আইন স্থগিত রাখতে পারে সুপ্রিমকোর্ট
-
গণশক্তির প্রতিবেদন
- Jan 12, 2021 08:55 [IST]
- Last Update: Jan 12, 2021 08:55 [IST]
নিজস্ব প্রতিনিধি: নয়াদিল্লি, ১১ জানুয়ারি— প্রতিবাদী কৃষকরা অভিযোগ করছিলেন তাঁদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করলেও কেন্দ্র আসলে এক পা-ও এগচ্ছে না। কালক্ষেপ করছে। সোমবার সেই কথাই বলল সুপ্রিম কোর্ট। কেন্দ্রকে তুলোধনা করে শীর্ষ আদালত বলেছে, কৃষকদের সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা অত্যন্ত হতাশাজনক। কেন্দ্র বিষয়টিকে সঠিকভাবে মোকাবিলাই করছে না। কোনও কার্যকরী ভূমিকাই নিচ্ছে না। একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, কৃষি আইন স্থগিত রাখতে, রূপায়ণ বন্ধ রাখতে বাধা কোথায়? এমনও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে সরকার না করলে শীর্ষ আদালত নিজেই আইন রূপায়ণ স্থগিত রাখবে। একটি কমিটি গঠন করে আইনের সমস্ত দিক খতিয়ে দেখার প্রস্তাবও সামনে এনেছে শীর্ষ আদালত। তবে, এ সম্পর্কে রায় জানানো হবে মঙ্গলবার।
এদিন সুপ্রিম কোর্টের এই পর্যবেক্ষণের পরে সংযুক্ত কৃষক মোর্চা আইন প্রত্যাহারেরই দাবি আরেক বার জানিয়ে বলেছে, আইন রূপায়ণ স্থগিত রাখার কোনও উদ্যোগ হলে তা স্বাগত। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট যদি কোনও কমিটি তৈরি করে তার সামনে কৃষক সংগঠনগুলি যাবে না। এই পদ্ধতির প্রস্তাব তারা খারিজ করে দিয়েছে। কৃষক নেতারা এদিন অনেক রাত পর্যন্ত আইনজীবীদের সঙ্গে বিশদে আলোচনাও করেন। সুপ্রিম কোর্টে আন্দোলনকারী কৃষক সংগঠনগুলি যায়নি। আবেদন করেছেন অন্য কয়েকটি সংগঠন এবং ব্যক্তি। তাঁরা বরং এই প্রতিবাদের বিরুদ্ধেই। কেন্দ্র এই মামলায় পক্ষভুক্ত। কিন্তু প্রতিবাদীদের কথা পৌঁছে দিতে আইনজীবীরা শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা মঙ্গলবার একদফা শুনানি চেয়েছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট মঙ্গলবার কোনও শুনানির কথা জানায়নি, শুধু রায় দেবার কথা জানিয়েছে। কৃষক নেতারা এই ঘটনায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন।
প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে, বিচারপতি এ এস বোপান্না, ভি রামসুব্রহ্ম্যমের বেঞ্চ এদিন শুরুতেই প্রশ্ন তোলেন, হচ্ছেটা কী? কেন্দ্রের আইনে কৃষকরা প্রতিবাদ করছেন, রাজ্যগুলি বিদ্রোহ করছে। বিচারপতিরা বলেন, কৃষকদের সঙ্গে আলোচনার ফলাফল অত্যন্ত হতাশাজনক। কেন্দ্রের তরফ থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে ভেনুগোপাল বলার চেষ্টা করেন, আরও সময় দরকার। প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনাদের অনেক সময় দেওয়া হয়েছে। ধৈর্য ধরার ব্যাপারে ভাষণ দেবেন না। কেন্দ্রকে লক্ষ্য করে বিচারপতিরা বলেন, আপনারা কি সমাধান চান? মনে তো হচ্ছে, আপনারাই সমস্যা।
সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন তোলে এই আইন রূপায়ণ স্থগিত রাখতে বাধা কোথায়? কেন এই আইন রূপায়ণের জন্য এত জোর দেওয়া হচ্ছে? বিচারপতিরা এক সময়ে বলেন, আমরা অর্থনীতির বিশেষজ্ঞ নই কিন্তু সরকার বলুক তারা নিজেরা এই আইন স্থগিত রাখবে কিনা। অন্যথায় আমরাই এই উদ্যোগ নেব। প্রসঙ্গত বিচারপতিরা বলেন, আমাদের কাছে যে আবেদন জমা পড়েছে তার একটিতেও বলা নেই যে এই আইন কৃষকের স্বার্থবাহী।
কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে আইন স্থগিত রাখার বিরুদ্ধেই সওয়াল করা হয়। মূলত আইনি ধারার সওয়াল। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, কোনও আইন যদি মৌলিক অধিকার বা সংবিধান লঙ্ঘন না করে তাহলে সুপ্রিম কোর্ট সেই আইন স্থগিত রাখতে পারে না। আদালত বলে, আমরা সাধারণত কোনও আইন স্থগিত রাখার কথা বলি না। কিন্তু আপনারা সমস্যার সমাধান করতে পারছেন না। ভারত সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে। স্থগিত না রাখলে আইনের রূপায়ণ বন্ধ রাখার কথা ভাবছি আমরা। সরকার না পারলে আমরাই উদ্যোগ নেব। আইনের রূপায়ণ বন্ধ রাখলে আলোচনায় অগ্রগতি ঘটতে পারে। এই সঙ্গেই বিচারপতিরা বলেন, প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি আর এম লোধার মত কারোর নেতৃত্বে আদালত কমিটি বানিয়ে দিতে পারে। সেই কমিটিতে বিশেষজ্ঞরা থাকবেন। ভারতীয় কৃষি গবেষণা পর্ষদের মত সংস্থার প্রতিনিধিরা থাকতে পারেন। তাদের সুপারিশ মতো পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। এই কমিটিতে নাম প্রস্তাব করার জন্যও বিচারপতিরা পরামর্শ দেন।
প্রতিবাদকারীদের তরফে যে আইনজীবীরা দাঁড়িয়েছিলেন তাঁদের উদ্দেশে শীর্ষ আদালত বলেন, আইন স্থগিত রাখার পরেও আপনারা প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে পারেন। প্রতিবাদের কণ্ঠ রুদ্ধ করা হচ্ছে, এমন কোনও কথা আমরা বলছি না। আমাদের প্রতি আপনাদের বিশ্বাস থাক বা না থাক, সুপ্রিম কোর্টকে তাদের কাজ করতেই হবে। যদিও প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেছেন, একটু ঝুঁকি নিয়েই বলছি অন্তত বয়স্করা ঘরে ফিরে যান।
এদিন সংযুক্ত কৃষক মোর্চার নেতারা তাঁদের আইনজীবীদের সঙ্গে বিশদে আলোচনা করেন। নিজেদের মধ্যে আলোচনাও করেন। এক বিবৃতিতে মোর্চা জানায় আন্দোলনকারী সমস্ত সংগঠন এ বিষয়ে একমত যে তিন আইন এখনই প্রত্যাহার করতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট সমস্যাটি অনুধাবন করেছে, কৃষকদের আশ্বাস দেবার মতো কিছু কথাও বলেছে। এই জন্য সুপ্রিম কোর্টের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছে কৃষক সংগঠনগুলি। কৃষি আইন রূপায়ণ স্থগিত রাখার প্রস্তাবকে সমস্ত সংগঠন স্বাগত জানাচ্ছে কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট যদি কোনও কমিটি গঠন করে কোনও সংগঠন পৃথকভাবে বা সমষ্টিগতভাবে তার সামনে উপস্থিত হবে না। আজ আদালতের সামনেও কেন্দ্রের মনোভাব থেকে বোঝা গেছে কোনও কমিটি হলে আইন প্রত্যাহারের আলোচনায় তারা রাজিই হবে না।
মোর্চা বলেছে, সুপ্রিম কোর্টের সামনে আমাদের আইনজীবীরা বারংবার বলেছেন সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনা না করে তারা কমিটি গঠনের বিষয়ে সহমত হতে পারছেন না। আইনজীবীদের সঙ্গে আমাদের বিশদে আলোচনা হয়, কমিটির খুঁটিনাটি নিয়ে কথা বলা হয়। সংগঠনগুলি আইনজীবীদের বলে দিয়েছে সরকারের একগুঁয়েমির কারণে কোনও কমিটির সামনে কৃষক সংগঠন যাবে না।
মোর্চা বলেছে, আমাদের আইনজীবীরা, এমনকি হরিশ সালভে-সহ অন্য আইনজীবীরাও মঙ্গলবার আরেক দফা শুনানি চেয়েছিলেন যাতে তাঁরা সংগঠনগুলির সঙ্গে আদালতের প্রস্তাবের বিষয়ে আলোচনা করে আসতে পারেন। কিন্তু তেমন কোনও শুনানি হচ্ছে না, শুধু নির্দেশ ঘোষণা করা হবে। আমাদের আইনজীবীদের কাছে, কৃষক সংগঠনের কাছে, সাধারণভাবে কৃষকদের কাছে এই ঘটনা অত্যন্ত হতাশাজনক। আইনজীবীরা আদালতে বলার সুযোগ পাবেন না বলেই আমরা বিবৃতি দিয়ে এই কথা জানাতে বাধ্য হচ্ছি।
মোর্চা বলেছে, সুপ্রিম কোর্টের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েও কৃষক সংগঠনগুলি জানাচ্ছে তাদের প্রস্তাব আমরা মানতে পারছি না।
এই মামলায় প্রতিবাদী কৃষকদের আইনি সহায়তা করছেন দুষ্যন্ত দাভে, প্রশান্ত ভূষণ, কলিন গঞ্জালভেস, এইচ এস ফুলকা।