দম্পতি খুনে পেশাদার আততায়ীরা, ধারণা গোয়েন্দাদের
-
নিজস্ব প্রতিনিধি
- Aug 01, 2019 13:22 [IST]
- Last Update: Aug 01, 2019 03:00 [IST]
কলকাতা, ৩১ জুলাই— নেতাজী নগর প্রথম দফায় বাড়ির পরিচারিকা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের জেরা করেও তেমন কোন সূত্র এখনও পাওয়া যায়নি। তবে ওই এলাকায় থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে কয়েকজন সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করা গিয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন রাত ১০টার আশেপাশে নিহত দিলীপ মুখার্জির বাড়ির সামনের রাস্তায় কয়েকজনকে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। ওই ছবি এলাকার দেখিয়ে কয়েকজনের পরিচয়ও জানতে পেরেছেন কলকাতা পুলিশের হোমিসাইড বিভাগের আধিকারিকরা।
দিলীপ মুখার্জি’র দুটি ফোন ব্যবহার করতেন। একটি পাওয়া গিয়েছে, অপরটির খোঁজ মিলছে না। প্রথম মোবাইলের কললিস্ট ঘেঁটে ওই বৃদ্ধ দম্পতির ঘনিষ্ঠ কয়েকজনকে শনাক্ত করেছেন গোয়েন্দারা। বুধবার সকাল থেকেই তাঁদের একের পর এক জিজ্ঞাসাবাদ চললেও এখনও পর্যন্ত জোড়া খুনের তদন্তে তেমন গতি মেলেনি। বুধবার বৃদ্ধ দম্পতির ময়নাতদন্ত হয়েছে। চিকিৎসকদের অনুমান, সোমবার রাত সাড়ে দশটা থেকে রাত বারোটার মধ্যে তাঁদের খুন করা হয়েছে। খুনের সময় অবশ্যই মুখার্জি দম্পতির পরিচিত ব্যক্তি আততায়ীর সঙ্গে ছিল বলে অনুমান গোয়েন্দাদের।
কারণ পরিচিত ব্যক্তিকে না দেখলে রাতে দরজা খুলতেন না দিলীপ মুখার্জি’র স্ত্রী স্বপ্না মুখার্জি। আততায়ীরা পেশাদার সেই বিষয়েও গোয়েন্দারা একপ্রকার নিশ্চিত। কেননা, একের পর এক আততায়ীরা শ্বাসরোধ করে খুন করেছে। পেশাদার হওয়ার জন্যই খুনি সময় নষ্ট করতে চায়নি। নিচের তলা থেকে দোতলা ওঠার আগেই সিঁড়িতে শ্বাসরোধ করে খুন করে দেয়। এরপর দোতলায় দিলীপ মুখার্জি’র ঘরে গিয়ে তাঁকে খুন করা হয়। মুখার্জি দম্পতিকে খুন করার পর দীর্ঘসময় আততায়ী ওই বাড়িতে ছিল। বাড়িটিতে মোট ১১টি আলমারি ছিল। সবগুলো খোলার চেষ্টা করা হলেও খোলা যায় ৯টি। দুটো খুন করার পর একের পর এক বন্ধ আলমারি খোলা দেখে গোয়েন্দাদের অনুমান, আততায়ীদের দলটি বেশ বড় ছিল। তিন থেকে চারজনের থাকার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। পেশাদার খুনি হওয়ার জন্যই তারা ওই বাড়িতে বেশি হাতের ছাপ রাখেনি।
তবে লুটের জন্যই এই খুন বলে এখনই নিশ্চিত হতে পারছেন না গোয়েন্দারা। তাদের অন্য কোনও কারণে মুখার্জি বাড়ির সব কটি আলমারি খোলার দরকার ছিল। আততায়ীরা আগে থেকেই জানত ১১টি আলমারির মধ্যে নগদ টাকা রয়েছে, কোথায় রয়েছে সোনা-গয়না। টাকা হাতিয়ে নিয়ে গিয়েছে। প্রাথমিকভাবে লুটের জন্য খুন মনে হলেও সহজে তা মানা যাচ্ছে না। স্থানীয় মানুষজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, দুই সপ্তাহ আগে ওই পুরানো বাড়ি মেরামতির জন্য এসেছিলেন কয়েকজন মিস্ত্রি। তাঁরা বাড়িতে প্লাস্টারের কাজও করেছেন।
স্থানীয় একজন ঠিকাদারের হয়ে তাঁরা ওই কাজে এসেছিলেন। সব মিস্ত্রিরা এখন গোয়েন্দাদের তৈরি সন্দেহের তালিকার প্রথমে রয়েছেন। মিস্ত্রিদের নাম পরিচয় সব জানার পরেও তাঁদের কয়েকজনের হদিশ পেলেও বাকিদের খোঁজ মিলছে না। সবারই নাকি মোবাইলের সুইচড্ অফ। দিলীপ মুখার্জি আগে রং-রাসায়নিকের কারবার করতেন। নিজের বাড়িতে যখন রং করা হচ্ছিল তখন তিনিও যুক্ত ছিলেন ওই কাজে।
রঙের মিস্ত্রিরা সবাই তাঁর দীর্ঘদিনের পরিচিত। মুখার্জি বাড়িতে সাত বছর ধরে কাজ করতে থাকা পরিচারিকাকে বারংবার জেরা করে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন —বাড়িতে বাইরের মিস্ত্রিরা কাজ করলেও তাঁদের সঙ্গে খোলামেলাভাবে মিশতেন ওই দম্পতি। মিস্ত্রিদের সামনেই আলমারি খুলে টাকাপয়সা বের করে তাঁদের পাওনা মেটাতেন। খুনের বিষয়ে পুলিশ স্থানীয় এক কলমিস্ত্রি’র সঙ্গেও কথা বলছেন। তিনি ঘটনার পর দিন সকালে এসে প্রথম ডাকাডাকি করেন।
কলের মিস্ত্রি হরি’কে জেরা করার পাশাপাশি বাড়িটির নিচে থাকা ইস্ত্রির দোকানদারকেও জেরা করা হচ্ছে। ওই ব্যক্তি মুখার্জি পরিবারের বেশ ঘনিষ্ঠ বলে জানা গিয়েছে।
গোয়েন্দারা ওই ব্যক্তির কাছ থেকে ওই বাড়িতে কে বা কারা বেশি আসত তার খোঁজ চালাচ্ছেন। সেই সঙ্গে স্থানীয় এক যুবককে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে। ওই যুবক দরকারে দিলীপ মুখার্জি’র নানা কাজ করে দিতেন। এমনকি ওই ব্যক্তি ব্যাঙ্কেও যেতেন বলে জানা গিয়েছে। সেই সঙ্গে বাড়িটির চত্বরে থাকা এক ভাড়াটিয়া মহিলাকে বেশ কয়েকবার জেরা করা হয়েছে। তিনি কয়েক বছর আগে আয়া’র কাজ করে গিয়েছেন। কলকাতায় থাকার জন্যই তাঁকে বাড়ির নিচে থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন দিলীপ মুখার্জি। ওই দম্পতিকে দেখাশোনার পাশাপাশি অন্য জায়গাতেও আয়া’র কাজ করতেন ওই মহিলা।
শুধু কি তাই ! ওই আয়ার কাজের মহিলা জানিয়েছেন, ছ’মাস ধরে দিলীপ মুখার্জি চলাফেরায় অক্ষম হয়ে পড়ছিলেন। সেই জন্য একজন ফিজিওথেরাপিস্ট ওই বাড়িতে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলছেন গোয়েন্দারা। তবে সব দিকটা পুরোপুরি বিশ্লেষণ না করে এখনই আততায়ী নিয়ে কোনও স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারছেন না তাঁরা।