দু’জন পুলিশের খাতায় এখনও নিখোঁজ।