আম্বানি-আদানিরা এখন দেশের মালিক : সেলিম
-
গণশক্তির প্রতিবেদন
- Jul 18, 2022 09:27 [IST]
- Last Update: Jul 18, 2022 09:27 [IST]
তীব্র গরমে মাঠ ফেটে গেছে, আবাদি ফসল জলের অভাবে নষ্ট হচ্ছে। অথচ কেন্দ্র, রাজ্য কোনও সরকারেরই কোনও হেলদোল নেই। ওরা মানুষে মানুষে বিভেদের রাজনীতিতে ব্যস্ত। এদিকে, ডিজেল, বিদ্যুৎ, কীটনাশকের দাম বাড়ছে। অথচ ফসলের দাম মিলছে না। প্রথম ইউপিএ সরকারের আমলে জঙ্গলের অধিকার পাওয়া গিয়েছিল, এখন জঙ্গল কেটে জমি বেনামী হচ্ছে। এদেশের মালিক এখন আদানি, আম্বানিরা। পাহাড়, খেত, খনি, সব বিক্রি হয়ে যাচ্ছে আদানি, আম্বানিদের কাছে। দেশটা বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। বেইমান দালালদের দিয়ে দেশকে বাঁচানো যাবে না। মানুষ এককাট্টা হলেই তবেই চোর জোচ্চোরদের মসনদ থেকে টেনে হিঁচড়ে নামাতে পারবেন। সারা ভারত কৃষকসভার উত্তর দিনাজপুর জেলা ২৪তম সম্মেলনের প্রকাশ্য সমাবেশে এই আহ্বান জানান সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। এই প্রশ্নে শ্রীলঙ্কার উদাহরণ দিয়ে দেশকে বাঁচাতে হলে মানুষকে সংঘবদ্ধ, জোটবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
প্রচণ্ড গরম তীব্র রোদকে উপেক্ষা করেও রবিবার মানুষের ঢল নেমেছিল কালিয়াগঞ্জের তরঙ্গপুর নিম্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের মাঠে। রমণীকান্ত দেবশর্মা, আলমগীর নামাঙ্কিত মঞ্চে এই সমাবেশে তিনি বলেন, জোতদার বা জমিদার, মস্তান বা লেঠেলবাহিনী হোক, আর পুলিশ হোক, তাদের মোকাবিলা করেই শক্ত ডান্ডায় লাল ঝান্ডাকে সঙ্গে নিয়ে নিজের ফসল নিজের ঘরে তুলতে হবে। সবসময় সঙ্গে থাকবে কৃষকসভা। তেভাগা থেকে তেলেঙ্গানা জমির দাবিতে মানুষের হকের দাবিতে কৃষক নিজের ফসল নিজের ঘরে তুলতে পুলিশের কোনও বাধাই মানেনি। মানুষ ছিলেন জোটবদ্ধ। গত ১১ বছরের রাজ্যের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে কৃষকের কাস্তের ধার যদি কমে গিয়ে থাকে, তবে কাস্তেটাকে ধার দিয়ে নিজের জান বাঁচাতে হবে, মান বাঁচাতে হবে। অবিভক্ত দিনাজপুর জেলার তেভাগার ইতিহাস স্মরণ করে পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায় মাটিটাকে শক্তপোক্ত করতে হবেই।
তিনি বলেন, মমতা ব্যানার্জি ক্ষমতায় এসে চুপ থাকতে বলেছিলেন, আর এখন সংসদে চোরকে ‘চোর’ বলা যাবে না, ডাকাতকে ‘ডাকাত’ বলা যাবে না, ধর্ষণের ঘটনাকে ‘ধর্ষণ’ বলা যাবে না। সবাইকে চুপ করে বসে থাকতে হবে। অমিত শাহ, যোগীর রাজ্যে যা সব হচ্ছে, চুপ থাকতে হবে। তৃণমুলের ক্ষমতার আসার পরেই মানুষকে চুপ করিয়ে ডাকাতি করতে নেমে পড়েছে। কয়লা পাচার, সোনা পাচার, বালি পাচার, নারী পাচার চলছে। এসব কীর্তি ধরা পড়লেই দার্জিলিঙে গোপন বৈঠক হবে। দুধে, আমে মিলে যাবে। সেই ফাঁকে ভাইপোর বৌ সিঙ্গাপুর থেকে দুবাই পাচারে ব্যস্ত থাকবে। এরাজ্যে বেকারদের চাকরি নেই। পুলিশে চাকরি নেই। সিভিক দিয়ে থানা চলছে। আর রাস্তায় ১২ চাকা ১৬ চাকা থেকে তোলা তোলার কাজে ব্যস্ত। থানা, এসপি থেকে কালীঘাট পৌঁছে যাচ্ছে সেই সব।
সমাবেশে সারা ভারত কৃষকসভার রাজ্য সম্পাদক অমল হালদার বলেন, মমতা ব্যানার্জির ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই রাজ্যে ২৬৪ জন কৃষক আত্মহত্যার পথকে বেছে নিয়েছেন। চাষযোগ্য জমি এখন চুক্তির ভিত্তিতে চলছে। নিজের জমি নিজের লাঙ্গল নিজে চাষ করতে পারছে না। বিপুল সংখ্যক মানুষ রাজ্য ছেড়ে ভিনরাজ্যে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। কৃষক খাবেন কী? খেত মজুর খাবেন কী? বাজারে কেনা কাটা নেই। ব্যবসায়ীরা মাথা চাপড়াচ্ছেন। কারখানা হবে না। যাই বা ছিল তোলা আদায়ে কারখানা গুটিয়ে নিয়ে পালাচ্ছে। মানুষের বাঁচার রাস্তা শেষ হয়ে গেছে। নরেন্দ্র মোদীর আমদানি করা আম্বানি আদানিরা দিদিমণির হাত ধরে চলে যাচ্ছে বাজার ব্যবস্থায়। আদানিরা মিল কিনেছে, গোডাউন করছে। দিদি আর মোদী মানুষকে ভিক্ষুকে পরিণত করবে এটাই ওদের কৌশল। এর বিরুদ্ধে মানুষ যখন জোটবদ্ধ হচ্ছে তখন হিন্দু নাকি মুসলমান মানুষে মানুষে বিভাজন, যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা দিয়ে নজর ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে গণআন্দোলন হাতিয়ার।
সংগঠনের রাজ্য সভাপতি বিপ্লব মজুমদার বলেন, ৩৭৮ দিনের দেশজুড়ে কৃষক আন্দোলনে ভারত সরকারের পিছু হটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা। জেলা ব্লক গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে পৌঁছাতে হবে সংগঠনের কর্মীদের। পুলিশ, মস্তান জোতদার জমিদারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। প্রত্যেক অঞ্চলের সম্পাদক সভাপতি হবেন কৃষক পরিবারের মানুষ। দিনাজপুর জেলার তেভাগা আন্দোলনের ইতিহাসকে অভিমুখ করেই লড়াইয়ের মাঠকে আরও বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
সমাবেশে সিপিআই(এম) জেলা সম্পাদক আনোয়ারুল হক বলেন, বাপ-ঠাকুরদার আমলের জমি চরিত্র বদল হচ্ছে। পাট্টা বদল হচ্ছে। বিএলআরও অফিস বাস্তুঘুঘুর বাসা তৈরি হয়েছে। অধিকারের লড়াইকে প্রতিষ্ঠিত করতে গণআন্দোলন একমাত্র হাতিয়ার।
এছাড়াও সমাবেশে সংগঠনের জেলা সম্পাদক সুরজিত কর্মকার বক্তব্য রাখেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের জেলা সভাপতি পরিতোষ রায়। রবিবার বিকালেই শুরু হয়েছে জেলা সম্মেলন।