দু’দলের সেটিংয়ে চোর-ডাকাতদের আড়াল করতে দেওয়া যাবে না
-
গণশক্তির প্রতিবেদন
- Aug 05, 2022 09:49 [IST]
- Last Update: Aug 05, 2022 09:49 [IST]
লুট দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে মোদীর সঙ্গে মমতা ব্যানার্জির সেটিং ভেস্তে দেওয়ার মতো জোরালো গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। বৃহস্পতিবার উলটোডাঙা মোড়ে সিপিআই(এম)’র ডাকা একটি জনসভায় মহম্মদ সেলিম বলেন, চিট ফান্ড লুটের মতো এখন নিয়োগ দুর্নীতি সহ রাজ্যজুড়ে লুটের অপরাধ ধামাচাপা দিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে দিল্লি চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূল-বিজেপি দুই দলের সেটিংয়ে চোর ডাকাতদের আড়াল করতে দেওয়া যাবে না। মানুষের ক্ষোভ যে বাড়ছে তা গৃহবধূ জুতো ছুঁড়েই বুঝিয়ে দিয়েছেন। এভাবেই মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে লড়াই সংগ্রাম গড়ে তুলেই দুর্নীতিগ্রস্তদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
এদিনের জনসভায় মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘‘ক্ষমতায় আসার পর বামপন্থী কর্মী সমর্থকদের মুখে লিউকোপ্লাস্ট লাগিয়ে চুপ করে বসে থাকতে বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু এখন হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না, মানুষও চুপ করে বসে থাকতে রাজি নয়। সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে এই সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই তীব্রতর করতে হবে।’’ তৃণমূল সরকারের লাগামছাড়া দুর্নীতি প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘‘এই সরকারকে এখন আর চোরদের সরকার বলা যাবে না। এই সরকার ডাকাতের সরকারে পরিণত হয়েছে। গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে নিলামে তুলে দিয়েছে মমতা ব্যানার্জি সরকার।’’ বিভিন্ন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তৃণমূল নেতা মন্ত্রীদের স্বজন পোষণ নিয়েও তৃণমূল সরকারকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন তিনি।
প্রকাশ্যে লাইভ সম্প্রচার করা প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য করেছিলেন যে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে কোথায় কী ঘটনা ঘটছে তার সবকিছু তাঁর জানা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে এদিন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মুখে বলছেন তিনি জানেন গোটা রাজ্যের কোথায় কী হচ্ছে। অথচ তিনি জানেন না তার সরকারের এক মন্ত্রী পাহাড়-প্রমাণ টাকা জড়ো করেছেন! আসলে গোটা দল এবং সরকারি কাঠামো ব্যবহার করেই এই দুর্নীতি করা হয়েছে। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রাজ্যের সমস্ত সরকারি চাকরি নিলামে তুলে দিয়েছে এই তৃণমূল সরকার।’’
২০১১ সালে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে নতুন কোন শিল্প বিনিয়োগ হয়নি রাজ্যে। উলটে একের পর এক কলকারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে এই সরকারের আমলে। এদিন কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে কর্মসংস্থানের বিষয়ে একযোগে আক্রমণ করে সেলিম বলেন, ‘কেন্দ্রের বিজেপি সরকার একের পর এক রাষ্টায়ত্ত সংস্থা জলের দরে বিক্রি করে দিচ্ছে। অন্যদিকে এই রাজ্য সরকার হরিণঘাটা মাদার ডেয়ারির মতো সরকারি বিভিন্ন সংস্থাকে বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দিয়ে বিশ্ববাংলা প্রজেক্টের নামে চালাতে চাইছে। কেন্দ্রীয় সরকার রাষ্ট্রায়াত্ত্ব কারখানার জমি বেচে দিচ্ছে, রাজ্য সরকার পরিবহণের ডিপোর জমি বেচে দিচ্ছে।’
মানুষের দারিদ্র, বেকারি ও মূল্যবৃদ্ধির ইস্যুতেও কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করে সেলিম বলেন, একের পর এক নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে চললেও কেন্দ্রীয় সরকার নীরব। উলটে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে জিএসটি’র বোঝা চাপিয়ে চলেছে এই সরকার। এরাজ্যের সরকারও সেই ট্যাক্সের ভাগীদার।
এদিন এই জনসভায় বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য কমিটির সদস্য রূপা বাগচীও। তিনি বলেন, বামফ্রন্ট সরকারের সময় নিয়মিত এসএসসি টেট পরীক্ষা হলেও বর্তমান সময়ে এই সরকারের আমলে এসএসসি টেট পরীক্ষা দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এছাড়াও সভায় ভাষণ দেন সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদিকা কনীনিকা ঘোষ। বিজেপি-তৃণমূলের আঁতাতে অপরাধ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা ভেস্তে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, স্বচ্ছ নিয়োগের দাবিতে এসএসসি টেট উত্তীর্ণরা লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে গেলেও সরকারের পক্ষ থেকে তাদের কোনও কথা শোনা হয়নি। সরকারের কানে জল ঢোকানোর মতো তীব্র আন্দোলন করতে হবে। সভায় এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম) নেতা রাজীব মজুমদার, ইন্দ্রজিৎ ঘোষ, পারমিতা সেন, অশোক চ্যাটার্জি সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। সভা পরিচালনা করেন দেবাশিস রায়।