বিশেষ মর্যাদা ফেরানোর লড়াই চলবেই, ৩৭০ বিলোপের বর্ষপূর্তিতে সোচ্চার কাশ্মীর
-
নিজস্ব প্রতিনিধি
- Aug 06, 2022 13:41 [IST]
- Last Update: Aug 06, 2022 13:41 [IST]
জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা
ছিনিয়ে নেওয়ার তিন বছর পার হলো শুক্রবার। যে আশ্বাস শুনিয়ে মোদী সরকার ৩৭০ ধারা
প্রত্যাহার করেছিলেন, এখন তা সীমাবদ্ধ শুধু প্রশাসনের দাবিতেই। বাস্তবে কোনও
প্রতিফলন ঘটেনি। বিজেপি’র বিরুদ্ধে এদিন এভাবেই সরব হয়েছেন বিরোধীরা। সিপিআই(এম), ন্যাশনাল
কনফারেন্স, পিডিপি, কংগ্রেস নরেন্দ্র মোদীর সরকারের বিরোধিতা করে ৩৭০ ধারা
পুনর্বহালের জোরালো দাবি তুলেছে।
সিপিআই(এম)-এর প্রবীণ নেতা
মহম্মদ ইউসুফ তারিগামি বলেন, ‘‘২০১৯ সালের এই দিনে কেন্দ্রীয় সরকার সংবিধান দুরমুশ করে
জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর উপত্যকাবাসী এই মর্যাদা
অর্জন করেছিলেন। আমাদের কাছ থেকে যা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে, তা ফিরে পেতে
ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চালিয়ে যাব।’’
জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা
পুনর্বহালের দাবিতে পিডিপি, ন্যাশনাল কনফারেন্স দিনভর বিক্ষোভ দেখিয়েছে। এদিন পিডিপি
প্রধান মেহবুবা মুফতি এবং দলের অন্যান্য নেতা-কর্মীরা শের-ই-কাশ্মীর মিউনিসিপ্যাল
পার্কের কাছে দলীয় কার্যালয়ে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ দেখান। তারপর তাঁরা লাল চকের দিকে
মিছিল করে এগতে শুরু করলে পুলিশ বাধা দেয়। সেইসময় সাংবাদিকদের সামনে ক্ষোভ প্রকাশ
করে মেহবুবা মুফতি বলেন, ‘‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, শুধু ৩৭০ ধারা ফেরানোর লড়াই নয়।
কাশ্মীরের যাবতীয় সমস্যা সমাধানের জন্য লড়াই চলবে। যেভাবে সংবিধান বদলে ফেলছে
বিজেপি, তাতে তো আর কিছুদিনের মধ্যেই জাতীয় পতাকা বদলে গেরুয়া পতাকা ওড়াবে।
আমাদের হারানো সব কিছু ফেরাতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’’ পরে এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, ‘‘জম্মু-কাশ্মীর
নিয়ে বিজেপি’র বিদ্বেষ পরায়ণ মনোভাব সামনে চলে এসেছে। এখন এই নিপীড়ণ এবং ভীতির
পরিবেশ দেশজুড়েই কড়া নাড়ছে।’’
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা
ন্যাশনাল কনফারেন্স প্রধান ফারুক আবদুল্লা নওয়াই-সুভে এক বৈঠক করেন। তিনি বলেন, ‘‘২০১৯’র এই দিনটি বিশ্বাস
ভঙ্গের দিন। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত আমরা কখনওই মেনে নিইনি। আশা রাখি, সুপ্রিম
কোর্ট এই অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক এবং একপাক্ষিক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের রায়
দেবে। আমাদের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য শান্তিপূর্ণ লড়াই চালিয়ে যাব।’’ ন্যাশনাল
কনফারেন্স নেতা, জম্মু-কাশ্মীরের আরেক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা
বলেন, ‘‘সামনের লড়াই সংগ্রামের পথে হয়তো অনেক বাধা আছে। নানারকমভাবে আমাদের
প্রতিরোধ করা হবে। কিন্তু আমরা মাথা নোয়াবো না।’’ মৌলানা আজাদ রোডে কংগ্রেস
কর্মীরা তাঁদের দলীয় কার্যালয়ের ভিতরে জড়ো হলেও পুলিশ পথে নামতে দেয়নি।
এদিকে, দলীয়
কার্যালয়ে বৈঠকের পর ফারুক আবদুল্লাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয় বলে এক ন্যাশনাল
কনফারেন্স নেতা সোস্যাল মিডিয়ায় জানান। পুলিশ অবশ্য তা অস্বীকার করেছে। ‘ভুয়ো খবর’ বলে উড়িয়ে
দিয়েছে।
বিরোধীদের চাপের মুখে বাধ্য হয়ে
জম্মু-কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর এদিন দাবি করেছেন, ‘‘৩৭০ ধারা
প্রত্যাহারের পর উপত্যকার যুবরা স্মার্ট ফোন হাতে কাজে আগ্রহী হয়ে উঠেছে, পাথর ছোড়ার
বদলে।’’ আবার জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের দাবি, বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পর
থেকে ৮৮ শতাংশের বেশি অপরাধমূলক ঘটনা কমে গিয়েছে তার আগের তিন বছরের তুলনায়।
সন্ত্রাসবাদ-উগ্রপন্থা দমন, যুবদের
কর্মসংস্থান সহ একাধিক আশ্বাস শুনিয়েছিলেন অমিত শাহ। বাস্তবে প্রতিদিনই উপত্যকার
বিভিন্ন প্রান্তে গুলির লড়াই চলছে। নিরীহ নাগরিকদেরও উগপ্রন্থী তকমা দিয়ে খুন করার
অভিযোগ উঠেছে। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট থেকেই জানা গিয়েছে, এ বছর মে মাস
পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ সাধারণ নাগরিক, ১২ সেনা জওয়ান এবং ৬৬ উগ্রপন্থীর মৃত্যু হয়েছে।