ইতিহাস নয় গল্প
-
-
- Jun 12, 2022 18:04 [IST]
- Last Update: Jun 12, 2022 18:04 [IST]
হজরত মহম্মদ সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্যের প্রতিবাদে যখন সারা দেশজুড়ে বিক্ষোভ চলছে তখন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলছেন ভারতে ইতিহাস বদলে তারা তাদের নিজেদের মতো করে নতুন ইতিহাস লিখবেন, কেউ তাদের আটকাতে পারবে না। কেন তারা ইতিহাস বদলাতে এতটা মরিয়া এবং বেপরোয়া? আরএসএস’র হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শের ঠিকাদারি যাদের ঘাড়ে বর্তেছে সেই বিজেপি এখন রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে আরএসএস নির্দেশিত ইতিহাস রচনার হুলিয়া জারি করতে চাইছে। তথ্য-প্রমাণ নির্ভর আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার মধ্য দিয়ে বিশ্ব যে ইতিহাস রচনার ধারা বইছে যুগ যুগ ধরে, যে ধারায় ভারতের ইতিহাস গবেষকরা অতিগুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন কার্যত তাদের অস্বীকার ও অবজ্ঞা করেই অমিত শাহ তাদের পছন্দ মতো ও মনের মতো ইতিহাস রচনার হুমকি দিয়েছেন। পরোক্ষে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন শাসন ক্ষমতার জোরে তথ্য-প্রমাণ ও যুক্তির নিক্তিতে বিচার বিশ্লেষণ করে এতদিন রচিত হয়েছে তাকে সরিয়ে ধর্ম ও পুরাণ ভিত্তিক গল্প ও লৌকিক কাহিনিকে ভিত্তি করে ভিত্তিহীন কল্পিত ইতিহাসকেই তারা সরকারিভাবে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেবেন। অর্থাৎ সরকারি মদতে শিক্ষা ব্যবস্থার সর্বস্তরে মনের মাধুরি মেশানো কাল্পনিক কাহিনিকে ইতিহাসরূপে পড়ানোর ও শেখানোর ব্যবস্থা করবেন। এমনকি আগামীদিনে ইতিহাস গবেষণায় বা রচনায় যাবতীয় সরকারি আনুকূল্য যাবে এই ধারার দিকেই। রাষ্ট্রীয় মদতে লেখা হবে মিথ্যা, বানানো ও কল্পিত ইতিহাস।
হিন্দুত্ববাদী আরএসএস’র ভিত্তি যেহেতু মুসলিম বিরোধিতা তাই তারা সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, এমনকি রাষ্ট্রনৈতিক কোনও ক্ষেত্রেই মুসলিমদের অবদান স্বীকার করে না এবং সহ্যও করে না। আরএসএস ইতিহাস বলতে বোঝে হিন্দুদের ইতিহাস, হিন্দু ধর্মের ইতিহাস, হিন্দু রাজাদের ইতিহাস। আর সেই ইতিহাসে থাকবে কেবলমাত্র হিন্দু রাজা, হিন্দু নেতাদের গৌরবের, সাফল্যের, গগণচুম্বি স্পর্ধার ইতিহাস। অবশ্য সেখানে তাদের শঠতা, নীচতা, অন্যায়, হিংসা ইত্যাদির জায়গা হবে না। আর এই হিন্দু গৌরবের ইতিহাস লেখার জন্য কোনও তথ্য-প্রমাণ বা বিজ্ঞান ভিত্তিক গবেষণার প্রয়োজন নেই। প্রচলিত অপ্রচলিত গল্পকাহিনির সঙ্গে নিজেদের ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা জুড়ে দিয়ে হবে সেই ইতিহাস। অর্থাৎ আরএসএস’র দেওয়া গাইডলাইন অনুযায়ী লিখতে হবে। সত্যকে মুছে দিয়ে, অস্বীকার করে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে ইতিহাস রূপে। আরএসএস যেমন বানানো গল্প ও তথ্য দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করে ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা নাকি হু হু করে বাড়ছে। অচিরেই নাকি ভারতে মুসলিম সংখ্যা হিন্দুদের ছাড়িয়ে যাবে। অথচ বাস্তবের সঙ্গে এর কোনও মিল নেই। বিগত সাত দশকে মুসলিম বেড়ে যাবার কোনও প্রমাণ সরকারি-বেসরকারি কোনও সেন্সাস-সমীক্ষায় মেলেনি। লোককে গেলানো হয় মুসলিমরা নাকি এক একজন পাঁচ-সাতটা বিয়ে করে। প্রতি ক্ষেত্রে চার-পাঁচটি সন্তান হয়। ভারতে মুসলিম জনসংখ্যায় নারী ও পুরুষের যে সংখ্যা বহু শতক ধরে দেখা যাচ্ছে তাতে একাধিক বিয়ের জন্য মহিলা মিলবে না।
দেশে হাজার বছর ধরে মুসলিম শাসন চলছে। ব্রিটিশরা ২০০ বছর শাসন করেছে। স্বাধীনতার পর ৬০ বছর কংগ্রেস ও অন্যরা শাসন করেছে। কিন্তু কোনোদিন হিন্দু বিপন্ন এসব রব ওঠেনি। হাজার বছরের মুসলিম শাসনে ভারত থেকে হিন্দু নিশ্চিহ্ন হতে পারত, হয়নি। আজও ভারতে ৮৫ভাগ হিন্দু, মাত্র ১৫ ভাগ অহিন্দু। ভারতে হিন্দুরা কখনো বিপন্ন হয়নি, আজও বিপন্ন নয়। আরএসএস-বিজেপি এই মিথ্যা মনগড়া আতঙ্ক তৈরি করে তীব্র মুসলিম বিদ্বেষের রাজনীতির জাল পেতে হিন্দুদের জোটবদ্ধ করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাইছে। নতুন ইতিহাস লেখার উদ্দেশ্যও সেই মুসলিম বিদ্বেষ থেকে হিন্দুদের জোটবদ্ধ করা। মুসলিম বা অন্য ধর্মের থেকে হিন্দুদের কোনও বিপদ নেই। হিন্দুদের প্রধান বিপদ আরএসএস।