বৈদ্যুতিকীকরণের নামে দেড়শো কোটি তছরুপে অভিযুক্ত অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী
-
বিশ্বজিৎ দাস
- Jul 26, 2022 16:36 [IST]
- Last Update: Jul 26, 2022 16:36 [IST]
বৈদ্যুতিকীকরণের নামে প্রায় দেড়শো কোটি টাকা তছরুপ হয়েছে বিজেপি শাসিত অরুণাচল প্রদেশে। এই কেলেঙ্কারিতে পরোক্ষভাবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খাণ্ডু জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। সোমবার দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খণ্ডন করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন খাণ্ডু। যদিও হাইকোর্টে মামলার শুনানিতে রাজ্য সরকার নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রামীণ জ্যোতি যোজনা (ডিডিইউজিওয়াই)’র মাধ্যমে রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে বৈদ্যুতিকীকরণের জন্য কেন্দ্র থেকে ১৪২ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকা পায় অরুণাচল প্রদেশ। মূলত রাজ্যের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা জেলা চিন সীমান্তবর্তী পশ্চিম কামেং, তাওয়াং ও নেমসাই জেলায় বৈদ্যুতিকীকরণের জন্য এই টাকা বরাদ্দ হয় ২০১৮-১৯ আর্থিক বছরে। গোটা রাজ্যে বৈদ্যুতিকীকরণে কাজের বরাত পান খোদ মুখ্যমন্ত্রীর ভাই । ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাজ্যের বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হয় কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প গ্রামীণ জ্যোতি যোজনার মাধ্যমে রাজ্যের প্রতিটি কোণে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর মাসিক ‘মন কি বাতে’ অরুণাচলের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে বলে গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করেন।
সরকার থেকে তা দাবি করা হলেও বাস্তবে দেখা যায় বেশিরভাগ জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটিই পোতা হয়নি। কোথাও খুঁটি পোতা হলেও তাতে লাইন টানা হয়নি। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কথা বলা হলেও দেখা যায় অসংখ্য গরিব মানুষের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়া হয়েছে। বহু এলাকায় ঘুষ নিয়েও বিদ্যুৎ সংযোগ মিলেনি। একাধিক সাব-স্টেশনের কাজ অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। জিমিতাঙের সাব-স্টেশনের কাজ অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে থাকলেও রাজ্যের বিদ্যুৎ বিভাগ ঘোষণা করে এটি নাকি চালু হয়ে গেছে।
আরও আশ্চর্যের বিষয় হলো, কাকু পটম নামের রাজ্যের এক মানবাধিকার কর্মীর আরটিআই'র জবাবে দেখা যায় বিনা টেন্ডারে কাজের বরাত মুখ্যমন্ত্রীর ভাইকে দেওয়া হয়েছে। এই বিশাল পরিমাণ টাকার কাজের জন্য সরকার থেকে ই-টেন্ডার কিংবা সংবাদপত্রে কোনও টেন্ডার আহ্বানই করা হয়নি। তাতেই স্পষ্ট হয়ে পড়ে বৈদ্যুতিকীকরণের নামে কয়েক কোটি টাকা তছরুপ হয়েছে। তাতে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর পরিবার জড়িত।
এই দুর্নীতির তদন্তের জন্য গত জুন মাসে গুহাহাটি হাইকোর্টের ইটানগর বেঞ্চে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন মানবাধিকার কর্মী কাকু পটম। ডিভিসন বেঞ্চের জাস্টিস এসকে মেধি ও জাস্টিস কাখেতু সেমার এজলাসে মামলার শুনানি শুরু হয়। গত ৮ জুন এই মামলার প্রথম শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সোমবার দ্বিতীয় শুনানি হয়েছে। দু’টি শুনানিতে অরুণাচল সরকার প্রয়োজনীয় নথি দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগকারীর আইনজীবী মেহমুদ প্রাচা জানিয়েছেন। দুর্নীতির তদন্ত হাইকোর্টের তত্বাবধানে করার দাবি জানিয়েছেন অভিযোগকারী।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীল নীতির বুলি আওড়ানো অরুণাচলের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে বিভিন্ন সরকারি কাজে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এবার বিদ্যুৎ কেলেঙ্কারিতেও মুখ্যমন্ত্রীর নাম জড়িয়ে পড়েছে। সোমবার নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খণ্ডন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী খাণ্ডু। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, তাঁর সরকারকে বদনাম করতে বিরোধীরা চক্রান্ত করছে। ধর্ষণে অভিযুক্ত রাজ্যের বিজেপি বিধায়ক লোকাম তাসারকে পুলিশ কেন গ্রেপ্তার করতে পারছে না, এই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার পরিবারের বিরুদ্ধে জমি, পিপিই কিট কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে। ভূমিহীনদের নামে বরাদ্দ প্রায় ২৯ বিঘা জমি হরফ করেছে মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রীর সংস্থা। এছাড়া, কোভিডের শুরুতে বিনা টেন্ডারে পিপিই কিট বাজার দরের চেয়ে দ্বিগুণ দামে আসাম সরকারের কাছে বিক্রি করেছে মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রীর সংস্থা। আরটিআই’র জবাবে এই তথ্য সামনে আসার পরও তদন্তে নারাজ মুখ্যমন্ত্রী।