Editorial

জে এন ইউ আবার লাল

সম্পাদকীয় বিভাগ

মুক্ত চিন্তার স্বর্গরাজ্য হিসাবে পরিচিত ভারতের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় জে এন ইউ যে আরএসএস-বিজেপি-র ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-র মতো ধর্মান্ধ, হিংসার পূজারি ও বিভাজনের হোতাদের জন্য নয় তা আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে সেখানকার ছাত্র-ছাত্রীরা। কথায় বলে না বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে। তেমনি জে এন ইউ হলো সেইসব ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য যারা সঙ্কীর্ণতা ও মৌলবাদী একবগ্গা ভাবনার ঊর্ধ্বে যুক্তিবাদ ও বিজ্ঞানকে সঙ্গী করে বহু মতের চর্চাকে উসকে দেয়। প্রশ্ন করে, তর্ক করে ভিন্নমতে সহিষ্ণতা দেখায়। আর এবিভিপি-র জন্য আদর্শ জায়গা নাগপুরের পাঠশালা এবং আরএসএস’র হোয়াটসঅ্যাপ বিশ্ববিদ্যালয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এবিভিপি-কে কার্যত ধুয়ে মুছে সাফ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান ও মর্যাদা পুনপ্রতিষ্ঠার রাস্তা প্রশস্ত করে দিয়েছে ছাত্র-ছাত্রীরা সংসদের চারটি প্রধান পদের (সভাপতি, সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সহসাধারণ সম্পাদক) সব কটিতেই বিপুল ভোটের ব্যবধানে এবিভিপি-কে গো-হারা হারিয়ে দিয়েছে এসএফআই, এআইএসএ এবং ডিএসএফ’র বাম ঐক্যের প্রার্থীরা।
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে আরএসএস-বিজেপি’র সরকার হবার আগে জেএনইউ-তে এবিভিপি-কে খুঁজতে আতস কাঁচের দরকার হতো। মোদী সরকার পরিকল্পনা করে জেএনইউ-তে তাদের ছাত্র সংগঠ‍‌নের দখলদারি কায়েম করতে নামে। একাজে সরাসরি ব্যবহার করা হয় দিল্লি পুলিশ এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। মোদী জমানায় উপাচার্য নিয়োগ হয়েছে আরএসএস ঘনিষ্ঠতার নিরীখে। তার প্রধান কাজ ছিল বামপন্থী ছাত্রদের নানাভাবে হয়রানি করে, বেকায়দায় ফেলে কোণঠাসা করা। আর এবিভিপি যাবতীয় গুন্ডামিকে প্রশ্রয় দেওয়া। কর্তৃপক্ষের মদতে বহিরাগত দুষ্কৃতী-গুন্ডাদের ক্যাম্পাসে ঢুকিয়ে বাম ছাত্রদের উপর হামলা চালানো দৈনন্দিন কাজে পরিণত হয়। প্রতিনিয়ত আক্রমণের মুখে রক্তাক্ত হয়ে, পুলিশি অত্যাচারের মোকাবিলা করে, কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে বাম ছাত্র জোট।
মোদী সরকার যে উদ্দেশ্যে জেএনইউ গড়ে তোলা হয়েছিল এবং যেভাবে বিশ্বের অন্যতম নামী হয়ে উঠেছিল তাকে নস্যাৎ করে গোমূত্রপায়ীদের খোয়াড় বানানোর চেষ্টা করেছিল। পাশাপাশি ফি বৃদ্ধি করে, হস্টেল খরচ বাড়িয়ে, স্কলারশিপ বন্ধ করে দেশের গরিব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য জেএনইউ’র দরজা বন্ধ করে দেবার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পদে পদে রুখে দাঁড়ায় বাম ছাত্র সংগঠন। তাই ছাত্র-ছাত্রীদের প্রিয় সংগঠন হয়ে ওঠে বামপন্থীরা। গত বছর নির্বাচনে বাম ছাত্র ঐক্য না হওয়ায় একটি পদে এবিভিপি প্রার্থী জয়ী হয়ে যায়। এবার তাদের শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে। আগের থেকে অনেক বেশি ব্যবধানে হারতে হয়েছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment