পথ দেখাচ্ছে পড়ুয়ারা
-
নিজস্ব প্রতিনিধি
- Nov 26, 2019 15:45 [IST]
- Last Update: Nov 26, 2019 15:45 [IST]
কম খরচে শিক্ষার দাবিকে সামনে রেখে জেএনইউ ছাত্র-ছাত্রীরা যখন দিল্লির রাজপথে দাপিয়ে মিছিল করে সংসদ অভিযানে পা বাড়িয়েছিল তখন ছাত্রদের সেই স্পর্ধাকে অঙ্কুরে বিনাশ করতে পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে পৈশাচিক বর্বরতা নামিয়ে এনেছিল মোদী-শাহদের হিংস্র পুলিশ। ৫৬ ইঞ্চি ছাতির সরকারের পড়ুয়াদের এতই ভয় যে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে বেরিয়ে রাজপথে পা রাখতে না রাখতেই হায়নার মতো তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বিশাল সশস্ত্র পুলিশবাহিনী। জলকামান, বরার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস, সর্বোপরি পুলিশের লেঠেলবাহিনীর লাঠির বেপরোয়া আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত করে দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী পড়ুয়াদের। তাদের অপরাধ তারা কম খরচে সকলের জন্য শিক্ষার দাবিতে শাসকের চোখে চোখ রাখার সাহস দেখিয়েছে। সেদিন মোদী-শাহ’র পুলিশ বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে কয়েকশত পড়ুয়াকে। রাস্তায় ফেলে দাগী অপরাধীদের মতো আচরণ করেছে। ছাত্রীদের শ্লীলতা রক্ষার তাগিদও লক্ষ্য করা যায়নি। একটা সভ্য গণতান্ত্রিক দেশের রাজধানীতে একটি সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ওপর এমন ব্যবহার শুধু অন্যায় নয় অসভ্যতারই নামান্তর। গোটা দেশের সুস্থ বিবেক এর নিন্দা-ধিক্কার জানালেও বিস্ময়করভাবে নীরব ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। নীরবতার মধ্য দিয়ে অমিত শাহের পুলিশের এই হিংস্রতা ও বর্বরতাকে সম্ভবত সমর্থন করেছেন তিনি।
পাঁচদিন পর জেএনইউ’র পড়ুয়ারা বামপন্থী ইউনিয়নের উদ্যোগে বৃহত্তর আঙ্গিকে যখন সেই একই দাবিকে সামনে রেখে পার্লামেন্ট স্ট্রিটে হাজির হয় মিছিল করতে তখন মোদী সরকারের পুলিশের সাহস হয়নি সেই মিছিল আটকাবার। কারণ এই মিছিল শুধু জেএনইউ’র পড়ুয়াদের ছিল না। তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে দিল্লির অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের পড়ুয়ারাও। এসেছে পার্শ্ববর্তী রাজ্যের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। বাদ নেই শিক্ষক-অধ্যাপক-শিক্ষাকর্মীরা। ছাত্র, যুব, মহিলা, শ্রমিক, কৃষকের প্রতিনিধিরা পা মিলিয়েছেন। আইনজীবী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার এসেছেন মিছিলে। সমাজের বিশিষ্টজনেরা এসেছেন ছাত্রদের আন্দোলনে সংহতি জানাতে। সর্বস্তরের শিক্ষা ব্যবস্থা, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষার বেসরকারিকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে এই মিছিল।
মোদী সরকারের শিক্ষানীতির লক্ষ্য শিক্ষায় সরকারি ব্যয় বন্ধ করে ধাপে ধাপে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া অথবা শিক্ষায় যাবতীয় ব্যয় ছাত্রদের কাছ থেকে আদায় করা। অর্থাৎ অর্থের বিনিময়ে শিক্ষা কেনার ব্যবস্থা করছে এই সরকার। গরিব পরিবার, পিছিয়ে পড়া অংশ থেকে আসা মেধাবী ছেলেমেয়েরা যাতে কোনওদিন উচ্চশিক্ষার সুযোগ না পায় তারই ব্যবস্থা করছে মোদী সরকার। যাদের অর্থ আছে, বড়লোক তাদের ছেলেমেয়েরাই পড়বে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে। গবেষণার জন্য যে বৃত্তি চালু ছিল সেটাও বন্ধ করে বা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে দরিদ্ররা গবেষণার সুযোগ পাবে না। এর বিরুদ্ধে জেদি লড়াই করছে জেএনইউ’র ছেলেমেয়েরা। তারা গোটা দেশের সাধারণ ঘরের ছেলেমেয়ের কথা তুলে ধরেছে। তাদের এই উদ্যোগ, এই আন্দোলনকে স্বাগত ও সমর্থন জানিয়েছে গোটা দেশের প্রগতিশীল মানুষ। এই আন্দোলন আর জেএনইউ’র চত্বরে আবদ্ধ নেই। চলে এসেছে রাজধানীর রাজপথে। এই আন্দোলনের দাবিও জেএনইউ’র পড়ুয়াদের একার থাকছে না। হয়ে উঠছে সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের পড়ুয়াদের দাবি। গোটা দেশের সব ছেলেমেয়েদের দাবি। জেএনইউ’র ছাত্রনেতারা চাইছে সারা দেশে আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে। সেই লক্ষ্যে ২৭ নভেম্বর সারা দেশে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হবে বিক্ষোভ প্রতিবাদ। ছাত্র আন্দোলনের নতুন তরঙ্গ সৃষ্টির সলতে পাকানো শুরু হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে গোটা দেশে তা উত্তাল ঢেউ তুলবে। শিক্ষা সব নাগরিকদের অধিকার। কোনও বৈষম্য মানা হবে না। বাণিজ্যিকীকরণ ও বেসরকারিকরণের মাধ্যমে গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষার ও গবেষণার অধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না। সরকারি ব্যবস্থায় সকলের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।