ভুলাভেদায় অনাহারে মৃত্যু দিনমজুরের
-
গণশক্তির প্রতিবেদন
- Aug 05, 2022 09:46 [IST]
- Last Update: Aug 05, 2022 09:46 [IST]
আবারও অনাহার ও অপুষ্টিজনিত অসুখে মৃত্যু হলো বেলপাহাড়ি ব্লকের ভুলাভেদা মৌজায় এক দিনমজুরের। লকডাউনে কাজ হারিয়ে গ্রামে ফিরে আসেন পরিবার নিয়ে সঞ্জয় সর্দার। বুধবার সন্ধ্যায় ঝড়বৃষ্টির সময় বাড়ির উঠানে নিস্তেজ অবস্থায় শুয়ে থাকা অবস্থায় স্ত্রী ডাকাডাকি করে দেহে হাত দিলে দেখেন ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে। বনের কুন্দলি আর চিরকা আলুসেদ্ধ করে স্বামীকে খেতে ডাকলেও আর সেই খাবার খাওয়ানো যায়নি। ভাঙাচোরা, খড়ের ছাউনি দেওয়া চালাঘরে তখন কান্নার রোল। জড়ো হন প্রতিবেশীরা।
খিদের জ্বালায় ছুটতেন কাজের সন্ধানে এক প্রান্ত অন্যপ্রান্তে। বনের চিরকা আলু, কুন্দলি সংগ্রহ করেই সেদ্ধ করেই বেশিরভাগ দিন চলতো সংসার। দিনে একবার খাওয়ার জোটানোতেই চালাতেন লড়াই। লকডাউনে কাজ চলে যাওয়ার পর ফিরে আসেন বউ বাচ্চা নিয়ে ঘরে। এখানেও জবকার্ডে মেলেনি কোনো কাজ। গত এক বছরের বেশি এইসব গ্রামে একশ দিনের কাজই হয়নি। মাস চারেক আগে সঞ্জয় সর্দার এক ঠিকাদারের সাথে ওডিশা গিয়েছিলেন কাজের সন্ধানে। সেখানেও কাজ না জোটায় ফিরে আসেন। অনাহার আর অপুষ্টিজনিত অসুখে কয়েক মাসের মধ্যে শরীর নেতিয়ে পড়ে বলে জানান ২৬ বছরের স্ত্রী সরস্বতী সর্দার। বাড়িতে নয় বছরের মেয়ে ও ছয় বছরের ছেলে রয়েছে। একমাত্র উপার্জনশীল ছিলেন পরিবারে মৃত সঞ্জয় সর্দার (৩০)।
লালগড়ের পূর্ণাপানির ছায়া নিয়ে এখন ধুঁকছে বনাঞ্চলের একাধিক গ্রাম। অনাহার ও অপুষ্টিজনিত অসুখে আক্রান্ত শিশু থেকে প্রসূতি সহ খেতমজুর মানুষ। গত এক বছর অধিক সময় জবকার্ডে কোনো কাজ নেই। এবছর বৃষ্টি কম হওয়ায় এখনো চাষের কাজ শুরু না হওয়ায় কৃষি শ্রমিকদের হাতে বিকল্প কোনও কাজ নেই। রুটি রুজির সঙ্কটে দিশেহারা বনাঞ্চলের খেতমজুর মানুষ। জঙ্গলের অধিকার কেড়ে নেওয়া সহ জঙ্গল থেকে রসদ সংগ্রহে বাধা সহ জরিমানা অত্যাচার করার অভিযোগ এলাকাবাসী সহ মৃত সঞ্জয় সর্দারের ভাই রণজিৎ সর্দারের। তিনি বলেন, ‘‘মাস চারেক আগে দাদা জঙ্গলের শুকনো কাঠ সাইকেলে নিয়ে ফিরছিলেন। অফিসাররা সাইকেল সমেত সেই কাঠ এবং কাছে ২০ টাকা ছিল, সেটাও নিয়ে নেয়। বলে দু’হাজার টাকা জরিমানা দিলে সাইকেল ফেরত দেবে। কোথায় পাবে এই টাকা? অর্ধেক দিন হাঁড়ি চড়ে না মোদের। কাছে দু’হাজার টাকা থাকলে কি জঙ্গলে শুকনো কাঠ জোগাড়ে যেত?’’
তিন বছর আগেই অপুষ্টি আর অনাহারে ভয়ানক ছবি উঠে এসেছিল লালগড়ের পূর্ণাপানি গ্রামে। অক্টোবর মাসের ১৫ দিনের মধ্যে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছিল শবর জনজাতির অনাহার ও অপুষ্টির কারণে। এবার অনেকটা একই ছবি বনাঞ্চলের একের পর এক গ্রামে। ভোর হওয়ার আগেই জঙ্গলে ভিড় মানুষের। কুন্দলি, চিরকাআলু সহ নানা ধরনের ছত্রাক জোগাড়ে।