প্রধানমন্ত্রীর ‘স্বপ্ন’ বনাম ‘রূপকার’ মুখ্যমন্ত্রী তরজার মাঝেই শিয়ালদহ থেকে মেট্রোর সূচনা
-
নিজস্ব প্রতিনিধি
- Jul 12, 2022 15:03 [IST]
- Last Update: Jul 12, 2022 15:03 [IST]
নিজস্ব সংবাদদাতা: হাওড়া, ১১ জুলাই— বিজেপি-তৃণমূলের মেকি বিরোধিতার রাজনীতির পরিচিত ছকেই হলো ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর শিয়ালদহ থেকে ফুলবাগান পথের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। সোমবার যথারীতি উদ্বোধনী মঞ্চকে প্রধানমন্ত্রীর গুণগানের মঞ্চে পরিণত করলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। যেমন রাজ্যের কোনও অনুষ্ঠানে রাজ্যের মন্ত্রীদের মুখে মুখ্যমন্ত্রীর গুণগান শোনা যায়, ঠিক তেমনই।
অন্যদিকে, তৃণমূলের পক্ষ থেকে এই অনুষ্ঠান বয়কট করা হয়েছে, বলে জানা গেছে। তৃণমূলের পক্ষ থেকে মমতা ব্যানার্জিকে ‘এই প্রকল্পের রূপকার’ দাবি করে তাঁকে অসম্মান জানানো হয়েছে বলে অনুষ্ঠান বয়কট করার কথা জানানো হয়। স্মৃতি ইরানি ‘ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্প’কে ‘প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন’ দাবি করে বলেন, ‘সেই স্বপ্ন আজ রূপায়িত হতে যাচ্ছে।’
শিয়ালদহ থেকে ফুলবাগান পর্যন্ত ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো চলাচলের উদ্বোধন করেন স্মৃতি ইরানি। হাওড়া ময়দানে মেট্রো স্টেশন থেকে পতাকা নেড়ে শিয়ালদহ থেকে ফুলবাগান পর্যন্ত মেট্রো চলাচলের সূচনা করেন তিনি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মেট্রো রেলের জেনারেল ম্যানেজার অরুণ অরোরা, জাপান দূতাবাসের কনসাল জেনারেল সহ রেলের উচ্চপদস্থ কর্তাব্যক্তিরা। অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি রাজ্যের কোন মন্ত্রী, বিধায়ক, এমনকি কোন সাংসদকে। তাঁদের না আসা নিয়ে কোন কথাও উচ্চারণ করা হয়নি অনুষ্ঠান মঞ্চে।
যথারীতি এই প্রকল্পের ক্ষেত্রেও বিজেপি এবং তৃণমূল পাল্লা দিয়ে ইতিহাসকে নিজের মতো করে তৈরি করতে চাইছে। অথচ, প্রামাণ্য তথ্য বলছে, ২০০৯ সালে যখন এই প্রকল্পের শিলান্যাস করা হয় তখন দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মনমোহন সিং আর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শোনা যায়নি একবারও এই প্রকল্পের শিলান্যাসের কথা। সকলের সামনে এমনভাবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হলো যাতে মনে হবে এই প্রকল্পটি দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ইচ্ছায় ও তৎপরতায় তৈরি হচ্ছে!
এদিন রাজ্যের প্রাক্তন নগরোন্নয়ন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য এই প্রকল্পের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, বিজেপি সরকার এবং তৃণমূল সরকার, উভয়ের পক্ষ থেকেই ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টা হচ্ছে। তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের দীর্ঘ প্রচেষ্টার ফলেই জাপান সরকারের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থার অর্থ ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো করিডর প্রকল্পে আনা সম্ভব হয়েছিল। তিনি বলেন, প্রথমে এই প্রকল্পের পরিকল্পনা রাজ্যের নগরোন্নয়ন দপ্তরের পক্ষ থেকে করা হয়েছিল। আমি নিজে টোকিও-তে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)’র চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করি। তিনি এই প্রকল্পে সাহায্য করার উৎসাহ দেখালে তাঁদের পরামর্শমতোই একটি পৃথক সংস্থা এর জন্য তৈরি করা হয়। কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারের সমপরিমাণ যৌথ অংশীদারিত্বে কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন (কেএমআরসি) নামে এই সংস্থা গঠিত হয়। মোট ৪৮৭৪.৫৮কোটি টাকার এই প্রকল্পে ভারত সরকার ১১৬৯কোটি টাকা, রাজ্য সরকার ১৪৫২কোটি টাকা এবং অবশিষ্ট ২২৫৩কোটি টাকা জাইকা’র পক্ষ থেকে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ বাবদ পাওয়া যাবে, বলে জানা যায়। অশোক ভট্টাচার্য বলেন, সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এই প্রকল্পের জন্য আন্তরিকভাবে উদ্যোগ নিয়েছিলেন বলেই এটা সম্ভব হয়েছিল। তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শেই এই প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্ব নগরোন্নয়ন দপ্তরের হাত থেকে পরিবহণ দপ্তরের হাতে দেওয়া হয় এবং তৎকালীন পরিবহণ দপ্তরের প্রধান সচিব সুমন্ত্র চৌধুরিকে কেএমআরসি’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর করা হয়। অশোক ভট্টচার্য বলেন, পরবর্তীকালে মমতা ব্যানার্জি কেন্দ্রের রেলমন্ত্রী হওয়ার সুবাদে হাওড়া ও শিয়ালদহে মেট্রো স্টেশনের পরিকল্পনাকে বানচাল করতে উঠেপড়ে লেগেছিলেন। অথচ হাওড়া ও শিয়ালদহ রেল স্টেশনের সঙ্গে যাত্রাপথে সংযোগ না হলে ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের মূল সুবিধাই নিতে পারবেন না যাত্রীরা। আমরা সেদিন কেবলমাত্র প্রকল্পটির রূপায়ণের স্বার্থে এই কদর্য রাজনীতিকে মর্যাদার লড়াইতে নিয়ে যাইনি। বরং উন্নয়নের স্বার্থে গোটা প্রকল্পটি রেলমন্ত্রকের হাতে তুলে দিতে রাজি হয়ে যাই। এই ইতিহাসকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।