চোর ধরো জেলে ভরো
-
-
- Feb 06, 2019 08:31 [IST]
- Last Update: Feb 06, 2019 02:19 [IST]
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বিরোধী নেত্রীর ভূমিকায় প্রত্যাবর্তন করলেন। মুখ্যমন্ত্রীর সদর দপ্তর নবান্ন ত্যাগ করে তাঁর অতি ‘প্রিয়’ মেট্রো চ্যানেলে ফিরে এলেন। ১৩ বছর আগে এই জায়গাতেই ২৬ দিনের ‘অনশন’ নাটক করেছিলেন ক্ষমতার উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য। এবারের ‘সত্যাগ্রহ’ নাটকের লক্ষ্য ক্ষমতা হারানোর আতঙ্ক থেকে মুক্তির রাস্তা খোঁজা। ক্ষমতাচ্যুতির ভয় যদি এতটা প্রকট না হতো তাহলে তুচ্ছ কারণে পথে বসার দরকার হতো না। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই এবং রাজ্যের পুলিশ পরস্পরের শত্রুপক্ষ নয়। সরকারপক্ষের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ারও নয়। অন্যায়, বেনিয়ম, দুর্নীতি, অপরাধমূলক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে কাজ করাই পুলিশ এবং সিবিআই’র দায়বদ্ধতা। দেশের ও জাতির সার্বিক স্বার্থে একাজে একে অন্যকে সাহায্য করার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে তারা সম্মুখ সমরে নেমে পড়েছে। ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মর্যাদাকে ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে পুলিশ-সিবিআই যুদ্ধ মনে হলেও পর্দার আড়ালে আছে শাসকদল। রাজ্যে তৃণমূলের স্বার্থে পুলিশ আস্তিন গোটাচ্ছে আর কেন্দ্রের বিজেপি’র স্বার্থে পুলিশের মোকাবিলা করছে সিবিআই। পুলিশ-সিবিআই’র আড়ালে তৃণমূল-বিজেপি’র যুদ্ধ চলছে সেটাও সত্য নয়। প্রকৃত সত্য যুদ্ধের নাটক। মানুষকে বোকা বানানোর ছলা কলা। আসন্ন নির্বাচনে আসনের গোপন বোঝাপড়ার জন্য একের বিরুদ্ধে অন্যের চাপ বাড়ানোর খেলা।
অভিজ্ঞতা বলছে নির্বাচন এলেই এমন ঘটনা ঘটে। সিবিআই হঠাৎ সক্রিয় হয়ে ওঠে। বিপরীতে তৃণমূলও রণংদেহী ভাব দেখায়। সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে সারদা, রোজভ্যালি সহ চিট ফান্ডকাণ্ডের বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের তদন্ত করার। পাঁচ বছর ধরে তদন্ত ঝুলিয়ে রেখে মাঝে মধ্যে তৎপরতা দেখায়। বাস্তবে তদন্ত কিছুই প্রায় এগয় না। লক্ষ লক্ষ গরিব মানুষের কোটি কোটি টাকার সঞ্চয় লোপাট হয়েছে। গরিব মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছেন। অনেকে আত্মহত্যা করেছেন। টাকা লোপাটকারীদের খুঁজে টাকা উদ্ধার করে গরিব মানুষকে ফেরত দেওয়াই এই তদন্তের উদ্দেশ্য। চিট ফান্ডের টাকা লোপাটের সঙ্গে তৃণমূলের নেতা, মন্ত্রীরা জড়িত। চিট ফান্ডের কোটি কোটি টাকায় কেনা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি। সেই টাকা ঘুরপথে ঢুকেছে তৃণমূলের তহবিলে। তৃণমূল-বিজেপি’র রাজনৈতিক বোঝাপড়ার স্বার্থে তদন্ত চলছে শম্বুক গতিতে। দলের শীর্ষ নেতাদের জেলবাস ঠেকাতে তৃণমূল তদন্ত আটকাতে মরিয়া এবং তথ্য-প্রমাণ লোপাটে বেপরোয়া, অন্যদিকে বিজেপি চায় তৃণমূলকে চাপে রেখে নিজেদের রাজনৈতিক জমি তৈরি করাতে। যখনই বোঝাপড়ায় সমস্যা হাজির হয় তখনই নকল যুদ্ধের ঘনঘটা।
কলকাতার পুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধে চিট ফান্ডের অকাট্য প্রমাণ লোপাটের গুরুতর অভিযোগ আছে। একাজ তিনি সরকারের প্রধানের অনুপ্রেরণায় করেছেন। প্রমাণ লোপাট না হলে গোটা তৃণমূল দলটারই জেলবাস অনিবার্য। তাই রাজীবকে জিজ্ঞাসাবাদ বিপজ্জনক। যদি সব বলে দেয়, অতএব রাস্তায় বসে নাটক জমিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। লক্ষণীয় এর আগে দলের নেতা, মন্ত্রী, সাংসদদের জেলে পুরলেও মুখ্যমন্ত্রী বিশেষ গা করেননি। রাজীবকে টানতেই তাঁর মাথায় বাজ পড়েছে। তিনি সঙ্গে সঙ্গে মেট্রো চ্যানেলে জমাটি নাটকের আয়োজন করে ফেলেছেন। যে জায়গায় তিনি সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন সেখানেই মঞ্চ বেঁধে বসে পড়েছেন।
এমন জমজমাট নাটকের জন্য দিনটি বেছেছেন বামফ্রন্টের ব্রিগেড সমাবেশের দিন। জনসমুদ্রে বাংলার মানুষের রাজনৈতিক ভাবনার ভিত্তিকেই ওলোটপালট করে দিয়েছে এই ব্রিগেড। কপালে ভাঁজ তৃণমূল ও বিজেপি’র। তাই এই ব্রিগেডকে আড়াল করার জন্য রবিবারকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। তাতে অবশ্য কিছু যাবে আসবে না। ব্রিগেডের বার্তা পৌঁছে গেছে সর্বত্র। মানুষই তা পৌঁছে দিয়েছেন। নাটক করে বামপন্থীদের আর ঠেকানো যাবে না। ভয়ে আগল ছিঁড়ে অধিকার ছিনিয়ে নেবার শপথ নিয়েছে ব্রিগেড। চোর ধরার নাটক নয়, চোর ধরতে হবে। গরিবের টাকা ফেরত দিতে হবে। কে রাজীব, কে ভাইপো, কে পিসি দেখার দরকার নেই। আমরা চোরকে দেখতে চাই জেলের ভিতর।