ব্যর্থতা আড়ালেই বিভাজনের খেলা
-
গণশক্তির প্রতিবেদন
- Jan 12, 2022 15:43 [IST]
- Last Update: Jan 12, 2022 03:00 [IST]
উত্তর প্রদেশ নির্বাচনের আগে সাম্প্রদায়িকতার সুর চড়াচ্ছে বিজেপি। সর্বশেষ উদাহরণ স্বয়ং যোগী আদিত্যনাথের মন্তব্য। জনসভায় যোগী বলেছেন, এবারের নির্বাচন ৮০ শতাংশ বনাম ২০ শতাংশের মধ্যে লড়াই। যোগী কী বলতে চেয়েছেন, তা যথেষ্টই স্পষ্ট। রাজ্যের জনসংখ্যার ৭৯.৭৩ শতাংশ হিন্দু, ১৯.২৬ শতাংশ মুসলিম। কোন বিভাজন করতে চেয়ে নির্বাচনী অ্যাজেন্ডা তৈরি করছেন যোগী, তা দিনের আলোর মতোই পরিস্কার।
শোরগোল ওঠায় বিজেপি-র নেতারা কেউ কেউ ব্যাখ্যা দিচ্ছেন যোগী তো ‘মুসলিম’ শব্দটি উচ্চারণ করেননি। যোগী নাকি বলতে চেয়েছেন, ৮০ শতাংশ মানুষ বিজেপি-র পক্ষে। আবার এক নেতা সংবাদমাধ্যমে বিচিত্র সংখ্যাতত্ত্ব হাজির করে বলেছেন, ৯ শতাংশ অপরাধী, সাড়ে তিন শতাংশ জমির বেআইনি দখলদার, ২ শতাংশ মহিলাদের বিরুদ্ধে হিংসায় যুক্ত, ২ শতাংশ পাকিস্তানপন্থী, দেড় শতাংশ ‘বন্দে মাতরম’ বিরোধী। এই হলো ২০ শতাংশ। কীভাবে রাজ্যের জনসংখ্যার মেরুকরণ করতে চাইছেন বিজেপি নেতারা, তা এইসব ব্যাখ্যায় আরও স্পষ্ট হচ্ছে।
শেষ পর্যন্ত যে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের রাস্তাতেই উত্তর প্রদেশে বিজেপি দুর্গ রক্ষার চেষ্টা করবে, তার ইঙ্গিত মিলেছিল স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর কাশী সফরে। সেখানে ‘আওরঙ্গজেব’ প্রসঙ্গ তুলে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধেই কামান দেগেছিলেন মোদী।
প্রশ্ন হচ্ছে, কেন মোদী-যোগীকে এই পথ নিতে হচ্ছে? কেননা যোগীর রাজত্বে উত্তর প্রদেশ ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে। উত্তর প্রদেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির হার গত পাঁচ বছরে বার্ষিক ১.৯৫ শতাংশ। তার আগের সরকারের সময়ে যা ছিল ৬.৯২ শতাংশ। মাথাপিছু আয়ে ৩৬ রাজ্যের মধ্যে উত্তর প্রদেশ এখন ৩২তম। সর্বভারতীয় গড়ের অর্ধেক। যোগীর সময়ে ম্যানুফ্যাকচারিং বৃদ্ধির হার নেতিবাচক হয়ে গেছে। এখন তা (-) ৩.৩৪ শতাংশ। আগের সরকারের সময়ে তা ১৪ শতাংশের বেশি বৃদ্ধির হার দেখেছিল। যোগীর আমলে বেকারি বেড়েছে ২০১২-র তুলনায় আড়াই গুণ, তরুণদের মধ্যে বেকারি বেড়েছে ৫গুণ। স্নাতকদের মধ্যে বেকারির হার ৫১ শতাংশ। এইসব শতাংশকে আড়াল করতে ৮০ শতাংশের গল্প ফাঁদছেন বিজেপি নেতারা।
যোগীর রাজত্বে বেড়েছে কৃষির সঙ্কট। কৃষক আন্দোলনে বিশেষ করে পশ্চিম উত্তর প্রদেশের কৃষকদের বিপুল সংখ্যায় যোগদান তা প্রমাণ করেছে। বেড়েছে মহিলাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের ঘটনা। একটা হাথরাসই শুধু নয়, ঘটেছে উন্নাওয়ের মতো নৃশংস ঘটনা। দলিতদের ওপরে আক্রমণ দৈনন্দিন ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মহামারীর সময়ে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা প্রকট হয়ে উঠেছে কখনও সারি সারি চিতা জ্বলার দৃশ্যে, কখনও গঙ্গায় লাশ ভেসে আসার নির্মম ছবিতে। যোগীর রাজ্যে গণতান্ত্রিক অধিকার বারবার আক্রান্ত হচ্ছে। যে কোনও বিক্ষোভকে ‘দেশদ্রোহী’ চিহ্নিত করে নিপীড়ন নামিয়ে আনা এই শাসনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কিন্তু বিক্ষোভ-অসন্তোষ বেড়েছে। কৃষক আন্দোলন চলাকালীন রাজ্যের বিরাট অংশে বিজেপি নেতারা নিজেদের গ্রামে পর্যন্ত ঢুকতে পারেননি। একের পর এক ধর্মঘটে শামিল হয়েছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রের শ্রমিক-কর্মচারীরা। নির্বাচন ঘোষণার আগেই বিরোধী দলের সমাবেশে বিপুল জনসমাগম ঘটেছে। বিপদ বুঝে শিবির বদলাচ্ছেন যোগীর মন্ত্রীরা। এই অবস্থায় উত্তর প্রদেশে শেষ হাতিয়ার সাম্প্রদায়িক বিভাজন। কিন্তু বারবার একই কায়দায় নির্বাচন জেতার কৌশলে কাজ হবে কি? উত্তর প্রদেশের মানুষ এবার নিশ্চয়ই ঐক্যবদ্ধ হয়েই গণতন্ত্রের পক্ষে রায় দেবেন।