আজ প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি ঘেরাও করবে কংগ্রেস
-
গণশক্তির প্রতিবেদন
- Aug 05, 2022 09:51 [IST]
- Last Update: Aug 05, 2022 09:51 [IST]
ন্যাশনাল হেরাল্ড এবং ইয়ং ইন্ডিয়ান ঘিরে দলের শীর্ষনেতাদের অপদস্থ করার ছক মোকাবিলায় বৃহস্পতিবার দ্বিমুখী রণকৌশল নিলো কংগ্রেস।
এদিন ইডি যখন কংগ্রেস মালিকানাধীন ন্যাশনাল হেরাল্ডের হোল্ডিং কোম্পানি ইয়ং ইন্ডিয়ানের দপ্তরে তল্লাশি চালাচ্ছে, তখনই একদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রণংদেহী ভঙ্গীতে পরপর তোপ দেগেছেন রাহুল গান্ধী; অন্যদিকে দ্রব্যমূল্য, বেকারী এবং জিএসটি’র হারের বেনজির বৃদ্ধি নিয়ে রীতিমতো আক্রমণাত্মক কর্মসূচি ঘোষণা করে কংগ্রেস জানিয়ে দিয়েছে, শুক্রবার সারা দেশে তাদের জোরালো বিক্ষোভ হবে। দিল্লিতে লোককল্যাণ মার্গে গিয়ে ‘‘প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও’’ করবে তারা। পাশাপাশি, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করতে সকাল এগারোটায় রাষ্ট্রপতি ভবন অভিযানে যাবেন কংগ্রেসের সব সাংসদ।
কংগ্রেসের এই আকস্মিক বিক্ষোভ কর্মসূচি দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে মোদী-শাহ নিয়ন্ত্রণাধীন দিল্লি পুলিশের। ত্রস্ত হয়ে কংগ্রেসের সদর দপ্তরে এব্যাপারে একটি হুমকি-চিঠি পাঠিয়েছে পুলিশ। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কে সি বেণুগোপালকে লেখা চিঠিতে দিল্লি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার অমরুথা গুগুলোথ বলেছেন, ‘‘একমাত্র যন্তর মন্তর ছাড়া নয়াদিল্লি জেলার সর্বত্র ১৪৪ধারার নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা ভাঙলে আপনাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে দিল্লি পুলিশ।’’
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি সম্ভবত খানিকটা গোপনীয়তার আড়ালেই রাখতে চেয়েছিলেন কংগ্রেস নেতারা। কিন্তু নিজস্ব সূত্রে সেখবর পেয়ে গতকালই কংগ্রেস নেতাদের সতর্ক করে চিঠি পাঠায় দিল্লি পুলিশ। পুলিশের চিঠিতে বলা হয়, ‘‘৫আগস্ট আপনাদের বিক্ষোভ কর্মসূচির খবর বিশ্বস্ত সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি। কিন্তু আপনাদের জানা আছে, সুপ্রিম কোর্টের ২০১৮সালের নির্দেশিকার ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা, নিরাপত্তা এবং যানচলাচলের কারণে নয়াদিল্লি জেলা অঞ্চলে ধরনা, বিক্ষোভ বা ঘেরাওয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কেবল যন্তর মন্তরে ছাড় রয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করলে আপনাদের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে পুলিশ।’’
দিল্লি পুলিশের চিঠির কথা জানিয়ে বেণুগোপাল এদিন পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘পুলিশ হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠাচ্ছে। গতকালই এই চিঠি পেয়েছি। দেশে কি প্রতিবাদের কোন অধিকার নেই? আমাদের কর্মসূচি হবেই।’’ কংগ্রেস নেতা আরও বলেন, ‘‘দেশে জিনিসপত্রের আকাশচুম্বী দামের কথা তো সংসদেই স্বীকার করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। কিন্তু দাম কমানোর জন্য সরকার তো কিছুই করছে না। তাই জনস্বার্থে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ দেখানোর দায়িত্ব তো বিরোধী দলেরই। আমাদের প্রতিবাদ হবেই।’’
জানা গিয়েছে, শুক্রবার দেশের সব গ্রাম ও জেলায় কংগ্রেসের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ব্লক এবং জেলা সদরে গণ-গ্রেপ্তার হবেন। রাজ্য রাজধানীতে রাজভবন ঘেরাও করবেন বিধায়ক-সাংসদ এবং প্রাক্তন নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। অন্যদিকে রাজধানীতে লোকসভা ও রাজ্যসভার সদস্যরা ‘‘চলো রাষ্ট্রপতি ভবন’’ আন্দোলনে থাকবেন। ‘‘প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ঘেরাও’’ করবেন কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সব সদস্য এবং দলের নেতারা।
ইয়ং ইন্ডিয়ান দপ্তরে ইডি’র তল্লাশি ঘিরে বৃহস্পতিবার অবশ্য সকাল থেকেই টানটান উত্তেজনা ছিলো দিল্লিতে। এদিন সকাল থেকেই সোনিয়া ও রাহুলের বাসভবন এবং কংগ্রেস সদর দপ্তরের সামনে পুলিশী টহলদারি নজরে আসে সকলের। এদিক-ওদিক ব্যারিকেডও গড়ে তোলা হয়। পুরো ঘটনায় প্রবল অসন্তোষ প্রকাশ করে এদিন সংসদের বাইরে রাহুল গান্ধী বলেন, ‘‘এসব করে আমাদের ভয় দেখাতে চাইছে। কিন্তু আমাদের ভয় দেখানো যাবেনা। আমরা নরেন্দ্র মোদীকে ভয় পাইনা।’’ রাহুল বলেন, ‘‘ওদের যা ইচ্ছা করুক। আমাদের কিছু যায়-আসে না। দেশ বাঁচানোর কাজ আমি চালিয়ে যাবোই। দেশে গণতন্ত্র এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার কাজে অবিচল থাকবো।’’
পরে হিন্দিতে টুইট করে মোদীর বিরুদ্ধে আরও বেশি সোচ্চার হন কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি। তিনি লেখেন, ‘‘ব্যারিকেড দিয়ে সত্যকে আটকানো যাবেনা। ভালো করে শুনুন, বুঝুন। চাপ দিয়ে আমাকে চুপ করাতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রী যা-ই করুন, আমাকে আটকাতে পারবেন না। মোদী আর শাহ গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যা করছেন, তার বিরুদ্ধে আমরা লড়েই যাবো।’’
এদিকে এদিন ইডি’র সমন পেয়ে দুপুর ১২টা ৪০ নাগাদ আইটিও’র কাছে বাহাদুর শাহ জাফর মার্গে ইয়ং ইন্ডিয়ান অফিসে হাজির হয়ে যান রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে। পাঁচতলা হেরাল্ড হাউস ভবনের একতলায় একটি ঘরে ইয়ং ইন্ডিয়ানের অফিস। সংস্থার কোন কর্তাকে না পাওয়ায় এবং দপ্তর তালাবন্ধ থাকায় গত দু’দিন ইয়ং ইন্ডিয়ানের অফিসে তল্লাশি চালাতে পারেনি ইডি। কোম্পানির ‘প্রিন্সিপাল অফিসার’ খাড়গের উপস্থিতিতে এদিন তল্লাশির কাজ শুরু করে তদন্ত সংস্থা।
সংসদের অধিবেশন চলাকালীন ৮০বছর বয়সী খাড়গেকে ইডি’র সমনের বিরুদ্ধে রীতিমতো খড়্গহস্ত হয়ে আসরে নামে কংগ্রেস। এজন্য সরাসরি মোদী সরকারকে দায়ী করে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ টুইট করেন, ‘‘সংসদ চলছে। ইডি’র ডাকে বেলা ১২টা ২০মিনিটে সংসদ ছেড়ে চলে যেতে হলো রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতাকে! সাড়ে চার ঘন্টা ধরে জেরা চলছে! এটা আইনসভার চরম অপমান। মোদীশাহী আরও নিচে নামলো।’’
আরেক কংগ্রেস নেতা দ্বিগ্বিজয় সিং বলেন, ‘‘সংসদ চলাকালীন বিরোধী দলনেতাকে ইডি সমন পাঠাচ্ছে, গণতন্ত্রের ইতিহাসে এমন নজির নেই। কিসের ভয় পাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী?’’ রাজ্যসভা সদস্য প্রমোদ তেওয়ারি বলেন, ‘‘রাজ্যসভায় খারগের জমা দেওয়া নোটিসের ওপর ওঁর বক্তব্য রাখার কথা ছিলো। কিন্তু উনি তা পারলেন না।’’ প্রসঙ্গত, এই মামলাতেই গত জুন মাসে রাহুল গান্ধীকে এবং জুলাইয়ে সোনিয়া গান্ধীকে একাদিক্রমে জেরা করেছে ইডি।
ইডি’র মাধ্যমে অন্যায় হয়রানির বিষয়টি লোকসভা ও রাজ্যসভায় তুলতে এদিন মুলতবি প্রস্তাবও জমা দিয়েছিলেন কংগ্রেস সাংসদরা। দুই সভায় এনিয়ে তুমুল হইচই হলেও মুলতবি প্রস্তাব উত্থাপনের অনুমতি দেননি সভা পরিচালকরা।