বেতন না পেয়ে আত্মঘাতী টেলিকম কর্মী
-
নিজস্ব প্রতিনিধি
- Apr 07, 2021 11:30 [IST]
- Last Update: Apr 07, 2021 11:30 [IST]
জলপাইগুড়ি, ৬ এপ্রিল— আত্মঘাতী হলেন রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থা বিএসএনএল’র ঠিকাকর্মী পঙ্কজ কর্মকার। মঙ্গলবার ভোররাতে জলপাইগুড়ির ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা চল্লিশ বছরের এই ঠিকাকর্মীকে ঝুলে থাকতে দেখা যায়। টানা ৯ মাস বেতন পাননি বিএসএনএল’র এই ঠিকাকর্মী। কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিএসএনএল’র ঠিকাকর্মীরা বেতন পাচ্ছেন না মাসের পর মাস। ঘটনায় কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভে সরব হয়েছেন প্রতিবেশী থেকে সহকর্মীরা।
ভোটের মরশুমে প্রতিটি সভা, সমাবেশেই রাজ্যের বেকারদের চাকরি দেওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বিজেপি’র ছোট থেকে বড় নেতারা। পালা করে বক্তৃতা দিয়ে ‘সোনার বাংলা’ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। অথচ কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিএসএনএল-কে শুকিয়ে মারছে সেই বিজেপি সরকারই। দেশজুড়ে আন্দোলনে শামিল টেলিকম সংস্থার স্থায়ী-অস্থায়ী কর্মীরা। দিল্লির সরকারের নীতি কতটা মারাত্মক ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে পঙ্কজ কর্মকারের মৃত্যু।
১২-১৪ মাস বেতন পাচ্ছেন না রাজ্যের বিএসএনএল-এ কর্মরত ঠিকাকর্মীরা। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির মৃত্যুঘণ্টা বাজানো হয়েছে কেন্দ্রীয় বাজেটে। মঙ্গলবারই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উত্তরবঙ্গের কোচবিহারে ভোট প্রচার করেছেন। পাশের জেলা জলপাইগুড়িতে ৯ মাস বেতন না পেয়ে আত্মঘাতী হলেন ঠিকাকর্মী কর্মকার।
স্থানীয় সূত্রে খবর, পঙ্কজ কর্মকার বিগত প্রায় ২০ বছর ধরে বিএসএনএল-র জলপাইগুড়ি অফিসে চুক্তি ভিত্তিক কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। গত ৯ মাস ধরে বেতন না পাওয়ায় বৃদ্ধ বাবা, স্ত্রী ও বছর দশের একমাত্র ছেলেকে নিয়ে চলা ক্রমেই কষ্টসাধ্য হয়ে উঠছিল তাঁর। ফলে বিভিন্ন ভাবে দেনাগ্রস্ত হয়ে পড়েন পঙ্কজ কর্মকার। দেনার দায়ে জর্জরিত হয়ে মানসিক চাপে তিনি মঙ্গলবার ভোররাতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। সকালে ডাকাডাকির পর দরজা না খুললে স্থানীয় থানায় খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে দরজা খুলে দেহ উদ্ধার করেন। পাঠানো হয় ময়নাতদন্তে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পঙ্কজ এলাকায় বরাবরই ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত।
পঙ্কজের মতো এ’রাজ্যে বিএসএনএল-এ কর্মরত কয়েক হাজার কর্মী কেউ ১২ তো কেউ ১৪ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। সোমবারই বিএসএনএল এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের তরফে চিফ জেনারেল ম্যানেজারকে ডেপুটেশন দিয়ে ঠিকাকর্মীদের বকেয়া মেটাতে দাবি করা হয়েছিল। মঙ্গলবার এমন ঘটনা প্রমাণ দিল কতটা জ্বলন্ত এই সঙ্কট। জানা গিয়েছে, গত মাসের ২৫ তারিখে দু’মাসের টাকা বরাদ্দ হলেও পিএফ ও ইএসআই’র টাকা না মেটানো সংক্রান্ত জটিলতার জেরে অনেকেই বেতনের টাকা হাতে পাননি। এর উপর সংস্থার নতুন আউটসোর্সিং নীতিতে চাকরি হারানোর ভয় মানসিক চাপ তীব্র করেছে কর্মীদের।
বিএসএনএল’র কর্মী সংগঠনের নেতা অনিমেষ মিত্র জানান, প্রয়াত কর্মীর বাড়িতে সংগঠনের তরফে লোকজন গিয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন। পরিবারকে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়ার দাবি জানান বিএসএনএল কর্তৃপক্ষের কাছে।