Vote Loot

এরাজ্যে ভোট মানেই লুটতন্ত্র

সম্পাদকীয় বিভাগ

 

মমতা ব্যানার্জির সরকারের সৌজন্যে পশ্চিমবঙ্গে এখন নির্বাচন মানেই ভোট লুট। তা সে লোকসভা নির্বাচন হোক বা বিধানসভা অন্যরকম কিছু হবার উপায় নেই। লোকসভা বা বিধানসভা নির্বাচনে যদিও বা খানিকটা জাতীয় নির্বাচন কমিশন এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর নজরদারি থাকে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের অধীনে পঞ্চায়েত, পৌরসভার নির্বাচনে সেই আগলটাও থাকে না। তখন রাজ্য নির্বাচন, রাজ্য পুলিশ, সরকারি প্রশাসন, শাসক তৃণমূল মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। বিরোধী দলের প্রার্থী-এজেন্ট তো দূরের কথা, সাধারণ ভোটারদেরও ভোট কেন্দ্রে যাওয়া নিষিদ্ধ হয়ে যায়। মমতা ব্যানার্জির এরাজ্যের যে কোনও নির্বাচিত সংস্থায় কোনও বিরোধী প্রতিনিধিত্ব চান না। এমন কি বিরোধী প্রার্থী কোনও ভোট পান সেটাও চান না। অর্থাৎ সরকারে, পঞ্চায়েতে, পৌরসভায় তৃণমূল বিরোধী শূন্য সর্বগ্রাসী ক্ষমতা চায়। কোনোরকম বিরোধী কণ্ঠস্বর সহ্য করতে রাজি নয়। রাজনীতির অঙ্গনে বিরোধী স্বরের গণতান্ত্রিক পরিসর থাকলে সেটা সরকারবিরোধী চোরাস্রোতকে প্লাবনে পরিণত করতে পারে। তাই বিরোধীদের পা রাখার কোনও জায়গাও ছাড়া হয় না। একাজ গণতান্ত্রিকভাবে কোনও দিনই সম্ভব নয়। তাই দুষ্কৃতী বাহিনী তৈরি করে সর্বত্র ত্রাস সৃষ্টি করে তালিবানি কর্তৃত্ব কায়েম করা হয়। রাজ্যের প্রতিটি এলাকা তৃণমূলী মাতব্বরদের পূর্ণ দখলে। সেখানে সামাজিক-রাজনৈতিক কর্তৃত্ব তাদের হাতে। তাদের অনুমতি ছাড়া কোনও কাজ করা সম্ভব নয়। তাদের তোলা বা নজরানা না দিলে সব কিছু অচল হয়ে যাবে। এরাই এলাকার ভোট লুট করে, বুথ দখল করে, বিরোধী দলের প্রার্থী-নেতা-কর্মী এজেন্টদের বুথের ত্রিসীমানায় ঢুকতে দেয় না। ভোটারদের জানিয়ে দেয় কষ্ট করে ভোট দিতে হবে না। ভোট দেবার ব্যবস্থা তারাই করে দেবে। এইভাবে এরাজ্যে ভোট প্রসহনে পরিণত হয়ে গেছে। পুলিশ, সরকারি আমলারা শাসক দলের কর্মী হয়ে গেছে। দলের নির্দেশ কার্যকর করাই তাদের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সদ্য হওয়া রাজ্যের চার বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে এর অন্যথা হয়নি। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের অনেক হম্বিতম্বি ছিল, ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীও। কিন্তু ভোটকে প্রহসনে পরিণত করে দেদার ছাপ্পা মেরে ভোট লুটে শাসক দলের কোনও সমস্যা হয়নি। গণতন্ত্রে মানুষের স্বাধীন মতামতই শেষ কথা। সেখানে জোর খাটানোর কোনও অধিকার কারও নেই। জোর খাটানো মানে তা স্বৈরাচারে পরিণত হওয়া। গণতন্ত্রে যদি মানুষ তৃণমূলকে ভালোবেসে, বিশ্বাস করে ভোট দেন তাতে অসুবিধা নেই। আর তৃণমূল যদি মনে করে মানুষ তাদেরই পছন্দ করে, বিশ্বাস করে তাহলে সন্ত্রাস, ভোট লুট, ভয় দেখানো, মারদাঙ্গার কোনও প্রয়োজন থাকে না। তথাপি তৃণমূল সেই পথে ক্ষমতা দখল করে। তার মানে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনে তৃণমূলের জয় অনিশ্চিত। তাই জোর করে তাদের অস্বচ্ছ পথে, বেআইনিভাবে জিততে হয় ক্ষমতায় থাকার জন্য। ক্ষমতায় না থাকলে রাজ্যের দুষ্কৃতী, সমাজবিরোধী, তোলাবাজ, সিন্ডিকেট বাহিনীর ন্যায্য পথে রুজির কোনও সুযোগ নেই। বৈধ পথে শ্রমের বিনিময়ে রোজগারের যোগ্যতাও তৃণমূল বাহিনীর নেই। অবৈধ ও অসামাজিক উপায়ে লুটপাট করে টাকা কামানোর জন্যই তৃণমূল ক্ষমতায় থাকতে চায়। আর তৃণমূল ক্ষমতায় না থাকলে এই বিশাল বাহিনী রোজগারহীন হয়ে পড়বে। এরা নিজেদের স্বার্থেই তৃণমূলকে জেতাতে মরিয়া হয়। হিংসার আশ্রয় নেয়। মানুষও খুন করে।

Comments :0

Login to leave a comment