মুজফ্ফর আহ্মেদ স্মৃতি পুরস্কার, ‘বামপন্থার পথিকৃৎ’, সম্মান গ্রহণ করেব বললেনঅমর্ত্য সেন
-
-
- Aug 06, 2022 11:36 [IST]
- Last Update: Aug 06, 2022 11:36 [IST]
‘‘পারিবারিক এবং রাজনৈতিক সূত্রে মুজফ্ফর আহ্মদের কথা ছেলেবয়স থেকে অনেক শুনেছি। আজ এই পুরস্কার গ্রহণ করে মুজফ্ফর আহ্মদের প্রতি আমার অগাধ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।’’ বৃহস্পতিবার এই বার্তা দিয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। কমরেড মুজফ্ফর আহ্মদ সম্পর্কে তিনি এক বার্তায় লিখেছেন, ‘‘মুজফফর আহমদের স্মৃতির সঙ্গে আমার ‘হোম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’ বইটি যুক্ত হওয়ায় আমি খুবই খুশি হয়েছি। কারণ ভারতে বামপন্থার এই অন্যতম পথিকৃতের প্রতি আমার গভীর সম্মান ছাড়াও ওঁর সঙ্গে আমার এক পারিবারিক যোগাযোগও ছিল।’’
সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির উদ্যোগে বৃহস্পতিবার মহাজাতি সদনে ‘কাকাবাবু’ কমরেড মুজফ্ফর আহ্মেদের ১৩৪তম জন্মদিবস উপলক্ষে মুজফ্ফর আহ্মদ স্মৃতি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের ‘হোম ইন দ্য ওয়ার্লড: এ মেমোয়ার’ বইটি এবার বিশেষ পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হয়েছে। একইসঙ্গে কৌশিক চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘একুশ শতকে মার্কসীয় সমাজতত্ত্ব’, নেহাল আহমেদের ‘নাথিং উইল বি ফরগটেন: জামিয়া টু শাহীনবাগ’ এবং শম্পা সেনের ‘বং থিয়েটার: ম্যানিফেস্টো থেকে বাজার’ এই বছরের মুজফ্ফর আহ্মদ স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছে। অমর্ত্য সেন বাদে বাকি ৩ লেখকই এদিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন। অমর্ত্য সেনের হয়ে পুরস্কার গ্রহণ করেছেন প্রতীচী ট্রাস্টের ডিরেক্টর ড. মানবী মজুমদার।
এদিন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ছাড়াও সূর্য মিশ্র, নীলোৎপল বসু, রামচন্দ্র ডোম, শ্রীদীপ ভট্টচার্য, মৃদুল দে, রবীন দেব, সুজন চক্রবর্তী, আভাস রায়চৌধুরী প্রমুখ। মুজফ্ফর আহ্মেদের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। পুরস্কার প্রাপকদের মানপত্র পাঠ করেন শ্রীদীপ ভট্টাচার্য।
মুজফ্ফর আহ্মেদ স্মৃতিরক্ষা কমিটির সভাপতি মৃদুল দে এদিন বলেন, ‘‘প্রতি বছরই এই পুরস্কার দেওয়া হয়। অন্যান্য বছরের তুলনায় এই বছর আমরা বেশিই বই পেয়েছি। প্রতিটি বইই মূল্যবান। যাঁরা বই পাঠিয়েছেন, তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ। বইগুলির মধ্য থেকে বেছে নিয়ে ৪টি বইকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।’’ অমর্ত্য সেনের ‘হোম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড: এ মেমোয়ার’ বইটির জন্য এদিন ডঃ মানবী মজুমদারের হাতে পুরস্কার ও সম্মাননা প্রদান করেন মহম্মদ সেলিম। এদিন লেখক কৌশিক চট্টোপাধ্যায়কে সম্মাননা ও সংবর্ধনা প্রদান করেন সূর্য মিশ্র। শম্পা সেনকে সংবর্ধনা ও সন্মাননা দেন রামচন্দ্র ডোম। নেহাল আহমেদকে পুরস্কার দিয়ে সংবর্ধিত করেন বিমান বসু।
এরপরেই অমর্ত্য সেনের পাঠানো এক বার্তা পাঠ করে শোনান প্রতীচী ট্রাস্টের ডিরেক্টর। অমর্ত্য সেন কমরেড মুজফফর আহমেদ সম্পর্কে লিখেছেন, ‘‘উনি ছিলেন আমার পিসতুতো দাদা জ্যোতির্ময় সেনগুপ্ত, যাকে আমরা সিধুদা বলে জানতাম, তাঁর বিশেষ বন্ধু। সিধুদা ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। ঢাকা ট্রেন রবারিতে ধরা পড়ে জেলে গেলেন। সেখানে তাঁর সঙ্গে মুজফ্ফর আহ্মেদের আলাপ হলো। সিধুদা এবং অন্যান্য বন্দী বিপ্লবীদের মুজফ্ফর আহ্মেদ বুঝিয়েছিলেন যে, ভারতের স্বাধীনতার জন্য শুধু জাতীয়তাবাদের মধ্যে আবদ্ধ থাকলে চলবে না, চাই জনসংগ্রাম। কারাগারের চার দেওয়ালের মধ্যে বহু বিপ্লবীর মত পরিবর্তন হয়েছিল। তাঁরা জেল থেকে বেরোলেন কমিউনিস্ট হয়ে। আমার সিধুদাও তাঁদের একজন। সিধুদা মানে জ্যোতির্ময় সেনগুপ্তর সঙ্গে মুজফফর আহমদের বন্ধুত্ব বজায় ছিল সিধুদার মৃত্যু অবধি।’’
এদিন পুরস্কৃত বইগুলির প্রসঙ্গে নেতৃবৃন্দ বলেন, অমর্ত্য সেনের ‘হোম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড: এ মোমোয়ার’ বইটিতে স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলা ও ভারতের ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে। একদিকে বর্ণবিদ্বেষ এবং অন্যদিকে সামরিক বাহিনীর প্রতি সাধারণ মানুষের তীব্র ঘৃণার নানা উদাহরণ বইটিতে উঠে এসেছে। একইসঙ্গে হিন্দু জাতীয়তাবাদ কীভাবে বিভাজন প্রক্রিয়াকে মজবুত করেছে, তার নানা কাহিনী বইটিতে লিপিবদ্ধ রয়েছে। প্রগতিশীল ও বামপন্থী ভাবধারা, দর্শন ও ইতিহাস চর্চা, মানুষে মানুষে সৌহার্দ্য-সম্পর্কও উঠে এসেছে এই লেখনীতে। কৌশিক চট্টোপাধ্যায়ের ‘একুশ শতকে মার্কসীয় সমাজতত্ত্ব’ শীর্ষক বইটিতে মার্কসীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজের তথ্যসমৃদ্ধ বিশ্লেষণ এবং ব্যাখ্যাকে তুলে ধরা হয়েছে। লেখিকা শম্পা সেনের ‘বং থিয়েটার: ম্যানিফেস্টো থেকে বাজার’ বইটিতে নয়া উদারনীতির প্রভাব কীভাবে নাট্য সংস্কৃতির উপর পড়েছে এবং তাকে রোখার জন্য ও বিপদ এড়ানোর জন্য নাট্যজগতে কীভাবে লড়াই-আন্দোলন চলছে, তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। নেহাল আহমেদের ‘নাথিং উইল বি ফরগটেন: জামিয়া টু শাহীনবাগ’ শীর্ষক বইয়ের প্রতি পাতায় শাসকের স্বৈরাচারী ভূমিকার বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনের সংগঠিত রূপ ফুটে উঠেছে। কীভাবে জাতের নামে ও বর্ণের নামে অত্যাচারে জর্জরিত হতে হয় ছাত্র-ছাত্রীদের, মুসলিম মহিলাদের— তা লেখক তুলে ধরেছেন এই বইয়ে।
এদিন পুরস্কার গ্রহণ করে নেহাল আহমেদ বলেন, ‘‘জামিয়া মিলিয়াতে যখন ছাত্র আন্দোলন চলছে, তখন আমি সেখানে ছাত্র ছিলাম। ছাত্রদের দৃষ্টিকোণ থেকে একটা দায়িত্ববোধ অনুভব করে এই বইটি লিখতে সমর্থ হয়েছি। যে আক্রমণ ও তার বিরুদ্ধে লড়াই ও প্রতিবাদ দেখেছি চোখের সামনে, সেই বিবরণ তুলে ধরেছি। এর অতীত প্রেক্ষাপট খুঁজতে চেষ্টা করেছি। আমি গর্বিত যে, বইটি এই মঞ্চে পুরস্কৃত হয়েছে।’’