রাজ্যে শ্রদ্ধায় পালিত কাকাবাবুর জন্মদিবস
-
-
- Aug 06, 2022 14:40 [IST]
- Last Update: Aug 06, 2022 14:40 [IST]
ভারতে কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ, স্বাধীনতা সংগ্রামী ও বিশিষ্ট সাংবাদিক কমরেড মুজফ্ফর আহ্মদের ১৩৪তম জন্মদিবস পালিত হলো শুক্রবার। এদিন সকাল থেকেই রাজ্যের সর্বত্র সিপিআই(এম) সহ বিভিন্ন বামপন্থী গণসংগঠনের উদ্যোগে হয় নানা অনুষ্ঠান। প্রতিটি জেলা দপ্তর সহ পার্টির বিভিন্ন স্তরের দপ্তরগুলিতে কাকাবাবুর প্রতিকৃতিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান নেতৃবৃন্দ। রক্তদান শিবির, আলোচনাসভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে কাকাবাবুকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এদিন সকালে কাকাবাবুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পার্ক সার্কাসে গোবরা গোরস্থানে তাঁর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ। সেখানে সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ শ্রদ্ধা জানান পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, কলকাতা জেলা সম্পাদক কল্লোল মজুমদার প্রমুখ।
এরপরে সকাল দশটা নাগাদ সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির দপ্তর মুজফ্ফর আহ্মদ ভবনে কাকাবাবুর আবক্ষ মূর্তিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। শ্রদ্ধা জানান মহম্মদ সেলিম, পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য সূর্য মিশ্র, নীলোৎপল বসু, রামচন্দ্র ডোম, পার্টি নেতা রবীন দেব, মিনতি ঘোষ, আভাস রায়চৌধুরি, অনাদি সাহু, কল্লোল মজুমদার, কনীনিকা ঘোষ, প্রবীণ নেতা মদন ঘোষ, দীপক দাশগুপ্ত, গণশক্তির সম্পাদক দেবাশিস চক্রবর্তী, সহকারী সম্পাদক অতনু সাহা সহ পার্টির রাজ্য দপ্তরের কর্মীবৃন্দ এবং বিভিন্ন গণসংগঠনের নেতৃত্ব। এখানে মাল্যদান কর্মসূচি শেষ হলে নেতৃবৃন্দ আসেন গণশক্তি ভবনে। সেখানে মুজফ্ফর আহ্মদ পাঠাগারে কাকাবাবুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নানান তাঁরা। এদিন থেকে পাঠাগারে চালু হয়েছে নিউজপেপার ক্লিপিংস পরিষেবা, যা আনুষ্ঠানিকভাবে সূচনা করেন বিমান বসু।
নেতৃবৃন্দ আবার মুজফ্ফর আহ্মদ ভবনে ফিরে এসে পার্টির রাজ্য দপ্তরের পাঠাগারে কাকাবাবুর প্রতিকৃতিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এর পরে গণশক্তি প্রেসে কাকাবাবুর আবক্ষ মূর্তিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ৩১, আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে অবস্থিত এই বাড়িতেই একসময় ছিল পার্টির রাজ্য দপ্তর। এখানে গণশক্তি প্রিন্টার্সের উদ্যোগে একটি মনোজ্ঞ আলোচনা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। আলোচনার বিষয় ছিল ‘মানুষের চিন্তা-চেতনার উন্নতিতে ছাপাখানা ও মুদ্রণ প্রযুক্তির ভূমিকা’। মুখ্য আলোচক ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত মুদ্রণ প্রযুক্তিবিদ চিন্ময় ভট্টাচার্য। তাঁর বিস্তৃত আলোচনায় বিশ্বে ছাপাখানা আত্মপ্রকাশের পূর্বাপর, এই দেশ ও রাজ্যে তার পরম্পরা, পরাধীনতার আমল, তারই মধ্যে বাংলার নবজাগরণের সঙ্গে সঙ্গে মনীষীদের চেষ্টায় স্বদেশ চেতনার প্রসার, সংবাদপত্রের প্রকাশ ও প্রসার প্রসঙ্গ উঠে আসে। খ্রিস্টপূর্ব সময়কাল, মেসোপটেমিয়া সভ্যতা, চীন ও কোরিয়ায় তৎকালীন মুদ্রণ ব্যবস্থার স্বাতন্ত্র্য থেকে এই সময় বৈদ্যুতিন মুদ্রণব্যবস্থার ক্রমআধুনিকতার সময় পেরিয়ে যাওয়া এবং আগামীতে এই মুদ্রণ শিল্পের নিকট ও সুদূর ভবিষ্যত নিয়ে তিনি আলোচনা করেন।
এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিমান বসু। তিনি এই আলোচনার প্রাসঙ্গিকতা, কমিউনিস্ট পাটির মুখপত্র ‘স্বাধীনতা’ পরবর্তীতে ‘গণশক্তি’-র ওপর শাসক শ্রেণির সংগঠিত আক্রমণ ও যুঝে যাওয়ার লড়াই প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। আজকের এই সময় এবং রাজ্যের বর্তমান সরকার, শাসক দলের পক্ষে নানান প্রতিবন্ধকতা তৈরির বিবরণ তিনি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমাদের পত্রিকা আমাদের সংগঠন। তাকে বাঁচিয়ে রাখার দায় তুলে নিয়েছেন শুভানুধ্যায়ী এবং পত্রিকার নিরলস কর্মীবৃন্দ। তাঁদের ভয় দেখিয়ে পথ চলা থামানো যাবে না।
আলোচনা শেষে হয় একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পরিবেশন করে ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের হাওড়া পরিচয় শাখা। তাদের নিবেদন ছিল দুটি নাটক। একটি হলো রাজ্যে সম্প্রতি শিক্ষাক্ষেত্রে সংগঠিত ভয়াবহ আর্থিক দুর্নীতি, চাকরিপ্রার্থীদের বঞ্চনা করার মর্মান্তিক কাহিনি এবং মন্ত্রীর সরাসরি তার সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়টি অভিনীত হয়। এই নাটকের নাম ‘কী ভাবছেন’। অপর নাটকটি হলো ‘এখনো কাঁদছে মানুষ’। এই নাটকেও অনুরণিত হয় প্রতারিত অপমানিত মানুষের কান্না ও প্রতিবাদের ভাষা। নাটক ছাড়াও ছিল আবৃত্তি, গান ও নৃত্যায়ন। হাওয়াই গিটারে গণচেতনার সুর শোনায় ছোট্ট আরণ দাশগুপ্ত। ততক্ষণে ক্যানভাসে শিল্পী মনীষ দেবের রং-তুলিতে ফুটিয়ে তুলেছেন অবয়ব।