Vote Chori

ভোট চুরির সরকার

সম্পাদকীয় বিভাগ


নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রের আরএসএস-বিজেপি সরকার দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এমন এক গোপন পরিবর্তন দক্ষতার সঙ্গে নিয়ে এসেছেন যেখানে সুদূর ব্রাজিল দেশের কোনও তরুণীও দিব্যি ভারতের ভোটার হয়ে যেতে পারেন নিজের অজান্তেই। তাও আবার একটি দু’টি নয়, অন্তত ১০টি বুথে ২২টি নামে তাঁর ছবি জ্বল জ্বল করছে। কোথাও তিনি সীমা, কোথাও সুইটি, কোথাও বা সরস্বতী। গত বছর হরিয়ানার বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর ছবি লাগানো ভোটার কার্ড নিয়ে ২২ জন দিব্যি ভোট দিয়ে গেছে। সাংবিধানিক সংস্থা নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষতার ধ্বজা উড়িয়ে এভাবেই ভোটার তালিকা তৈরি করেছে এবং নির্ভুল ভোটার তালিকা দাবি করছে। জালি ভোটার তালিকায় ব্রাজিলের তরুণী ২২ নামে ২২টি ভোটারের নমুনা দেখিয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী দাবি করেন মোদী সরকার এবং নির্বাচন কমিশন একেবারে পরিকল্পনা করে ভোট চুরির ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলেছে। আর ভোট চুরি করেই হরিয়ানায় বিজেপি’র ‘ভোট চোর সরকার’ গঠন করেছে। প্রকৃত বাস্তবে সেখানে কংগ্রেসের সরকরার হবারই কথা ছিল।
গোটা রাজ্যে অনুসন্ধান চালিয়ে তাঁরা ২৫ লক্ষের বেশি ভুয়া ভোটারের সন্ধান পেয়েছেন। অথচ হরিয়ানায় কংগ্রেস হেরেছে মাত্র ২ হাজার ভোটে। অর্থাৎ ২৫ লক্ষ ভোট চুরি করে কংগ্রেসকে হারানো হয়েছে। কোনও অবস্থাতেই বিজেপি’র জেতার কথা ছিল না। অনুরূপ অনুসন্ধানের মাধ্যমে এর আগে মধ্য প্রদেশ, ছত্তিশগড়, কর্নাটক ও মহারাষ্ট্রে বিজেপি যে ভোট চুরি করে সেটাও উল্লেখ করেন রাহুল।
এভাবে ভোট চুরি করে জেতা এবং ভোট চোর সরকার গঠন করার জন্য আগে দরকার নির্বাচন কমিশনটাকেই চুরি করে বগলদাবা করে ফেলা। মোদী-শাহ-রা সেকাজটা আগেই সেরে ফেলেছিলেন। নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত আইন সংশোধন করে। যেকোনও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মূল ভিত্তি তার প্রতিষ্ঠানগুলির নিরপেক্ষতা। বিশেষ করে যাদের ভোটে সরকার তৈরি হবে সেই তালিকার স্বচ্ছতা এবং যে সংস্থা ভোটার তালিকা তৈরি করবে ও নির্বাচন সংগঠিত করবে সেই নির্বাচন কমিশনের সততা, স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলেও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের এর কোনোটিই নেই। আর নির্বাচন কমিশনকে অসৎ, অস্বচ্ছ ও পক্ষপাত করার মূল কারিগর মোদী সরকার।
সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব থেকে শত যোজন দূরে থেকে পুরোপুরি নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন ব্যবস্থা গড়ে তোলার দায়িত্ব কমিশনকে দিয়েছে সংবিধান। তাই কমিশনার নিয়োগের জন্য যে নিয়োগকর্তা গঠিত হতো তাতে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা এবং দেশের প্রধান বিচারপতি থাকতেন। লক্ষ্য ছিল দলমত, শাসক-বিরোধীর ঊর্ধ্বে নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে কমিশনার নিয়োগ করা। মোদী ক্ষমতায় এসে নিয়োগকর্তার জায়গা থেকে প্রধান বিচারপতিকে সরিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে যুক্ত করে আইন বদলে দিয়েছেন। এখন তিন সদস্যের কমিটিতে দু’জনই সরকার তথা শাসক দলের লোক। ফলে তারা তাদের পছন্দের এবং অনুগতদেরই কমিশনার নিয়োগ করছেন কমিশনকে সরকার তথা শাসক দলের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। বর্তমান তিন কমিশনারই মোদী-শাহ-দের অতি ঘনিষ্ঠ ও অনুগত। অতএব তারা কাঠের পুতুলের মতো মোদী-শাহরা যেমন নাচাচ্ছেন তেমন নাচছেন।
 

Comments :0

Login to leave a comment