ক্যাপিটল ভবনে হামলার নিন্দা, কটাক্ষও আন্তর্জাতিক মহলে
-
-
- Jan 08, 2021 02:00 [IST]
- Last Update: Jan 08, 2021 03:00 [IST]
মার্কিন সংসদ ভবনে হামলার ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই নিন্দায় সরব হয়েছে আন্তর্জাতিক মহল। রাষ্ট্রপ্রধানরা এমন ঘটনায় ‘স্তম্ভিত’, ‘অবিশ্বাস্য’, ‘ভয়ঙ্কর’ এবং ‘নজিরবিহীন’ বলে মন্তব্য করে মার্কিন প্রশাসনিক ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তরের জোরালো দাবি তুলেছেন। তবে ট্রাম্প বাহিনীর এই হামলায় উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি কটাক্ষ করতেও দ্বিধা করেনি ভেনেজুয়েলা সরকার। বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একই ধরনের ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছে যা আগ্রাসনের নীতি নিয়ে অন্যান্য দেশে হরবকত ঘটিয়েছে তারা। তেমনই ২০১৯সালে হংকং-য়ে বিক্ষোভকারীদের হামলা সম্পর্কে মার্কিন সংসদের অধ্যক্ষের ‘নয়নাভিরাম দৃশ্য’ মন্তব্যের সঙ্গে দুটি ঘটনার তুলনা টেনে কটাক্ষ ভরে গিয়েছে চীনের সোশ্যাল মিডিয়া। অবশ্য মোটের ওপর সব দেশই এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার নিন্দা করতে কসুর করেনি। বস্তুত, সবসময় গণতন্ত্রের বড়াই করলেও গণতন্ত্র বিরোধী সবচেয়ে বড় ঘটনার সাক্ষী থাকতে হলো সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেই।
ভোটে হারলেও বহুদিন ধরে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে হুমকি দিয়ে আসছিলেন বিদায়ী রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই উসকানিতেই বুধবার সংসদে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া চলাকালীন সশস্ত্র হামলা চালায় ট্রাম্প ভক্ত উন্মত্ত বাহিনী। এমন ঘটনা মার্কিন রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রথম। একারণেই সব রাষ্ট্রনায়কই এমন নজিরবিহীন হিংসাত্মক ঘটনার কড়া সমালোচনা করেছেন। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন মার্কিন কংগ্রেসে এমন বেইজ্জতি ঘটনার নিন্দা করে বলেছেন, যে দেশ গণতন্ত্রের পক্ষে এত কথা বলে আজ সেখানেই এমন ঘটনা ঘটল। শান্তিপূর্ণ এবং সুষ্ঠুভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর জরুরি বলে তিনি জানান। ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি ইমানুল ম্যাক্রোঁ টুইটারে ভিডিও পোস্ট করে বলেছেন, ‘‘কয়েকজনের হামলার বিষয় নয়, এটা গণতন্ত্রকেই প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। ওয়াশিংটনে যা ঘটেছে তা মোটেই আমেরিকান নয়।’’ প্রতিবেশী কানাডার প্রধানমন্ত্রীও জাস্টিন ট্রডো মনে করেন হিংসা কখনোই মানুষের মতামতকে উলটে দিতে সক্ষম হয়নি আজ পর্যন্ত। তাই এই ঘটনায় তাঁরা বিরক্ত এবং দুঃখিত হয়েছেন। তিনি মনে করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রকে বজায় রাখবে।
রাষ্ট্রসঙ্ঘের সেক্রেটারি জেনারেল আন্তেনিও গুতেরস মার্কিন ক্যাপিটল ভবনে হামলার ঘটনায় ‘ব্যথিত’ বলে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু রাষ্ট্রসঙ্ঘের মুখপাত্র স্টিফানে দুজারিকের মন্তব্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেছেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমর্থকদের হিংসাত্মক আচরণ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া উচিত তাঁদের। একই সঙ্গে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং আইন মেনে চলায় বিশ্বাস থাকা জরুরি তাঁদের।’’ এই শ্লেষ যে ট্রাম্পের প্রতি তা এই মন্তব্যেই স্পষ্ট। জার্মান বিদেশ মন্ত্রী হেইকো মাস ট্রাম্প ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘‘গণতন্ত্রকে পদদলিত করা বন্ধ হোক।’’ ন্যাটো প্রধান জেনস স্টোলেনবার্গ টুইট করে বলেছেন, ‘‘ ওয়াশিংটনের ঘটনা দেখে স্তম্ভিত। গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ফালাফলকে মর্যাদা দেওয়া উচিত।’’ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদেশনীতি নির্ধারক প্রধান যোশেফ বোরেল মনে করেন, ‘‘ওই ঘটনা গোটা বিশ্বের কাছে মাথা নত করে দিয়েছে মার্কিন গণতন্ত্রকে।’’ তিনিও মার্কিন নির্বাচনের ফালাফলকে মর্যাদা দেওয়া উচিত মন্তব্য করেছেন। অর্থাৎ ঘুরিয়ে হলেও তাঁদের কটাক্ষ সেই ট্রাম্পের আচরণকেই। তাঁর ক্ষমতা না ছাড়ার হম্বিতম্বি জানে সবাই।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন হিংসাত্মক ঘটনার নিন্দা করে ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তরের কথা বলেছেন। নিউজিল্যান্ড মনে করে, ওই ঘটনা গণতন্ত্রের পক্ষে মোটেই সুখকর নয়। আর নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুতে মনে করেন, এমন ঘটনা গণতন্ত্রের পক্ষে ভয়ঙ্কর। একইভাবে আয়ারল্যান্ড এবং গ্রিস ঘটনার নিন্দা করে বলেছে যে, তারা আশাবাদী যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রকেই ঊর্বেদা তুলে ধরবে। একই অভিমত তুরস্কেরও। স্পেনের রাষ্ট্রপতি পেড্রো স্যাঞ্চেস মার্কিন গণতন্ত্রের প্রতি ভরসা রেখে বলেছেন, নতুন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন এই পরিস্থিতি থেকে দেশকে নতুন দিশা দেখাবেন। ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডরিকসন বলেছেন, হিংসা, মেরুকরণ বা উগ্রপন্থা মোটেই কোনও দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে না। তিনি মনে করেন, আমেরিকায় আবার গণতন্ত্র ফিরবে।
চীনের তরফে সরকারিভাবে কিছু মন্তব্য করা হয়নি ওয়াশিংটনের ঘটনা সম্পর্কে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চীনের দূতাবাস এই করোনা পরিস্থিতিতে এমন বহু মানুষের হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী চীনের অধিবাসীদের এবিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
তবে চীনের সোশ্যাল মিডিয়া এই ঘটনার সঙ্গে ২০১৯সালে হঙকঙের ঘটনার তুলনা টেনে কটাক্ষ করা হয়েছে। সেই সময় মার্কিন কংগ্রেসের অধ্যক্ষ পালোসি হঙকঙের বিক্ষোভকে ‘মনে ধরে রাখার মতো নয়নাভিরাম দৃশ্য’ বলে উৎফুল্ল হয়েছিলেন। দুটি আক্রমণের ছবি পাশাপাশি তুলে ধরে পালোসির কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছে যে, ‘আপনি এখনও তেমনই উৎফুল্ল হচ্ছেন?’
ভেনেজুয়েলা সরকার মার্কিন ক্যাপিটল ভবনে হামলায় উদ্বেগের পাশাপাশি রাজনৈতিক মেরুকরণের নিন্দা করে বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি যে গভীর সঙ্কটে রয়েছে তা একের পর এক হামলার ঘটনায় স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নিজেদের আগ্রাসনের নীতি নিয়ে এই ধরনের ধরনের ঘটনা প্রায়শই অন্য দেশে ঘটিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। আজ তারা সেই একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। তবে ভেনেজুয়েলা বিশ্বাস করে, শেষ পর্যন্ত ওই দেশে স্থায়িত্ব এবং সামাজিক ন্যায়ের ক্ষেত্রে নতুন পথের উন্মেষ ঘটবে।