দোলাচলের মধ্যেই টিকা এল রাজ্যে
-
নিজস্ব প্রতিনিধি
- Jan 13, 2021 10:33 [IST]
- Last Update: Jan 13, 2021 10:33 [IST]
কলকাতা, ১২ জানুয়ারি— সমস্ত জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মঙ্গলবার করোনা টিকা কোভিশিল্ড ঢুকে পড়ল রাজ্যে। স্বভাবতই স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সবারই ব্যস্ততা ও উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৭ লক্ষ ভ্যাকসিন ডোজ এসে পৌঁছেছে কলকাতায়। তা বাগবাজার স্টোরে সংরক্ষণ করার পর এবার জেলাগুলিতে বণ্টন প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে শেষ পর্যায়ের ট্রায়াল সম্পূর্ণ না হতেই টিকা বাজারে ছেড়ে দেওয়ায় এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার দায় কে নেবে। এছাড়াও টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি যেভাবে দাম ধার্য করছে তাতে সবাই এই টিকা নিতে পারবেন না। তাহলে কেন টিকা বাজারজাত করার কথা ভাবা হচ্ছে প্রশাসনের তরফে। উল্লেখ্য, পুনের সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে মঙ্গলবার সকালে ভ্যাকসিন এসে পৌঁছেছে কলকাতা বিমানবন্দরে। সেখান থেকে বিশেষভাবে ও নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে তা নিয়ে যাওয়া হয়েছে বাগবাজারে স্বাস্থ্য দপ্তরের নিজস্ব টিকা সংরক্ষণ কেন্দ্রে। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য ভবনে আয়োজিত এক বৈঠকে রূপরেখা চূড়ান্ত হয়েছে।
জানা গেছে আপাতত রাজ্যের ১৯টি কেন্দ্রে যাবে টিকার ডোজ। সেইসব কেন্দ্র থেকে প্রাথমিকভাবে মোট ৩৫৩টি ভ্যাকসিনেশন সেন্টারে টিকা পৌঁছালে সেখান থেকে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ কর্মীদের টিকা দেওয়া হবে। কলকাতার জন্য বরাদ্দ থাকবে প্রায় ১ লক্ষ ডোজ। কলকাতায় এসএসকেএম, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, এনআএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে টিকা দেওয়ার প্রক্রিয়া আগে শুরু হবে। কলকাতা ছাড়াও প্রথম পর্যায়ে উত্তর ২৪ পরগনা, হুগলী, হাওড়ায় টিকার ডোজ রওনা হয়ে গেছে। বুধবার থেকে অন্যান্য জেলাগুলির সঙ্গে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে এই টিকা নিয়ে যাওয়া হবে। প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে জেলা ও গ্রামীণ হাসপাতাল, প্রাথমিক স্কুল, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে সেন্টার তৈরি হয়েছে। যেমন কল্যাণীতে ২০টি সেন্টার হয়েছ, প্রতিটি সেন্টার থেকে ১০০টি করে ডোজ দেওয়া হবে। কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজে থাকবে ২টি সেন্টার রাখা হয়েছে বলে নদীয়া জেলা স্বাস্থ্য প্রশাসনসূত্রে জানা গিয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম মঙ্গলবার বলেন, ডোজগুলি কলকাতায় যথাযথভাবে সংরক্ষিত করা হয়েছে। জেলাগুলিতে বিভিন্ন কেন্দ্রে টিকার ডোজ নিয়ে যাওয়ার সমস্ত প্রক্রিয়াই হবে অত্যন্ত নিরাপত্তার সঙ্গে গ্রিন করিডরের মাধ্যমে।
টিকা দেওয়া শুরু হবে শনিবার থেকে কিন্তু তার আগেই টিকার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেছে চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞমহলে। অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরস’র সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মানস গুমটা’র বক্তব্য, কোভিশিল্ডই হোক বা কোভ্যাকসিন, কোনোটাই শেষ পর্যায়ের ট্রায়াল সম্পূর্ণ করেনি। তড়িঘড়ি তা দেওয়া হচ্ছে। তাহলে এর যদি কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়, তাহলে তার দায় সরকারকে নিতে হবে। সরকার কিছুতেই তার দায় এড়াতে পারে না। দ্বিতীয়ত যাঁরা ভ্যাকসিন নেবেন তাঁদের কাছ থেকে কোনও লিখিত সন্মতি নেওয়া যায় কিনা তা দেখতে বা ভাবতে হবে সরকারকে। ডাঃ গুমটা বলেন, সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নের মুখোমুখি আমরা হতে চলেছি তা হলো, দেখতে হবে শেষপর্যন্ত সাধারণ মানুষকে তা কিনতে না হয়। কারণ সংস্থাগুলি ভ্যাকসিনের দাম নির্ধারণ করে ফেলেছে ইতোমধ্যে। খোলা বাজারে এই ভ্যাকসিন বিক্রির পরিস্থিতি নেই। কারণ ভ্যাকসিন প্রতিটি পর্যায়ে চূড়ান্তভাবে পরীক্ষিত নয়। সাধারণ মানুষকে উসকে না দিয়ে রাজ্য সরকারকে প্রত্যেকের জন্য বিনামূল্যেই ভ্যাকসিন দিয়ে এর সমস্ত দায় নিতে হবে।
করোনা টিকা কিভাবে দেওয়া হবে তার মহড়া হয়েছে গত শুক্রবার। রাজ্য জুড়ে প্রতিটি জেলায় আয়োজিত হয়েছে প্রস্তুতি পর্ব। প্রতিটি কেন্দ্র থেকে ২৫ জনকে বেছে নিয়ে চলেছে টিকার মহড়া। এজন্যে পৃথক পৃথক ঘর রাখা হয়েছে। যিনি টিকা নেবেন, তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা হওয়ার পর অপেক্ষা করতে হবে। তারপর অন্য আর একটি ঘরে গিয়ে নিতে হবে টিকা। কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো কিনা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে কিছুক্ষণ। সেই সময়ে নজর রাখবেন উপস্থিত চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা। তারপর ওই ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়া হবে। অথবা তিনি টিকা নেওয়ার পর কোনও কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁর চিকিৎসা চলবে। টিকা নেওয়ার দিন কয়েক পর কেউ অসুস্থ হতে পারেন কিনা বা অসুস্থতা আচমকা কোন পর্যায়ে চলে যেতে পারে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা। ফলে সাধারণ মানুষও রয়েছেন দোলাচলে। এদিকে রাজ্যের করোনা পরিস্থিতির কোনও উন্নতি নেই। সরকারি তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭৫১ জন। মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের। ৫ লক্ষ ৬২ হাজার ছাড়িয়েছে এপর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা। গত ১০ মাসে রাজ্যে মোট মৃত্যু হয়েছে ৯৯৭৫ জনের।